images

বিনোদন

‘রেড সি’ ঘিরে জেদ্দায় উৎসবের আমেজ

আলমগীর কবির

৩০ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:৩৩ পিএম

অনেক উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার পর বড় কিছুর প্রাপ্তির আনন্দই আলাদা। রেড সি ফিল্ম ফেস্টিভালের তৃতীয় সংস্করণে যোগ দিতে এসে তার প্রমাণ মিলল জেদ্দা কিং আবদুল আজিজ বিমানবন্দরে। বিদেশ থেকে আসা আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য টার্মিনালের ভেতরেই স্থাপন করা হয়েছে অভ্যর্থনা ডেস্ক। উদ্দেশ্য অতিথিদের বিশেষ ব্যবস্থায় ইমিগ্রেশন শেষ করা। এরপর দ্রুত লাগেজ হাতে পাওয়ার জন্য ফ্লোরে রেড সি উৎসবের সাইন দিয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সামনে এগোনোর জন্য।

লাগেজ হাতে পেয়ে কোথায় যাব চিন্তা করার আগেই ‘রেড সি’র প্লাকার্ড হাতে একজনকে চোখে পড়ল। পরিচয় দেওয়ার পর তিনি নিয়ে গেলেন অতিথি লাউঞ্জে। সেখানেই এবারের উৎসব নিয়ে নানা উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন প্রতিনিধিরা।

উদ্বেগটা অন্য কিছু নয়। বাংলাদেশে বসে রেড সি উৎসবের কথা শুনলে যে প্রশ্নটা সবাই করবেন সেটাই। অর্থাৎ ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধের মধ্যে কি সৌদি আরবে চলচ্চিত্র উৎসব হবে? প্রশ্নটা জোরালো হয়েছে কারণ গত অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর কায়রো ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ও তিউনিসিয়ার কার্থেজ ফিল্ম ডে’স-সহ আরব বিশ্বের বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র উৎসব বাতিল করা হয়েছে। সেই বাতিলের তালিকায় রেড সি ফিল্ম ফেস্টিভালের নাম উচ্চারিত হয়েছে একাধিকবার। কিন্তু সব জল্পনা কাটিয়ে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ৮টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা) জেদ্দার বিলাসবহুল রিটজ-কার্লটন হোটেলে শুরু হচ্ছে রেড সি’র ওপেনিং গালা নাইট।

 

আরও পড়ুন

স্বর্ণপাম উৎসর্গ করা হলো তরুণ নারী নির্মাতাদের

এশিয়ান ডিজাইনারদের সাথে ফ্যান বিংবিংয়ের কান উদযাপন

রেড কার্পেটে মেজাজ হারালেন টম হ্যাঙ্কস

আফগান নারীদের অধিকার চাইলেন জেনিফার লরেন্স

প্রথমে ঐশ্বরিয়া তারপর হ্যারিসন ফোর্ড

 

গত বছর প্রথম দিনের এই আয়োজেন ছিলেন বিখ্যাত হলিউড অভিনেত্রী শ্যারন স্টোন, বলিউড অভিনেতা শাহরুখ খান, প্রিয়াঙ্কা চোপড়াসহ বিশ্বের নানা প্রান্তের সিনেমা সংশ্লিষ্টরা। এবার সেই জায়গায় সম্মানিত করা হবে জার্মান অভিনেত্রী ডায়ন ক্লোগার, বলিউড অভিনেতা রণবীর সিং, সৌদি আরবের প্রবীণ লেখক ও অভিনেতা আবদুল্লাহ আল সাধনকে। এছাড়া উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে হ্যালি বেরি, ক্যাটরিনা কাইফ, তিউনিসিয়ার চলচ্চিত্র নির্মাতা কাউথার বেন হানিয়া, অস্ট্রেলিয়ান কস্টিউম ডিজাইনার ক্যাথরিন মার্টিন, ভারতীয় পরিচালক ও টিভি ব্যক্তিত্ব করণ জোহর, মিসরীয় অভিনেত্রী ইয়াসমিন সাবরির।

আমাকে যিনি এই তথ্যগুলো দিচ্ছেন তার নাম ফাতিমা। তিনি কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভাসিটির টুরিজম বিভগের ছাত্রী। খণ্ডকালীন কর্মী হিসেবে রেড সিতে যুক্ত হয়েছেন। বিমানবন্দর থেকে হোটেলের উদ্দেশ্যে গাড়িতে ওঠার আগে তিনি বললেন, আরেকটি সুখবর আছে। যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধি দল জেদ্দার রেড সি ফিল্ম ফেস্টিভালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। এই দলে রয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রযোজক, পরিবেশক ও বিক্রয় প্রতিনিধিরা। যারা সৌদি আরবের সঙ্গে যৌথভাবে একাধিক সিনেমা নির্মাণ করেছেন। সব মিলিয়ে এবারে উৎসব আগের চেয়ে জমজমাট হবে।

বিমানবন্দর থেকে উৎসব কর্তৃপক্ষের গাড়ি দিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার পর বড় বড় বিলবোর্ডে রেড সি উৎসবের প্রচারণা দেখে বুঝতে বাকি রইল না আয়োজন সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতিই নিয়ে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মাঝপথে একটু বিপত্তি ঘটল। ক্রাউন প্লাজা নামে জেদ্দা শহরে দুটি হোটেল রয়েছে। একটি আল সালাম রোডে। অন্যটি আল হামারা ডিস্ট্রিকে। আমার গন্তব্য আল হামারায় কিন্তু নিয়ে গেল আল সালাম রোডে। হোটেলের নাম দেখে গাড়ি ছেড়ে দিয়ে জানতে পারলাম ভুল ঠিকানায় এসেছি। পরে বিকল্প ব্যবস্থায় যেতে হয়েছেন সঠিক ঠিকানায়। সেখানে গিয়ে মুহূর্তেই মনটা ভালো হয়ে গেছে রেড সি উৎসবের সিইও মোহাম্মদ আল তুওকির সাক্ষাৎ পেয়ে। আমাকে ভুল ঠিকানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে— এটা শুনে বিনয় প্রকাশ করতেই হোটেল লবিতে অপেক্ষা করছিলেন তিনি।

প্রাথমিক সৌজন্য শেষে আমি ওনার কাছে জানতে চাইলাম, যুদ্ধের মধ্যে এই উৎসবের আয়োজন কেন? মোহাম্মদ তওকি বললেন, আমরা দিনের পর দিন পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছিলাম। অক্টোবরের শেষ দিকে অনুষ্ঠান বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত এক বছর ধরে যারা এই আয়োজন নিয়ে কাজ করছিলেন তারা এটা শোনার পর প্রায় হার্ট অ্যাটাকের মতো অবস্থা। তাই আমরা সিদ্ধান্ত পাল্টাতে বাধ্য হয়েছি। ওনার সঙ্গেই ছিলেন উৎসবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিবানী পান্ডে মালহোত্রা। তিনি বলেন, আমাদের উৎসব বাতিল বা স্থগিত করার সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই উৎসব আয়োজনের ক্ষেত্রে আমরা পূর্ব সিদ্ধান্তে অটল রয়েছি।

ওনাদের সঙ্গে কথা শেষ করে হোটেল রুমে যাওয়ার আগে হাতে পেলাম ওপেনিং অনুষ্ঠানে যাওয়ার আমন্ত্রণপত্র। সেখানে লেখা আছে এবারের উৎসবের মূল প্রতিবাদ্য বিষয় হলো— ‘তোমার গল্প, তোমার উৎসব।’ যেখানে মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে রয়েছে এশিয়া, আফ্রিকা এবং আরব বিশ্বের ১৭টি সিনেমা।

ছয়জন বিচারক এই সিনেমাগুলো থেকে সেরা কাজটি খুঁজে বের করবেন। বিচারকদের প্রধান হলেন ‘এলভিস’ খ্যাত অস্ট্রেলিয়ান চলচ্চিত্র পরিচালক বাজ লুহরম্যান, সুইডিশ-আমেরিকান অভিনেতা জোয়েল কিন্নামান, ভারতীয় অভিনেত্রী ফ্রিদা পিন্টো, মিসরীয় অভিনেত্রী আমিনা খলিল, স্প্যানিশ অভিনেত্রী পাজ ভেগা এবং সৌদি আরবের শীর্ষস্থানীয় লেখক ও পরিচালক হানা আল-ওমাইর।