রোববার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

মেম্বারের প্রতারণা: প্রবাসীর স্ত্রীকে বিয়ে করে ১৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ

জেলা প্রতিনিধি: নওগাঁ
প্রকাশিত: ২৮ আগস্ট ২০২৩, ০৬:০২ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ভোঁপাড়া গ্রামের স্থানীয় ইউপি সদস্য বিপ্লব আকন্দের নজর পড়ে প্রবাসীর স্ত্রী মুন্নি ও তার টাকার দিকে। মুন্নিকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে শফিকুলের পাঠানো ১৮ লাখ টাকা ও দুই ভরি স্বর্ণ হাতিয়ে নিয়েছেন মুন্নি ও বিপ্লব।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ভোঁপাড়া গ্রামের শফিকুল ইসলামের (৩৫) সঙ্গে ২০০৯ সালে একই গ্রামের মঞ্জিল শেখের মেয়ে মুন্নি আক্তারের (২৫) সঙ্গে বিয়ে হয়। তাদের ঘরে ৮ বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।


বিজ্ঞাপন


শফিকুল ইসলাম ২০১০ সালে কাজের সন্ধানে দুবাই পাড়ি জমান। বিদেশ থাকাকালীন মাঝে মাঝে বাড়িতে আসেন। ২০১৪ সালে আবার মালয়েশিয়াতে চলে যান কাজের সন্ধানে। বেশ কয়েক বছর ভালোই চলছিল তাদের সংসার। এর মাঝে স্থানীয় ইউপি সদস্য বিপ্লব আকন্দের নজর পড়ে মুন্নি ও তার টাকার দিকে। মুন্নিকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলে শফিকুলের পাঠানো অর্থ আত্মসাৎ করেন।

চলতি মাসের ৫ তারিখে শফিকুল জানতে পারেন মুন্নির সঙ্গে একই গ্রামের ইউপি সদস্য বিল্পব আকন্দের সঙ্গে ঘর-সংসার করছেন। এর পর শফিকুল ইসলাম নিরুপায় হয়ে ছুটি নিয়ে চলতি মাসের ২২ তারিখে দেশে এসে তার শ্বশুর বাড়ি গেলে তাকে বাড়িতে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া হয়। মুন্নি ও তার পরিবারের সদস্যরা বলে তোমাকে তালাক দিয়ে বিল্পবকে বিয়ে করেছে। কিন্তু কাজী অফিস বা আদালত কৃর্তক কোনো তালাকনামা দেখাতে পারেননি।

স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের বিষয়টি জানানো হলেও ইউপি সদস্য প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চাচ্ছেন না কেউ। এর মাঝেই শফিকুলের পাঠানো প্রায় ১৮ লাখ টাকা ও দুই ভরি স্বর্ণ হাতিয়ে নিয়েছেন মুন্নি ও বিপ্লব। বর্তমানে নিস্ব অবস্থায় সুষ্ঠ বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রবাসী শফিকুল ইসলাম।

প্রবাসী শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাকে যে তালাক দিয়েছে তার কোনো বৈধ কাগজপত্র নাই। তালাক দিতে হলে কাজী অফিসে বা কোর্টের মাধ্যমে তালাক দিতে হয় সেটা করা হয়নি। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে তালাকনামার কপি যাবে। কিন্তু সেটাও করা হয়নি বা আমাকে জানানোও হয়নি। তাহলে আমাকে কিভাবে তালাক দিল। আমি বাড়ি আসার পর একটি এফিডেভিট করা কাগজ আমার কাছে পৌঁছানো হয়েছে। সেখানে লেখা আছে মুন্নি ও বিল্পব বিয়ে করেছেন। তালাক না দিয়েই কিভাবে বিয়ে হয়।


বিজ্ঞাপন


তিনি বলেন, বিদেশ থাকাকালীন আমি প্রতি মাসেই মুন্নির আত্রাই শাখার ইসলামী ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বারে টাকা পাঠিয়েছি। এ পর্যন্ত প্রায় ১৮ লাখ টাকা পাঠিয়েছি। সেই টাকাগুলো মুন্নি ও বিল্পব আত্মসাৎ করে আমাকে পথে বসিয়েছে।

শফিকুল আরও বলেন, তারা যে বিয়ের মিথ্যা ডকুমেন্ট দেখাছে সেটা চলতি মাসের ১ তারিখে বিয়ে করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সে আমার বউ হিসেবে ঘর-সংসার করার অভিনয় করে অর্থ আত্মসাৎ করেছে। একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে আমার সুখের সংসার নষ্ট করেছে। আমার বাচ্চার ভবিষৎ নষ্ট করেছে। আমি এর সুষ্ঠ বিচার চাই। প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে থানায়ও অভিযোগ করারও সাহস পাচ্ছি না। আর সুষ্ঠ বিচারও পাচ্ছি না।

মুন্নির বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। এর পর তার মা ছালেয়া বেগমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমার মেয়ে আর শফিকুলের সঙ্গে ঘর সংসার করবে না। শফিকুলকে তো তালাক দিয়েছে। তালাক দিলে তালাকনামা তো নেই। তাহলে কিভাবে তালাক দেওয়া হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে ফোনের সংযোগ কেটে দেয়।


 

অভিযুক্ত ইউপি সদস্য বিপ্লব আকন্দের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, মুন্নি আর শফিকুলের বউ নয়, আমার বউ। আমি তাকে বিয়ে করেছি। তালাকনামার কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, আপনাকে সব কিছু দেখানোর প্রয়োজন মনে করছি না বলে তিনি ফোনের সংযোগ কেটে দেয়।

 


ভোঁপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন মন্ডল বলেন, আমি জানি বিপ্লব ও মুন্নির বিয়ে হয়েছে। তবে কতটুকু আইন মেনে বিয়ে করেছে তা জানা নেই। তবে শফিকুল মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন। মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) রাতে সবাইকে নিয়ে বসা হলে সুরাহা হয়নি। প্রয়োজনে আবার বসে সুরাহা করা হবে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন