রোববার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

রমজানে জাকাত আদায়ের গুরুত্ব ও সওয়াব

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ মার্চ ২০২৪, ০৩:৫২ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

জাকাত ফরজ ইবাদত এবং ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। পবিত্র কোরআনে নামাজের পরই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে জাকাতকে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে, সৎকাজ করেছে, সালাত প্রতিষ্ঠা করেছে এবং জাকাত দিয়েছে, তাদের প্রতিদান রয়েছে তাদের রবের নিকট। আর তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।’ (সুরা বাকারা: ২৭৭)

পবিত্র কোরআনে মুমিনদের পরিচয় সম্পর্কে বলা হয়েছে- ‘তারা এমন লোক- যাদেরকে আমি পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করি, তারা নামাজ কায়েম করে, জাকাত প্রদান করে, সৎকাজের আদেশ করে ও মন্দকাজে বাধা প্রদান করে।’ (সুরা হজ: ৪১)


বিজ্ঞাপন


জেনে রাখা জরুরি যে, যার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে— এমন স্বাধীন ও পূর্ণবয়স্ক মুসলিম নর-নারীর ওপর জাকাত ফরজ। আবার, নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ একবছর অতিক্রম করলেই কেবল জাকাত আদায় করতে হবে। 

আরও পড়ুন
জাকাত কী, কেন কাকে দিতে হয়? 
যাদের জাকাত দিলে আদায় হবে না

রমজান জাকাত আদায়ের উত্তম সময়। কেননা রমজানে যেকোনো নেক আমলের সওয়াব বহুগুণে বর্ধিত করে দেয়া হয়। এই মাসে একটি নফলের সওয়া ফরজের সমান এবং একটি ফরজের সওয়াব ৭০টি ফরজ আদায়ের সমান। একারণে কেউ যদি এই মাসে ফরজ জাকাত আদায় করে তাহলে অন্য মাসের তুলনায় বহুগুণ বেশি সওয়াব লাভ করবে। এছাড়া জাকাতের হিসাব চন্দ্রবর্ষের সঙ্গে করতে হয়। সৌরবর্ষের সঙ্গে জাকাতের হিসাব করা হলে বছরের হিসাব থেকে ১১দিন কমে যাবে। কারণ চন্দ্রবর্ষ সম্পূর্ণ হয় ৩৫৪ দিনে আর সৌরবর্ষ ৩৬৫ দিনে। সুতরাং যাদের উপর জাকাত ফরজ তাদের জন্য রামজান মাস জাকাত আদায়ের উত্তম সময়। 

জাকাত আদায়কারীর জন্য মহাপুরস্কারের ঘোষণা করে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর যারা সালাত আদায় করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও পরকালে ঈমান রাখে আমি তাদেরকে মহাপুরস্কার দিব।’ (সুরা নিসা: ১৬২)


বিজ্ঞাপন


তবে, জাকাত শুধু রমজান মাসে আদায় করার আমল—এ ধারণা সঠিক নয়। কারো এক চন্দ্রবছর শাবান মাসে সম্পূর্ণ হতে পারে। আবার কারো রজব মাসে। তারা শাবান ও রজবে জাকাতবর্ষ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাকাত আদায় করবেন। মূলত ফরজ জাকাত অবিলম্বে আদায় করা উচিত; যদিও বাধ্যতামূলক নয়। কেননা তা গরিবের হক। যত দ্রুত আদায় করা যায়, ততই শ্রেয়।

আরও পড়ুন
যেসব সম্পদের জাকাত দেওয়া ফরজ
যেসব সম্পদের জাকাত দিতে হবে না

কিন্তু কাউকে দেখা যায়, তাদের জাকাতবর্ষ রমজান মাসের আগে, এমনকি রমজানের ৪-৫ মাস আগে জাকাত ফরজ হয়েছে। এরপরও তারা জাকাত আদায় করে না; বরং রমজানের অপেক্ষা করতে থাকে। এমনটি করা উচিত নয়। যাদের জাকাতবর্ষ রমজানে পূর্ণ হবে— তারা রমজানেই আদায় করবেন। তবে, হ্যাঁ যদি কারো জাকাত রমজানের অল্প ক’দিন আগে ফরজ হয়, সেক্ষেত্রে তারা রমজানে সেটা আদায় করার অবকাশ আছে। অর্থাৎ রমজানে জাকাত দিলেও তাদের জাকাত আদায় হবে। এতে শরিয়তের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।

জাকাতের মাসয়ালা অনুযায়ী, কেউ চাইলে অগ্রিমও জাকাত দিতে পারেন। যেমন রমজানের পরের মাস শাওয়ালে কারো জাকাত ফরজ হবে, তিনি চাইলে তা রমজানেই আদায় করতে পারেন। তাতেও জাকাত আদায় হয়ে যাবে। যেহেতু রমজানে যেকোনো নেক আমলের সওয়াব বেশি, রমজানের ফজিলত লাভের জন্য জাকাত আগে-ভাগে দেওয়ায় ক্ষতি নেই, বরং তা উত্তম আমল হিসেবে গণ্য হবে। মূলত এ বিষয়টির দিকে লক্ষ্য রেখেই বেশি সওয়াব লাভের জন্য রমজানে (জাকাতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার আগে) জাকাত আদায়ে উদ্বুদ্ধ করেন আলেমরা। 

মানুষের উপকার হয়—এমন আমল রমজানে করতে পারলে বেশি সওয়াব। হাদিসে আছে, নবীজি (স.) রমজান মাসে কল্যাণবাহী বায়ুর চেয়ে অধিক দানশীল ছিলেন। (বুখারি: ০৬; মুসলিম: ২৩০৮; মুসনাদে আহমদ: ২৬১৬)

আরও পড়ুন: আপন বোনকে জাকাত দেওয়া যাবে?

অন্যদিকে, পবিত্র কোরআন ও হাদিসে জাকাত আদায় না করলে কঠিন শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং যারা সোনা ও রুপা জমা করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, আপনি তাদের বেদনাদায়ক আজাবের সুসংবাদ দিন, যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে, অতঃপর তা দিয়ে তাদের কপালে, পার্শ্বদেশে ও পিঠে সেঁক দেওয়া হবে। (আর বলা হবে) এটা তা-ই, যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ করো।’ (সুরা তাওবা: ৩৪-৩৫)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে ‘রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু সে এর জাকাত আদায় করেনি, কেয়ামতের দিন তার সম্পদকে টাক (বিষের তীব্রতার কারণে) মাথাবিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দিয়ে তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার মুখের দুই পাশ কামড়ে ধরে বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার জমাকৃত সম্পদ।’ (বুখারি: ১৪০৩)

কেউ জাকাতের বিধান অস্বীকার করলে সে মুসলিম হিসেবে গণ্য হবে না। তাকে অতিসত্বর তার ঈমান নবায়ন করে নিতে হবে। (ফাতহুল বারি: ৩/৩০৯)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সহিহ শুদ্ধভাবে জাকাত আদায় করার তাওফিক দান করুন। দান-সদকা করার তাওফিক দান করুন। সুন্দরভাবে সিয়াম পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন


News Hub