মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

‘কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে জ্বালানি মহাপরিকল্পনা পুনর্মূল্যায়ন অপরিহার্য’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬ মার্চ ২০২৫, ০৮:৫৭ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যায়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), সেন্টার ফর পারটিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি) এবং জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশন নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের (জেটনেট-বিডি) যৌথ আয়োজনে ‘কার্বন নিঃসরণ হ্রাস এবং নির্মল বায়ু নিশ্চিতের জন্য সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনার (আইইপিএমপি) ভূমিকা’ শীর্ষক একটি অনলাইন পলিসি ডায়ালগ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এ পলিসি ডায়ালগ অনুষ্ঠিত হয়।
 
সেন্টার ফর পারটিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (সিপিআরডি) প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহার সভাপতিত্ব এবং সঞ্চালনায় পলিসি ডায়ালগে প্রধান অতিথি হিসাবে যুক্ত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নেচার কনজার্ভেশন ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. এস. এম. মনজুরুল হান্নান খান এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ধরিত্রী কুমার সরকার।


বিজ্ঞাপন


পলিসি ডায়ালগে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, বাংলাদেশ এনার্জি ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের (আইইইএফএ) প্রধান বিশ্লেষক শফিকুল আলম, অ্যাকশন এইডের ম্যানেজার– জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশন মো. আবুল কালাম আজাদ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চের (সিথ্রিইআর) সহকারী পরিচালক রৌফা খানম, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রফেসর ড. মো. জাকারিয়া, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. নাছির আহম্মেদ পাটোয়ারী, সেন্টার ফর ল এন্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্সের সেক্রেটারি সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. রাশেদুজ্জামান মজুমদার, ইয়ুথনেট গ্লোবালের প্রধান নির্বাহী সমন্বয়ক সোহানুর রহমান এবং ক্যপসের প্রধান গবেষকের (দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন) মারজিয়াত রহমান।
 
পলিসি ডায়ালগে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। তিনি তার মূল বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনাতে (আইইপিএমপি) নিঃসরণ মান-মাত্রা এবং এনার্জি ট্রান্সজিশনের সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা অনুপস্থিত রয়েছে। আমরা যদি শুধুমাত্র উৎপাদন ক্ষমতার দিকে মনোযোগী হই, দূষণ নিয়ন্ত্রণের শক্তিশালী ব্যবস্থা না করি কিংবা আমাদের সুন্দর একটি মাস্টার প্ল্যানে দূষণ নিয়ন্ত্রণ অনুপস্থিত রাখি, সেক্ষেত্রে এটি দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের পরিবেশ ও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই, আইইপিএমপিতে দূষণ হ্রাসের অনুশীলন সমন্বয়, কঠোর নিঃসরণ বিধিমালা এবং ক্লিন এনার্জি ট্রান্সজিশনের বিষয়টি স্পষ্ট অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।
 
পলিসি ডায়ালগে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, নির্মল বায়ু নিশ্চিত এবং কার্বন নিঃসরণ হ্রাসকরণের জন্য নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার অপরিহার্য এবং আমাদের উচিত জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা। ন্যায্য নগর প্রতিষ্ঠায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি অপরিহার্য; এক্ষেত্রে প্রয়োজনে পলিসি পুনর্মূল্যায়ন করা যেতে পারে।
 
ডায়ালগে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ধরিত্রী কুমার সরকার বলেন, আমাদের দেশে জ্বালানি নিয়ে বিভিন্ন সময় একাধিক পলিসি প্রণয়ন করা হয়েছে। এই পলিসি গুলোর মধ্যে অনেকাংশে সামঞ্জস্য থাকে না। আমাদেরকে সমন্বিতভাবে একটি কার্যকরী পলিসি প্রণয়ন করতে হবে।
 
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নেচার কনজার্ভেশন ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. এস. এম. মনজুরুল হান্নান খান বলেন, বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তিতে জ্বালানি নীতি প্রণয়ন এবং সময়ে সময়ে পুনর্মূল্যায়নে কাজ করতে হবে।
 
অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের জ্বালানির চাহিদা দিনকে দিন বাড়তেই থাকবে। আমাদের দেশে শক্তির কোনো নিরাপত্তা নাই তাই আমাদেরকে দ্রুত নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের দিকে অগ্রসর হতে হবে। আমাদেরকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে উৎসাহী হতে হবে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে সরে আসতে হবে। বিদ্যুৎ সংকট রোধ করতে সম্মিলিত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
 
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, নীতি প্রণয়নে বিদেশি দাতা ও পরামর্শক নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আইন বাস্তবায়নে কোনো বৈদেশিক সম্পদ ব্যবহার করা যাবে না। বাংলাদেশের নীতি প্রণয়নের জন্য একটি যৌথ কমিশন গঠন করা জরুরি।

সেন্টার ফর ল এন্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্সের সেক্রেটারি সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন বলেন, আমাদের একটি নবায়নযোগ্য জ্বালানি কমিশন গঠন করা উচিত। জনগণ এবং বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করা জরুরি। আমাদের অতিরিক্ত শক্তির অপচয় বন্ধ করতে হবে। 
 
আলোচক সিথ্রিইআরের সহকারী পরিচালক রউফা খানম বলেন, আমাদের দেশে কার্বন নিঃসরণ বিষয়ে গবেষণা ভিত্তিক আলোচনা জরুরি। আমরা পলিসি মেকারদেরকে নিয়ে একত্রিত হয়ে আইইপিএমপির মধ্যে নিঃসরণ মান-মাত্রা এবং এনার্জি ট্রান্সজিশন বিষয়গুলোর আরও কার্যকর অন্তর্ভুক্তির জন্য পুনর্মূল্যায়ন করা জরুরি।

ইয়ুথনেট গ্লোবালের প্রধান নির্বাহী সমন্বয়ক সোহানুর রহমান বলেন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্বন নিঃসরণের সীমা বাড়িয়ে দূষণকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে, যা পরিবেশ ও মানব জীবনের জন্য বিপদজনক। সমন্বিত বিদ্যুৎ-জ্বালানি মহাপরিকল্পনা (আইইপিএমপি) মহাপরিকল্পনাটি অপ্রমাণিত ও ব্যয়বহুল প্রযুক্তির ওপর গুরুত্ব দিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তির বিকাশ বাধাগ্রস্ত করছে। সমন্বিত এই পরিকল্পনা জাতীয় জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রাগুলোর সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনের লক্ষ্যে নতুন জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদানের (এনডিসি) সাথে সমন্বয় করে, জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর অর্থায়ন বন্ধ করে, নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি।

সভাপতির বক্তব্যে সিপিআরডি এর প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা বলেন, বাংলাদেশকে অবশ্যই নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে দ্রুত অগ্রসর হতে হবে। এক্ষেত্রে আইইপিএমপি শক্তিশালীকরণ, দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও শক্তি রূপান্তরের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অন্তর্ভুক্তি এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে (সৌর, বায়ু এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে) বিনিয়োগ বৃদ্ধি হতে পারে কার্যকরী পদক্ষেপ।


বিজ্ঞাপন


এছাড়াও এ পলিসি ডায়ালগে আরও সংযুক্ত ছিলেন, বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংস্থার প্রতিনিধিগণ, সেন্টার ফর পারটিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি), জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশন নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (জেটনেট-বিডি), বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

এমআইকে/এমএইচটি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন


News Hub