মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

রমজানের শেষ দশক: প্রত্যেক বিজোড় রাতে চারটি আমল মিস করবেন না

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:৩৯ পিএম

শেয়ার করুন:

রমজানের শেষ দশক: প্রত্যেক বিজোড় রাতে চারটি আমল মিস করবেন না

সবচেয়ে মর্যাদার রাত পবিত্র লাইলাতুল কদর বা ‘শবে কদর’। মহান আল্লাহ মহিমান্বিত এ রাতে কোরআনুল কারিম নাজিল করেন। আবার লাইলাতুল কদরের সম্মানে পবিত্র কোরআনে ‘সুরাতুল কদর’ নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সুরাও রয়েছে। 

এ সুরায় বলা হয়েছে—লাইলাতুল কদরে কোরআন নাজিল হয়েছে, এটি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম এবং এ রাতে ফেরেশতারা আল্লাহর নির্দেশে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। এ রাতের ফজর পর্যন্ত প্রশান্তি বর্ষিত হয়।’ (দেখুন সুরা কদর: ১-৫)


বিজ্ঞাপন


হাজার মাসের চেয়ে উত্তম অর্থ শুধু যে একহাজার মাসের চেয়ে উত্তম-বিষয়টি এমন নয়, বরং অনেক বেশি বোঝাতেও হাজার শব্দটা ব্যবহৃত হয়। তারপরও আমরা যদি এখানে এক হাজার মাসই ধরি, এর সময় দাঁড়ায় ৮৩ বছর ৪ মাস। তার মানে ৮৩ বছর ৪ মাস ইবাদত করার যে ফজিলত, তা শবে কদরের এক রাতের ইবাদতেই পাওয়া সম্ভব।

তাই রমজানের শেষ দশকে ইবাদতে লেগে পড়া উচিত। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রমজানের শেষ ১০ রাত শুরু হলে নবী (স.) কোমর বেঁধে নামতেন। তিনি নিজে রাত জেগে ইবাদত করতেন এবং তার পরিবারের সবাইকে (ইবাদতের জন্য) জাগিয়ে দিতেন।’ (সহিহ বুখারি: ২০২৪; সহিহ মুসলিম: ১১৭৪)

আরও পড়ুন
রমজানে দোয়া কবুলের বিশেষ তিনটি সময়
রমজানে যেসব গুনাহ ভুলেও করবেন না

অন্তত রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে বেশি বেশি আমল করা উচিত। কেননা হাদিসে প্রতিটি বিজোড় রাতে শবে কদর অনুসন্ধান করতে বলা হয়েছে। হাদিস শরিফে এসেছে , ‘তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাতে শবেকদর তালাশ কর।’ (বুখারি: ২০১৭)


বিজ্ঞাপন


২০ রমজানের দিনটি শেষ হলেই শেষ দশকের প্রথম বিজোড় রাত শুরু হয়। প্রত্যেক বিজোড় রাতে (২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯তম রাতে) ২০ রাকাত তারাবি পড়বেন। এরপর যত সুন্দর করে, ইখলাসের সঙ্গে, খুশু-খুজুসহকারে নফল নামাজ পড়া যায় পড়বেন। অন্তত এভাবে দু’রাকাত নফল নামাজ পড়বেন। এছাড়া এই রাতে কোরআন তেলাওয়াত করার ফায়দা অত্যধিক। সাথে বেশি বেশি দোয়া-ইস্তেগফার পড়বেন তওবা করবেন এবং তাহাজ্জুদ পড়বেন। 

এই রাতে প্রত্যেকটি আমল এমনভাবে করবেন, যেন আজকেই নিশ্চিত শবে কদর। এ বিষয়ে মনে এমন কোনো সন্দেহ না রেখেই ইবাদত করবেন। মনে রাখবেন, দান-সদকা অন্যতম নেক আমল। এর ফজিলত অনেক বেশি। তাই অন্তত ৫/১০ টাকা দান করবেন। এতে ৮৩ বছর ৪ মাস প্রতিদিন দান করার সওয়াব পাবেন। এই রাতে বেহুদা কথা-কাজ থেকে দূরে থাকবেন। এর অর্থ টানা ৮৩ বছর ৪ মাস বেহুদা কথা থেকে জবানকে হেফাজত করার সওয়াব, জিকিরে মশগুল থাকা মানে লাগাতার ৮৩ বছর ৪ মাস জিকিরে মশগুল থাকার সওয়াব। এভাবে প্রত্যেকটি নেক আমলের বিপুল সওয়াব অর্জন করার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে এই পবিত্র রাতে। আর চারটি এমন আমল রয়েছে, যেগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এই মহান রাতে মিস করা কোনোভাবেই উচিত হবে না। আমলগুলো হলো—

১) মাগরিব, এশা ও ফজর নামাজ জামাতে আদায় করা
এই রাতে মাগরিব, এশা ও ফজর নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা উচিত। তাহলে হাদিস অনুযায়ী শবে কদরের ফজিলত লাভ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এশা ও ফজর জামাতের সঙ্গে পড়ে, সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে।’ (মুসলিম: ৬৫৬)

২) শবে কদরের দোয়া পড়া
আয়েশা (রা.) রাসুলুল্লাহ (স.)-কে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি জানতে পারি লাইলাতুল কদর কোনটি, তাহলে আমি সে রাতে কী বলব? তিনি বলেন, ‘তুমি বলো, ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧَّﻚَ ﻋَﻔُﻮٌّ ﺗُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻌَﻔْﻮَ ﻓَﺎﻋْﻒُ ﻋَﻨِّﻲ উচ্চারণ: ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নী’ (আরবি উচ্চারণ দেখে পড়বেন)। অর্থ: ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল। ক্ষমা করাটা আপনার পছন্দ। অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৫১৩)। 
সুতরাং সারাদিন-রাত বেশি বেশি এই দোয়া করবেন। এই দোয়াটি হাঁটা-চলা-শোয়া অবস্থায় করা যায়। শেষ দশকে বেশি বেশি পড়া উচিত।

আরও পড়ুন
রমজানে কবর আজাব কি মাফ থাকে?
রমজানে নারীরা যেসব আমলে মনোযোগী হবেন

৩) পরিচ্ছন্ন হওয়া
লাইলাতুল কদরের বরকত লাভের প্রধান শর্ত হলো ভেতর ও বাইরের পবিত্রতা লাভ এবং একনিষ্ঠ হয়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হওয়া। আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলি বলেন—‘উত্তম হলো- যে রাতে কদর অনুসন্ধান করা হবে, তাতে পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, গোসল-সুগন্ধি-উত্তম কাপড়ের মাধ্যমে সৌন্দর্যবর্ধন করা। আর বাহ্যিক সৌন্দর্য সৌন্দর্যের জন্য যথেষ্ট নয়, যদি না মানুষের ভেতরটা সুন্দর হয়। মানুষের ভেতর সুন্দর হয় তওবা ও আল্লাহমুখী হওয়ার মাধ্যমে।’ (লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা ১৮৯)

৪) তাহাজ্জুদ পড়া
তাহাজ্জুদের গুরুত্ব ও ফজিলত সবসময় বেশি। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য তাহাজ্জুদের বিকল্প নেই। শেষ রাতে মানুষ যখন গভীর ঘুমে মগ্ন, তখন  প্রভুর ভয় ও ভালোবাসায় যারা নিদ্রা ত্যাগ করেন, তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা শয্যা ত্যাগ করে তাদের প্রতিপালককে ডাকে আশায় ও আশঙ্কায়। আর আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে’ (সুরা সাজদা: ১৬)। মহানবী (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘রমজানের পর সর্বশ্রেষ্ঠ রোজা হলো আল্লাহর মাস মহররমের রোজা। আর ফরজ নামাজের পর সর্বশ্রেষ্ঠ নামাজ হলো রাতের (তাহাজ্জুদের) নামাজ।’ (মুসলিম: ১১৬৩)

উল্লেখ্য, শবে কদরের নামে কোনো বিদআতে জড়াবেন না। ইসলামি শরিয়তে লাইলাতুল কদরের বিশেষ কোনো নামাজ কিংবা পদ্ধতি নেই। কদরের নামাজে বিশেষ সুরা পড়তে হবে-এমন কথা লোকমুখে প্রচলিত আছে। এর কোনো ভিত্তি ইসলামে নেই। নামাজের আলাদা কোনো দোয়া বা মোনাজাতও নেই। অনেকে তিন বার করে সুরা পড়েন। এসব বিশুদ্ধ পদ্ধতি নয়, জরুরি বা বাধ্যতামূলকও নয়। নিজের মতো করে দোয়া করবেন, নামাজে সুরা কেরাত পড়বেন অন্য সময়ের নফল নামাজের মতো। 

আল্লাহ তাআলা আমাদের লাইলাতুল কদর নসিব করুন। সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর