কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৭৬তম আসরে জেনিফার লরেন্সের কোনো সিনেমা নেই। বিচারকদের তালিকায়ও নেই ২০১৩ সালে অস্কারজয়ী এই অভিনেত্রীর নাম। তবে স্থানীয় সময় রোববার বিকেলে কানের লাল গালিচায় দেখা গেছে তাকে।
পরে জানা যায়, ‘অ্যানাটমি অফ আ ফল’ সিনেমার প্রিমিয়ারে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এই তারকাকে। তারই অংশ হিসাবে লাল রঙের গাউন পরে হাজির হন তিনি। তবে পায়ে উঁচু হিলের পরিবর্তে ছিল কালো রঙের এক জোড়া স্যান্ডেল। মূলত আফগানিস্তানের নারীদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতেই প্রথা ভেঙে কালো স্যান্ডেল পরেছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
জেনিফার লরেন্স এখন আফগানিস্তানের নারীদের নিয়ে নির্মিতব্য একটি ডকুমেন্টারিতে কাজ করছেন। যার নাম ‘ব্রেড অ্যান্ড রোজ’। তালেবান শাসন ফিরে আসার পর আফগানিস্তানের তিনজন নারীর দৈনন্দিন জীবনের ঘটনা এর বিষয়বস্তু। সম্প্রতি লন্ডনে এর দৃশ্য ধারণও শুরু হয়েছে। সেখানেও তিনি সবসময় পায়ে কালো রঙের স্যান্ডেল পরে শুটিংয়ে অংশ নেন।
লরেন্স বলেন, ওখানকার মেয়েদের দুর্দশার গল্পের শেষ নেই। ওখানে কিভাবে কি করা যায় তা ভাবতে গিয়ে আপনি বেশ অসহায় বোধ করবেন। আপনার জেনে বিস্মিত হবেন যে ওখানে বাজার করাও একটি কঠিন কাজ।
বলে রাখা প্রয়োজন, ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান শাসন ফিরে আসার পর থেকেই নারী অধিকার হুমকির মুখে। বিশেষ করে শিক্ষার অধিকার, কর্মসংস্থানের সীমাবদ্ধতা এবং পাবলিক স্পেসে তাদের প্রবেশাধিকার থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে লরেন্সের লালগালিচায় হাঁটার দিন দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়েছিলেন টাইটানিক তারকা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও। উৎসবের ষষ্ঠদিন তিনি যখন সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন তখন বাইরে অপেক্ষা করছিলেন বিভিন্ন দেশের শত শত সাংবাদিক। কারণ সংবাদ সম্মেলন কক্ষে সবার স্থান সংকুলন হচ্ছিল না।
বিজ্ঞাপন
কানে এবার ডিক্যাপ্রিও হাজির হন ‘কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন’ ছবির প্রচারণার জন্য। ছবিটি এবারের উৎসবে প্রতিযোগিতার বাইরে রয়েছে। এটি পরিচালনা করেছেন অস্কারজয়ী নির্মাতা মার্টিন স্করসেসি। রোববার কলাকুশলীদের নিয়ে তার সংবাদ সম্মেলনে হাজির থাকার কথা ছিল। যদিও সেটি প্রায় ২০ মিনিট বিলম্ব হয়। কারণ ফটোকলে ছবিয়ালদের আবদার।
আগের দিন (২০ মে) সন্ধ্যায় পালে ভবনের লালগালিচায় ‘কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন’ টিমের সঙ্গে আসেন ডিক্যাপ্রিও। তখন তাকে ঘিরে উন্মাদনা ছিল দেখার মতো। শুধু তাই নয়, গাড়ি থেকে নেমে লালগালিচায় ঢোকার আগে সড়ক বিভাজকে অপেক্ষমাণ ভক্ত-দর্শকদের সঙ্গে হাত মেলাতে এগিয়ে যান তিনি। তাকে দেখামাত্রই পুরো কান সৈকত যেন চিৎকার দিয়ে উঠে!
ডিক্যাপ্রিওর এমন সাধারণের সঙ্গে মিশে যাওয়ার ঘটনা সবার মন ছুঁয়ে গেছে। পথের ধারে দাঁড়িয়ে অনেককে অটোগ্রাফ দিয়েছেন তিনি। এবারের কান উৎসবে হলিউড সুপারস্টার জনি ডেপ প্রথম আকর্ষণ থাকলেও লিওনার্দো তার রোমান্টিক ইমেজ এখনও ধরে রেখেছেন, যার বীজ বপণ করেছেন ২৫ বছর আগে ‘টাইটানিক’ দিয়ে।
লালগালিচায় লিওনার্দো যতটা প্রাণবন্ত ছিলেন ততটাই যেন সুবোধ বালকের বেশে চুপচাপ বসে ছিলেন সংবাদ সম্মেলন কক্ষে। মার্টিন স্করসেসির পরিচালনায় ‘কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন’ হলো তার ষষ্ঠ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। নৈতিকভাবে রহস্যময় মানুষদের পর্দায় তুলে ধরার ক্ষেত্রে স্করসেসির মুন্সিয়ানার প্রশংসা করেন ডিক্যাপ্রিও। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, রূপ বদলানো কিংবা অশুভ চরিত্রের ভেতরেও মানবতা প্রকাশ করতে মার্টিনের জুড়ি নেই। তার এই দক্ষতা অবিশ্বাস্য, এটা কখনও কল্পনা করতে পারে না কেউ।
২০১৭ সালে প্রকাশিত আমেরিকান কথাসাহিত্যিক ডেভিড গ্রানের জনপ্রিয় গ্রন্থ ‘কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন: দ্য ওসেজ মার্ডারস অ্যান্ড দ্য বার্থ অব দ্য এফবিআই’ অবলম্বনে সাজানো হয়েছে তিন ঘণ্টা ২৬ মিনিট দৈর্ঘ্যের সিনেমাটি। ১৯২০ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রে ওকলাহোমায় রাজ্যে তেল আবিষ্কারের পর রহস্যজনকভাবে ওসেজ উপজাতির একের পর এক সদস্যের নৃশংসভাবে খুন হওয়াকে কেন্দ্র করে ছবিটির গল্প। ঘটনার তদন্তে নামে নবগঠিত এফবিআই।
গল্পের প্রয়োজনে ওসেজ সম্প্রদায়ের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন মার্টিন স্করসেসি। ‘কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন’ নির্মাণের পেছনে তাদের গুরুত্বের কথা জানিয়ে ৮০ বছর বয়সী এই আমেরিকান নির্মাতা বলেন, বইটি আমার কাছে দেওয়ার পর বলেছিলাম, আমরা যদি আদিবাসী জাতির কাছাকাছি কোথাও যাই তাহলে তাদের খুব সম্মান করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ওসেজ নেশন প্রধান জিওফ্রে স্ট্যান্ডিং বিয়ার। তিনি ছবিটিতে উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার কথায়, আমাদের সম্প্রদায়কে অনেক ভুগতে হয়েছে। আজ পর্যন্ত সেসব প্রভাব আমাদের ওপর রয়েছে। তবে ওসেজ নেশনের পক্ষ থেকে বলতে পারি, মার্টিন ও তার দল বিশ্বাস ফিরিয়ে এনেছে। আমরা জানি, বিশ্বাসের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে না।