images

হেলথ

৬ মাস পরও চালু হয়নি সব সেবা

মাহফুজ উল্লাহ হিমু

১৪ মার্চ ২০২৩, ০৮:৪৫ পিএম

দেশের মানুষকে সর্বাধুনিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার অংশ হিসেবে দেশের প্রথম সুপার স্পেশাইলাইজড হাসপাতাল চালু করেছে সরকার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধীন চালু হওয়া হাসপাতালটি গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে হিসেবে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি ৬ মাস সময় পার করেছে। বহুল আকাঙ্ক্ষিত এই হাসপাতালটি ঘিরে মানুষের বিপুল আগ্রহ থাকলেও উদ্বোধনের ৬ মাস পরও সব সেবা চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালটি উদ্বোধনের সময় বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, দেশের মানুষের সর্বোত্তম সেবা দেওয়াই এই হাসপাতালের লক্ষ্য। প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যায়। কাউকে যেন আর বাইরে যেতে না হয় এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক অধিকার দেশে নিশ্চিত করতেই এই হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ। উন্নত সেবার পাশাপাশি এ হাসপাতালের চিকিৎসা খরচও থাকবে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে। এখানে এক ছাদের নিচে সর্বাধুনিক বহুমুখী বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা মিলবে।

আরও পড়ুন: হৃদরোগ চিকিৎসায় নব দিগন্তের সূচনা

Hos2

আরও পড়ুন: হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে হৃদয়হীন কারবার!

প্রশ্ন উঠেছে এসব উদ্দেশ্যর কতটা বাস্তবে মিলছে। এছাড়া হাসপাতালটি পুরোপুরি চালু হবেই বা কবে।

যা যা আছে হাসপাতালটিতে

১৩ তলা হাসপাতালটিতে রয়েছে দ্বিতল বেজমেন্ট। ৭৫০ শয্যার হাসপাতালে বিভিন্ন বিভাগে রয়েছে ১৪টি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার। জরুরি বিভাগে রয়েছে ১০০টি শয্যা। রয়েছে ভিভিআইপি, ভিআইপি কেবিন এবং ২৫টি ডিল্যাক্স কেবিন। এখানে এক্স-রে, এমআরআই, সিটি-স্ক্যানসহ অত্যাধুনিক সব ডায়াগনস্টিক সুবিধাও রাখা হয়েছে। রয়েছে কার্ডিয়াক সেন্টার, লিভার ও কিডনি প্রতিস্থাপন ইউনিট এবং মা ও শিশু ইউনিটের মতো পাঁচটি স্পেশালাইজড সেন্টার। পাশাপাশি সর্বাধুনিক রোবোটিক সার্জারি চালুসহ বিশেষায়িত এ হাসপাতালটি পরিচালনার জন্য চিকিৎসকসহ ৬১০ স্বাস্থ্যকর্মীকে উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।

hos-5

কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে?

সরেজমিন হাসপাতালটি ঘুরে দেখা যায়, উদ্বোধনের ৬ মাস পার হলেও এখনও সব সেবা চালু হয়নি। শুধু বহির্বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবা চালু হয়েছে। রোগীরা নির্দিষ্ট ফির বিনিময়ে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক পর্যায়ের চিকিৎসকদের সেবা নিতে পারছেন। একইসঙ্গে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী সব ধরনের পরীক্ষা কার্যক্রমও চলছে। তবে এতদিনেও জরুরি বিভাগ, অন্তঃবিভাগ ও অত্যাধুনিক বিভিন্ন সার্জারির কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

বর্তমানে চলমান সেবার বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ আল হারুন ঢাকা মেইলকে বলেন, এটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন একটি হাসপাতাল। বর্তমান সরকারের ঐকান্তিক ইচ্ছায় সরকারি পর্যায়ে এমন একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে। ইতিমধ্যে এর কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। এ নিয়ে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকা স্বাভাবিক।

আরও পড়ুন: দশ টাকায় বিশেষজ্ঞ: অভিযোগ থাকলেও সন্তুষ্টি সেবাপ্রত্যাশীদের

তিনি বলেন, বর্তমানে হাসপাতালটিতে ১৫টি বিভাগের সমন্বয়ে স্পেশালাইজড কনসালটেশন সার্ভিস পরিচালনা করছি। গত দুই মাসের মধ্যে আমাদের ৪৫ দিনের বেশি সময় সেবা চালু ছিল। এরমধ্যে আমরা প্রায় ৫ হাজার মানুষকে সেবা দিয়েছি। দুই শিফটে আমাদের জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা কাজ করছেন। ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিভিন্ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক পর্যায়ের চিকিৎসকরা রোগী দেখেন এবং পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

hos4

পাশাপাশি রেডিওলজি ও ইমেজিংসহ চিকিৎসকরা যে পরীক্ষা দেন, তার সবকিছুর স্যাম্পল এখানে সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা হয়। একইসঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে পরীক্ষার ফল রোগীদের দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি।

রোগীদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রোগীরা যেন পর্যাপ্ত সময় পায় সে জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী প্রতি ঘণ্টায় একজন চিকিৎসক ছয়জনের বেশি রোগী দেখছেন না। অর্থাৎ একজন রোগী প্রায় ১০-১২ মিনিট করে সময় পাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত রোগীরা স্বাভাবিকভাবে এখানে এসে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে পরামর্শ নিচ্ছেন এবং তারা কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসককে দেখাতে পারছেন। ভবিষ্যতে রোগীর চাপ বাড়তে পারে। তখন অ্যাপয়েন্টমেন্ট সেভাবে দেওয়া হবে যেন রোগীর সংখ্যা নির্দিষ্ট থাকে। কোনোভাবেই এক ঘণ্টায় ৬ জনের বেশি রোগী দেখার সুযোগ থাকবে না।

আরও পড়ুন: ওষুধের অধিক ব্যবহার: প্রয়োজনীয়তা নাকি নির্ভরশীলতা

রোগীদের সেবার বিষয়ে ব্রিগেডিয়ার হারুন বলেন, রোগীরা যেন সঠিক চিকিৎসা পায় সে বিষয়টিকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। তাদের যেন কোনো অসুবিধা না হয় সে জন্য আমরা একটি উন্নতমানের রিসিপশন ব্যবস্থা রেখেছি। পাশাপাশি আধুনিক রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থাসহ ব্যাংকিং ব্যবস্থা রেখেছি। একাধিক ব্যাংক এখানে কাজ করছে। আমরা চেষ্টা করছি অন্য হাসপাতালে রোগীরা যে ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন, এখানে যেন তারা তার মুখোমুখী না হন। এতে আমরা যে ফিডব্যাক পাচ্ছি, তাতে সামান্য কিছু অস্বাভাবিকতা বাদ দিয়ে ভালো বলা যায়।

তিনি বলেন, মাঝেমধ্যেই আমরা স্পট স্টাডি করি এটি দেখার জন্য যে সেবাগ্রহীতাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা। চিকিৎসক তাদের সঠিক সেবা দিচ্ছেন কিনা, রিপোর্ট ঠিকমতো আসছে কিনা ইত্যাদি নিয়মিত নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। যদি কখনও কোনো ব্যতিক্রম লক্ষ্য করি, তাহলে তা সংশোধনের উদ্যোগ নিচ্ছি।

Hos44

সম্পূর্ণভাবে কবে চালু হবে?

জানতে চাইলে আব্দুল্লাহ আল হারুন বলেন, আমাদের লক্ষ্য এটাকে অত্যন্ত উন্নতমানের রেফারেল হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলা। আমরা এখানে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডের হাসপাতালের সাথে তুলনীয় সেবা দিতে চাই। এ লক্ষ্যে আমরা একসিডেন্ট ইমার্জেন্সি, অন্যান্য বিভাগের সেবা ও ইনডোর সার্ভিস যত দ্রুত সম্ভব চালু করা চেষ্টা করছি। এ নিয়ে আমাদের বেশকিছু পরিকল্পনা রয়েছে। এর জন্য কিছু প্রদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। যেমন- লোকবল নিয়োগ, ক্যান্টিন চালু করা, লন্ড্রি সার্ভিস চালু করা এবং তাদের থাকার ব্যবস্থা করা। এসব বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনার রয়েছে। সে অনুযায়ী আমরা চেষ্টা করছি। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা সব সেবা চালু করতে পারব।

আরও পড়ুন: সরকারি হাসপাতালে প্রাইভেট প্র্যাকটিস: সেবা বাড়বে কি?

পরিচ্ছন্নতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখছি। এর জন্য আমাদের লোকবল ও বড় বাজেট প্রয়োজন। এটি এখনও আমরা পাইনি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় অল্প কয়েকজন পরিচ্ছন্নকর্মী আমাদের এখানে কাজ করছে। তারা তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী প্রতি ৭৫০ বর্গফুটের জন্য একজন ক্লিনার প্রয়োজন। এটাকে যদি আমরা ১৫০০ বর্গফুটও ধরি, তাহলেও আমাদের ৬০০ থেকে ৬৫০ জন কর্মী প্রয়োজন। কিন্তু আছে মাত্র ৫০ জন। যেহেতু আমরা শুরুর পর্যায়ে আছি, তাই এটি দিয়েই চালিয়ে নিচ্ছি। তবে বাজেটের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তা পেলেই আমরা লোকবল নিয়োগ দেব। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে আমরা কোনো আপস করব না।

এমএইচ/জেএম