একতাই উত্থান আর বিভেদে পতন। স্বাধীনতার পর থেকে এই পর্যন্ত একতার পরিবর্তে ডিভাইড ও রুল পলিসির কারণে বাংলাদেশ তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি। দেশে নানা ধর্ম ও মত রয়েছে। নিজের মতাদর্শ অন্যের ওপর চাপিয়ে দিয়ে মতাদর্শিক সংঘাত বাঁধানোর কারণেই দেশ আগাচ্ছে না। এ অবস্থা উত্তরণে সব মতপার্থক্য অক্ষুণ্ণ রেখে সর্বজনীন বিষয়ে ঐক্য গড়ার আহ্বান জানিয়েছে ঐক্য পার্টি।
রোববার (১৬ মার্চ) রাজধানীর ফার্মগেইটস্থ বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির কার্যালয়ে ‘দেশ গঠনে সাংবাদিক ও পুলিশের ভূমিকা" শীর্ষক আলোচনা সভায় নেতারা এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
দলটির নেতারা অভিযোগ করে বলেন, অতীতে যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে দেশকে বিভক্ত করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের মতো নিজেদের আখের গুছিয়েছে। ফলে দেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি।
দলটির পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় সিন্ডিকেটসহ সব সেক্টরের সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়ার পাশাপাশি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে আগে নজর দেওয়াসহ ১৬ দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছে।
ঐক্য পার্টির পক্ষ থেকে দেশের সবাইকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন হওয়ার আহ্বানও জানানো হয়েছে।
১৬ দফা দাবি হলো-
বিজ্ঞাপন
১) চিকিৎসাসেবা জাতীয়করণ করতে হবে।
২) পুলিশকে রাজনীতিমুক্ত রেখে নিরপেক্ষতার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ নিশ্চিত করাসহ পুলিশ সংস্কার আইন প্রণয়ন করতে হবে। যাতে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা দ্রুততম সময়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ উন্নত দেশের মতো স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্ৰহণ করতে পারে।
৩) বিচার বিভাগের জবাবদিহিতা নিশ্চিতপূর্বক আলাদা মন্ত্রণালয় স্থাপন করে বিচার বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ দিতে হবে।
৪) অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষদের পুনর্বাসনসহ দেশকে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে মুক্ত করতে হবে।
৫) বিভাগীয় শহরগুলোকে পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।
৬) দেশের পর্যটন শিল্পকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করতে হবে।
৭) রাষ্ট্রের ৪র্থ স্তম্ভ খ্যাত সংবাদ মাধ্যম যাতে স্বাধীনভাবে বাক-স্বাধীনতায় ভূমিকা রাখতে পারে তার জন্য ভীতিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতসহ তাদের জীবন মান উন্নয়নের ব্যবস্থা করতে হবে।
৮) দেশকে ঋণমুক্ত করার লক্ষ্যে সব উপদেষ্টাদের বেতন-ভাতাদি অর্ধেক করতঃ অপরিকল্পিত প্রকল্প ব্যয় কমিয়ে আনতে হবে।
৯) প্রকৃত অপরাধী ব্যতিত সবাইকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে সব অপরাধে জিরো টলারেন্স দেখিয়ে দ্রুত বিচারকার্য সম্পন্ন করতে হবে।
১০) দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে ন্যাশনাল ইন্টিগ্রিটি কমিশন গঠন করতে হবে।
১১) দ্রব্য-মূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষি বিল্পব ঘটানোর লক্ষ্যে কৃষিখাত জাতীয়করণ করতে হবে।
১২) দেশ ও জনগণের স্বার্থে বিদেশের সাঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জরুরি কিন্তু যেসব দল/ব্যক্তি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের দ্বারস্থ হচ্ছে, তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে আইন পাস করতে হবে।
১৩) রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী সেনাবাহিনীর অনাকাঙ্খিত ব্যবহার রোধে দেশের সব স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করতে হবে।
১৪) পরীক্ষিত সৎ পেশাজীবী ব্যক্তিদের সমন্বয়ে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে। তা না হলে সংস্কারে তেমন কাজ হবে না। পুলিশ ও বিচার বিভাগ ব্যতিত স্বাধীন তদন্ত কমিশন সব অপরাধে তদন্ত করবে, যার আলোকে বিচার কাজ সম্পন্ন হবে।
১৫) দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শিল্পকারখানা স্থাপনে আকৃষ্ট করতে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
১৬) গণপরিবহন সেবা জাতীয়করণ করতে হবে।
বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির ভাইস-চেয়ারম্যান ও মুখপাত্র মুহাম্মদ আবদুর রহীম চৌধুরীর সঞ্চালনায় এবং পার্টির ভাইস-চেয়ারম্যান ডা. ওয়ালিউর রহমান ডাবলুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পার্টির চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) আবু ইউসুফ যোবায়ের উল্লাহ, ভাইস-চেয়ারম্যান অ্যাড. শেখ লালন আহমেদ, শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, মেজর জেনারেল আমসা আমিন, কর্ণেল মুহাম্মদ জাকারিয়া হোসেন, লে. কর্নেল হাসিনুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার থোয়াই চিং মং শাক, অ্যাডভোকেট প্রতিভা বাকচীসহ অনেকে।
বিইউ/ইএ