শীত মানেই দিন ছোট, রাত বড়। এজন্য শীতকালে রোজা রাখলে দীর্ঘ সময় ক্ষুধা ও পিপাসার যন্ত্রণা সহ্য করতে হয় না অন্য সময়ের মতো। তাই শীতকালকে বলা হয় নফল রোজার উপযুক্ত মওসুম। নফল রোজা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের অন্যতম আমল। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ, আগের উম্মতদের মতো তোমাদের ওপরও রোজা ফরজ করা হয়েছে, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা: ১৮৩)
তাই শীতকালে মুমিনের অন্যতম করণীয় হলো— কারো যদি কাজা রোজা বাকি থাকে, সেগুলো এই শীতকালে আদায় করে নেওয়া এবং যত সম্ভব নফল রোজা রাখা। সাহাবি আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (স.) বলেন, ‘শীতকাল হচ্ছে মুমিনের বসন্তকাল।’ (মুসনাদে আহমদ: ১১৬৫৬) অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘শীতের রাত দীর্ঘ হওয়ায় মুমিন রাত্রিকালীন নফল নামাজ আদায় করতে পারে এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখতে পারে’ (শুয়াবুল ঈমান লিল বায়হাকি: ৩৯৪০)। রাসুলুল্লাহ (স.) আরও ইরশাদ করেছেন, ‘শীতল গনিমত হচ্ছে শীতকালে রোজা রাখা।’ (তিরমিজি: ৭৯৫)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: ফরজ বাধ্যতামূলক, নফলে আল্লাহর নৈকট্য
রোজা বান্দাকে জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। তাই শীতে রোজার প্রতি মনোনিবেশ করা বেশ সুবিধাজনক। মুমিন এই সুযোগ হাতছাড়া করতে পারেন না। ইরশাদ হয়েছে, ‘বিশুদ্ধ নিয়তে যে ব্যক্তি এক দিন রোজা রাখল, মহান আল্লাহ প্রতিদানস্বরূপ জাহান্নাম এবং ওই ব্যক্তির মাঝখানে ৭০ বছরের দূরত্ব তৈরি করে দেবেন।’ (বুখারি: ২৮৪০)
এই ঋতুতে রোজার মাধ্যমে যেমন আল্লাহর একটি মহা হুকুম পালন হবে, তেমনি তাকওয়া অর্জন হবে। তাকওয়ার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে। নিচে শীতে আমল করার মতো নফল রোজার কিছু সুন্নত নিয়ম তুলে ধরা হলো—
চান্দ্রমাসের তিন দিন রোজা
চান্দ্রমাসের এই তিনটি দিনকে শরিয়তের পরিভাষায় ‘আইয়ামুল বিদ’ বলা হয়। বিদ অর্থ সাদা বা আলোকিত। যেহেতু এই তিন দিনের রজনীগুলো ফুটফুটে চাঁদের আলোয় উদ্ভাসিত থাকে, তাই এগুলোকে ‘আইয়ামুল বিদ’ বলা হয়। আবু জর গিফারি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (স.) তাঁকে এভাবে বলেছেন- ‘হে আবু জর, যদি তুমি প্রতি মাসে তিনদিন সিয়াম পালন করতে চাও, তাহলে (প্রতি চাঁদের) ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে তা পালন করো।’ (তিরমিজি: ৭৬১)
বিজ্ঞাপন
সাপ্তাহিক রোজা
সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার এ দুই দিন রোজা রাখা সুন্নত। কেননা প্রিয়নবী (স.) এই দুই দিন রোজা রাখতে পছন্দ করতেন। আবু কাতাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (স.)-কে সোমবার রোজা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি এর উত্তরে বলেছিলেন, ‘এই দিনে আমার জন্ম হয়েছে এবং এই দিনে আমাকে নবুয়ত দেওয়া হয়েছে বা আমার ওপর কোরআন নাজিল হওয়া শুরু হয়েছে।’ (মুসলিম: ১১৬২)
অন্য হাদিসে নবীজি বলেছেন, ‘(প্রতি সপ্তাহে) সোম ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়ে থাকে। কাজেই রোজাদার অবস্থায় আমার আমলগুলো আল্লাহর দরবারে পেশ করা হোক, এমনটি আমি পছন্দ করছি।’ (তিরমিজি: ৭৪৭)
দাউদ (আ.)-এর রোজা
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর কাছে (নফল রোজার মধ্যে) সবচেয়ে প্রিয় রোজা হলো দাউদ (আ.)-এর রোজা। তিনি এক দিন রোজা রাখতেন আর এক দিন রোজা ত্যাগ করতেন।’ (বুখারি: ৩৪২০)
আরও পড়ুন: পশু-পাখিও মুর্ছা যেত যার মোহনীয় সুরে
বিবাহে অসমর্থ ব্যক্তিদের রোজা
একবার রাসুল (স.) সাহাবায়ে কেরামের উদ্দেশে বলেছেন, ‘হে যুবকরা, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি যৌনমিলন ও পরিবারের ভরণপোষণের ক্ষমতা রাখে সে যেন বিবাহ করে, কেননা এতে দৃষ্টি অবনমিত হয় এবং যৌনাঙ্গের হেফাজত হয়। আর যে যুবক (স্ত্রীর ব্যয়ভার বহনের) ক্ষমতা রাখে না, সে যেন রোজা রাখে। কেননা রোজা যৌনস্পৃহা দমিয়ে রাখে।’ (বুখারি: ৫০৬৫)
উপরোক্ত রোজাগুলো শীতের মওসুমে আদায় করা সহজসাধ্য। তাই শীতকাল নফল রোজার জন্য মুমিনের কাঙ্ক্ষিত মওসুম। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শীতের মওসুমে নফল রোজাসহ বিভিন্ন সহজসাধ্য আমল বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।