বৃহস্পতিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

শবে কদরে ভাগ্য লিপিবদ্ধ হয় যেভাবে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭ মার্চ ২০২৫, ০৪:০০ পিএম

শেয়ার করুন:

শবে কদরে ভাগ্য লিপিবদ্ধ হয় যেভাবে

শবে কদর পবিত্র রমজানের একটি রাত। সারা বছরে এ রাতের চেয়ে মর্যাদাপূর্ণ কোনো রাত নেই। শবে কদরকে পবিত্র কোরআনে ‘হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ’ বলা হয়েছে। মাহে রমজানের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এই শবে কদরের কারণে। এই রাতেই আল্লাহ তাআলা প্রিয়নবীজির ওপর কোরআন নাজিল করেছেন।

এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে- ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি মহিমান্বিত রজনীতে। আর আপনি কি জানেন মহিমান্বিত রজনী কী? মহিমান্বিত রজনী হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এ রজনীতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ এবং রূহ তাদের প্রতিপালকের আদেশত্রুমে অবতীর্ণ হয়। এবং ভোর উদিত হওয়ার আগ পর্যন্ত কেবল শান্তি আর শান্তি বিরাজ করে।’ (সুরা কদর: ১-৫)


বিজ্ঞাপন


মানুষের বার্ষিক ভাগ্যলিপি শবে কদরেই লিপিবদ্ধ হয়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন-  إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ ‘আমি তো তা অবতীর্ণ করেছি এক মুবারক রজনীতে এবং আমি তো সতর্ককারী। এ রজনীতে প্রত্যক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়।’ (সুরা দুখান: ৩-৪)

এর ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এই আয়াতের অর্থ হলো- কোরআন অবতরণের রাতে তথা শবে-কদরে সৃষ্টি সম্পর্কিত সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা স্থির করা হয়, যা পরবর্তী শবে-কদর পর্যন্ত এক বছরে সংঘটিত হবে। অর্থাৎ, এ বছর কারা জন্মগ্রহণ করবে, কে কে মারা যাবে এবং এ বছর কী পরিমাণ রিজিক দেয়া হবে। যদিও আল্লাহ তাআলা এসব ফয়সালা সৃষ্টিলগ্নে লিখে রেখেছেন। তারপরও শবে কদরে এগুলোর স্থির করার অর্থ এই যে, যেসব ফেরেশতার মাধ্যমে ভাগ্যলিপি কার্যকর ও প্রয়োগ করা হবে, তার বার্ষিক বিধানাবলী তাদের কাছে অর্পণ করা হয়। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, তুমি কোনো মানুষকে বাজারে হাঁটাচলা করতে দেখবে অথচ তার নাম মৃতদের তালিকায়। তারপর তিনি এ আয়াত তেলাওয়াত করে বললেন, প্রতি বছরই এ বিষয়গুলো নির্ধারিত হয়ে যায়। (মুস্তাদরাক হাকিম: ২/৪৪৮-৪৪৯)

আরও পড়ুন: রমজানের শেষ দশক: প্রত্যেক বিজোড় রাতে চারটি আমল মিস করবেন না

এই আয়াতে ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ বা ‘বরকতময় রজনী’ বলে শবে কদরকেই বোঝানো হয়েছে। অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা রয়েছে যে, রাতটি বোধহয় শবে বরাতের রাত। না; আসলে সঠিক কথা হলো- এটি শবে বরাত নয়, বরং শবে কদর। কেননা বর্ণনা অনুযায়ী রাতটি নিঃসন্দেহে রমজান মাসের মধ্যে; কারণ অন্যত্র আল্লাহ ঘোষণা করেছেন যে, তিনি রমজান মাসে কোরআন নাজিল করেছেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, মুবারক রজনী রমজান মাসে, শাবান মাসে নয়। (তাবারি, তাফসির ২৫/১০৭-১০৯)


বিজ্ঞাপন


মুফাসসিররা ইমাম তাবারির সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। তারা বলেছেন যে, ‘মুবারক রজনী’ বলতে এখানে ‘মহিমান্বিত রজনী’ বা ‘লাইলাতুল কদর’ বুঝানো হয়েছে। তাদের মতে, ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ এবং ‘লাইলাতুল কদর’ একই রাতের দুটি উপাধি।

কোরআন হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, শবে কদরে যে ভাগ্যলিপি নির্ধারিত হয় তা বার্ষিক ভাগ্যলিপি। মূলত ভাগ্যলিপির চারটি স্তর রয়েছে। সেগুলো হলো-
১. তাকদিরে আম বা সাধারণ ভাগ্য
সব সৃষ্টির জন্য লাওহে মাহফুজে যে ভাগ্য লিপিবদ্ধ রয়েছে তাকে তাকদিরে আম বা সাধারণ ভাগ্য বলা হয়। এটি তাকদিরের প্রথম স্তর। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আপনি কি জানেন না, নিশ্চয়ই আল্লাহ আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে সে বিষয়ে পরিজ্ঞাত, নিশ্চয়ই তা কিতাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে, নিশ্চয়ই তা আল্লাহর কাছে খুবই সহজ।’ (সুরা হজ: ৭০)

আরও পড়ুন: শবে কদরে যেভাবে ইবাদত করবেন

২. তাকদিরে উমুরি বা জীবনব্যাপী ভাগ্যলিপি
এ ধরনের তাকদির লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ তাকদির থেকে ভিন্ন। কেননা তাকদিরুল উমুরি পরিবর্তন হতে পারে, এমনকি বিলুপ্তও হতে পারে। আর যা লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ রয়েছে তা কখনই পরিবর্তিত হয় না। এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ যা চান বিলুপ্ত করেন এবং যা চান অবশিষ্ট রাখেন। তাঁর কাছে রয়েছে মূল কিতাব।’ (সুরা রাদ: ৩৯)

হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলতেন, ‘হে আল্লাহ! যদি আপনি আমাকে হতভাগ্য লিখে থাকেন তবে তা মুছে দেন এবং আমাকে ভাগ্যবান লিখে দেন।’ (কিসমুল হাদিস: ৫/১৩)
মুহাদ্দিসদের মত হলো, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ফেরেশতাদের কাছে বিদ্যমান ভাগ্যলিপি।

৩. তাকদিরে সানুবি বা বার্ষিক ভাগ্যলিপি
তা লাইলাতুল কদরে লিপিবদ্ধ করা হয়। আল্লাহ বলেন, ‘এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়।’ (সুরা দুখান: ৪) 

৪.   দৈনন্দিন ভাগ্যলিপি
প্রতিদিন আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দার জন্য যা দান করে থাকেন তাকেই দৈনন্দিন ভাগ্যলিপি বলা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনি প্রত্যহ গুরুত্বপূর্ণ কাজে রত।’ (সুরা আর রহমান: ২৯)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর