শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

নবীজির ইন্তেকালের যে বর্ণনা দিয়েছেন আয়েশা (রা.)

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ অক্টোবর ২০২২, ০৩:৫৪ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.)-এর ঘরে যেখানে নবীজি ইন্তেকাল করেন সেখানেই কবর খনন করা হয়। জানাজাশেষে বুধবার রাতে নবীজিকে সমাহিত করা হয়। হজরত আব্বাস, হজরত আলী (রা.) প্রমুখ সাহাবিগণ নবীজিকে কবরে শায়িত করেন (সিরাতে ইবনে হিশাম: ৪/৩৩৫; সিরাত বিশ্বকোষ: ১০/৪৫৪-৪৫৭)

মা আয়েশা (রা.)-এর বর্ণনামতে, মৃত্যু-রোগে আক্রান্ত অবস্থায় রাসুলুল্লাহ (স.) জিজ্ঞেস করতেন, আমি আগামীকাল কার ঘরে থাকব, আগামীকাল কার ঘরে? এ কথার মাধ্যমে তিনি আয়েশা (রা.)-এর পালার ইচ্ছা পোষণ করতেন। সহধর্মিণীরা নবী (স.)-কে যার ঘরে ইচ্ছা অবস্থান করার অনুমতি দিলেন। তখন নবী কারিম (স.) আয়েশা (রা.)-এর ঘরে ছিলেন। এমনকি তাঁর ঘরেই তিনি ইন্তেকাল করেন। 


বিজ্ঞাপন


সহিহ বুখারির বর্ণনায় আয়েশা (রা.) বলেন, নবী (স.) আমার জন্য নির্ধারিত পালার দিন আমার ঘরে ইন্তেকাল করেন এবং আল্লাহ তাঁর রুহ কবজ করেন এ অবস্থায় যে তাঁর মাথা আমার গণ্ড ও সিনার মধ্যে ছিল এবং আমার থুথু (তাঁর থুথুর সঙ্গে) মিশ্রিত হয়ে যায়।

তিনি আরো বলেন, ..নবী (স.) অসুস্থ হলে আমাদের মধ্যকার কেউ দোয়া পড়ে তাঁকে ঝাড়ফুঁক করতেন। আমি নবী (স.)-কে ঝাড়ফুঁক করার জন্য তাঁর কাছে গেলাম। তখন তিনি তাঁর মাথা আকাশের দিকে উঠিয়ে বললেন, সুমহান বন্ধুর সঙ্গে (মিলিত হতে চাই), সুমহান বন্ধুর সঙ্গে (মিলিত হতে চাই)। 

এ সময় আবদুর রহমান ইবনে আবি বকর (রা.) আগমন করলেন। তাঁর হাতে মেসওয়াকের একটি তাজা ডাল ছিল। নবী (স.) তখন সেদিকে তাকালেন। তখন আমি বুঝতে পারলাম যে তাঁর মেসওয়াকের প্রয়োজন। তখন আমি সেটি নিয়ে চিবালাম, ঝেড়ে-মুছে পরিষ্কার করলাম এবং নবী (স.)-কে তা দিলাম। তখন তিনি এটি দিয়ে এত সুন্দরভাবে দাঁত পরিষ্কার করলেন যে এর আগে কখনো এরূপ করেননি। তারপর তা আমাকে দিলেন। অতঃপর তাঁর হাত ঢলে পড়ল। আল্লাহ তাআলা আমার থুথুকে নবী (স.)-এর থুথুর সঙ্গে মিলিয়ে দিলেন তাঁর এই দুনিয়ার শেষ দিন এবং আখেরাতের প্রথম দিনে।

আয়েশা (রা.) প্রায়ই বলতেন, আমার প্রতি আল্লাহর এটা নেয়ামত যে আমার ঘরে, আমার পালার দিনে এবং আমার গণ্ড ও সিনার মধ্যে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর ইন্তেকাল হয়। ...তাঁর সম্মুখে পাত্র অথবা পেয়ালা ছিল, তাতে পানি ছিল। নবী (স.) নিজের দুই হাত পানির মধ্যে প্রবেশ করিয়ে তাঁর চেহারা মুছতে লাগলেন। তিনি বলছিলেন, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, সত্যিই মৃত্যুযন্ত্রণা কঠিন। তারপর দুই হাত ওপরের দিকে উঠিয়ে বলছিলেন, আমি সুমহান বন্ধুর সঙ্গে (মিলিত হতে চাই)। এ অবস্থায় তাঁর ইন্তেকাল হলো আর হাত শিথিল হয়ে গেল।


বিজ্ঞাপন


আয়েশা (রা.) আরো বলেন, আবু বকর (রা.) ঘোড়ার ওপর সওয়ার হয়ে তার সুনহের বাড়ি থেকে আগমন করেন। ঘোড়া থেকে অবতরণ করে তিনি মসজিদে নববিতে প্রবেশ করেন, কিন্তু কারো সঙ্গে কোনো কথা না বলে ‘আয়েশা (রা.)-এর কাছে উপস্থিত হন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) ইয়েমেনি চাদর দ্বারা আবৃত ছিলেন। তখন তিনি চেহারা থেকে কাপড় হটিয়ে তাঁর ওপর ঝুঁকে পড়লেন এবং তাঁকে চুমু দিলেন ও কেঁদে ফেললেন। তারপর বললেন, আমার মাতা-পিতা আপনার প্রতি কোরবান হোক! আল্লাহর কসম! আল্লাহ তো আপনাকে দুবার মৃত্যু দেবেন না, যে মৃত্যু ছিল আপনার জন্য নির্ধারিত সে মৃত্যু আপনি গ্রহণ করে নিলেন। 

উল্লেখ্য, নবীজির ইন্তেকালের মাধ্যমে চিরদিনের জন্য ওহির দরজা বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় নবুয়তের ধারাবাহিকতা। তিনি কেয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষের নবী। আরব-আনারব পূর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণ সকল প্রান্তের নবী। তাই তাঁকে বলা হয় বিশ্বনবী (স.)। প্রতি মুহূর্তে তাঁর ওপর বর্ষিত হোক রহমত ও বরকতের ফল্গুধারা। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

সূত্র: সহিহ বুখারি: ৪৪৫০-৪৪৫৩

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন