রোববার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

প্রকৃতিপ্রেমীদের ডাকছে পাথারিয়ায় নতুন দুই জলপ্রপাত

পুলক পুরকায়স্থ
প্রকাশিত: ১১ আগস্ট ২০২৩, ০৫:০৭ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

ঘন সবুজ অরণ্য ঘেরা সুউচ্চ পাহাড়। স্বচ্ছ জলধারা গড়িয়ে পড়ছে সেই পাহাড়ের শরীর জুড়ে। নির্জন, শান্ত পাহাড় থেকে কলকল শব্দ বয়ে যাচ্ছে সমতলে। নাম না জানা লতাপাতা, গুল্ম, বন, বুনোফুল ও ফলের গাছ আগলে রাখা পরম মমতায় সৃষ্টির এক বিস্ময়। প্রকৃতিপ্রেমী ভ্রমণপিপাসুদের জন্য তেমনই সৌন্দর্যের আধার ‘মায়াকানন’ আর ‘সন্ধানী’ নামের নতুন দুটি জলপ্রপাতের।

এমন নতুন দুটি জলপ্রপাতের খোঁজ মিলেছে পর্যটন অধ্যুষিত মৌলভীবাজারের পাথারিয়া বনের গহীনে। জেলার জুড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী লাঠিটিলা বিটের কয়েক কিলোমিটার গহীন পথে হেঁটে গেলে এই দুই জলপ্রপাতের দেখা মিলবে।


বিজ্ঞাপন


স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা মনে করছেন, পাথারিয়া বনে আছে অনেক নাম না জানা জলপ্রপাত। ছোট হলেও এগুলো দৃষ্টিনন্দন। পাহাড়ি পথ ও ছড়া দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দু’পাশের সবুজ ছায়াশীতল এসব ছড়ার ছোট-বড় পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে চলা স্বচ্ছ স্রোতস্বিনী জলধারা বিমোহিত করে আপন স্বকীয়তায়। দৃষ্টিনন্দন প্রকৃতি নজর কেড়ে নেবে প্রকৃতিপ্রেমী, ভ্রমণপিপাসু ও অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়দের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশ কয়েকদিন আগে স্থানীয় পরিবেশকর্মী খুরশেদ আলম এই দুই নতুন জলপ্রপাতের সন্ধান পেয়েছেন। স্থানীয় আরেক পরিবেশকর্মী ওমর ফারুক নাঈম জলপ্রপাত দু’টির নাম রেখেছেন মায়াকানন আর সন্ধানী।

জানা যায়, এই পাথারিয়া পাহাড়ের আরেকটি অংশে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ জনপ্রিয় জলপ্রপাত মাধবকুণ্ড। মাধবকুণ্ড ও কমলগঞ্জের কুরমা বনবিটের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত হামহামের মতো বড় না হলেও মায়াকানন এবং সন্ধানী পারিপার্শ্বিক পরিবেশের ছোঁয়ায় অনেক দৃষ্টিনন্দন।

স্থানীদের ভাষ্যমতে মায়াকানন ও সন্ধানীর মতো পাথারিয়া পাহাড়ের মাধবকুন্ড বিটের অংশে ঝেরঝেরী, ইটাহরী ফুলবাগিচা, ত্রিপল, জামিনীকুন্ড, মৌলভী, জমজ, রামাকুন্ড, মায়াকুন্ড নামে আরও কয়েকটি জলপ্রপাত রয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগই মৌসুমি জলপ্রপাত। বর্ষাকালে এই জলপ্রপাতগুলো যৌবনদীপ্ত হয়ে ওঠে। আর শুষ্ক মৌসুমে এগুলোর বেশ কয়েকটি শুকনো থাকে। তবে লাঠিটিলা বনাঞ্চলে শুধুমাত্র এখন পর্যন্ত তিনটি জলপ্রপাত পাওয়া গেছে। সেগুলো হলো মায়াবন, মায়াকানন ও সন্ধানী। যাতায়াত ব্যবস্থার অপ্রতুলতা ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় হওয়ায় এবং প্রচার-প্রচারণার অভাবে প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের প্রতীক এই জলপ্রপাতগুলো দীর্ঘদিন পর্যন্ত লোকচক্ষুর অন্তরালে রয়েছে।


বিজ্ঞাপন


Jhorna

পাথারিয়ায় এরকম আরও অসংখ্য জলপ্রপাত রয়েছে। যেগুলোতে পৌঁছানো আসলে অনেক কষ্টসাধ্য বিষয় জানিয়ে পরিবেশকর্মী খুরশেদ আলম বলেন, ‘ঘণ্টাখানেক পিচ্ছিল পাথুরে ছড়া ও বন দিয়ে হাঁটার পর এই জলপ্রপাতগুলোর দেখা মিলে। দুর্গম পথ পাড়ি দেওয়ার পর ক্লান্ত হয়ে পড়লে শীতল জলধারায় শরীরটা ভিজিয়ে নিলে ক্লান্তি অনেকটাই কমে যাবে। মায়াকানন ও মায়াবন খুব পাশাপাশি ঝরনা। কিন্তু সন্ধানী জলপ্রপাত সেগুলোর চেয়ে অনেক গহীনে। যেখানে যাওয়াটা অনেক কষ্টসাধ্য।'

আগামীতে পাথারিয়ার মায়াকানন ও সন্ধানী জলপ্রপাত ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এক সৌন্দর্যের আধার হবে জানিয়ে স্থানীয় পরিবেশকর্মী ওমর ফারুক নাইম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘মৌলভীবাজার জেলা প্রাণ-প্রকৃতিতে ঘেরা। এ জেলার আনাচেকানাচে লুকিয়ে আছে অনেক সুন্দর নিদর্শন। পরিবেশকর্মী খোরশেদ আলম আমাকে এ দুটি জলপ্রপাত সম্পর্কে অবগত করেন। দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে এ এখানে যেতে হয়। আমি এদের নাম দিয়েছি মায়াকানন আর সন্ধানী। মায়াবনের পাশেই নতুন জলপ্রপাত পাওয়ায় এর নাম হয়েছে মায়াকানন। আর সন্ধানী জলপ্রপাতকে অনেক পরিশ্রম করে খুঁজে বের করা হয়েছে, তাই এর নাম সন্ধানী।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৌলভীবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সরকার দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে খুবই আন্তরিক। বড়লেখার পাথারিয়ার জলপ্রপাত ও সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হবে। এ সমস্ত পর্যটন স্পটগুলোকে সার্বিক ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগ, পর্যটকদের সার্বিক সুবিধা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বড়লেখা যাওয়ার সরাসরি বাস সার্ভিস চালু আছে। এছাড়া ট্রেনযোগে কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে কুলাউড়া স্টেশনে নামতে হবে। সিলেট থেকে সকালে কালনী ট্রেন যোগে কুলাউড়া স্টেশনে নামতে হবে। সেখান থেকে সিএনজি অটোরিকশা অথবা রেন্টের মাধ্যমে প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে জুড়ীতে যাওয়া যায়। জুড়ী শহর থেকে সিএনজি অটোরিকশাযোগে লাঠিটিলায় নামতে হবে। সেখানে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় একজন গাইড জোগাড় করতে হবে। গাইডকে সঙ্গে নিয়ে প্রায় ২ কিলোমিটার পথ হেঁটে গেলেই দেখা মিলবে এ দুটি জলপ্রপাতের।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন