ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সংগঠকদের উদ্যোগে আগামী মাসে অর্থাৎ এপ্রিলে আরেকটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম আসছে। যা ভবিষ্যতে রূপ নেবে রাজনৈতিক দলে। ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতারা এই উদ্যোগে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
রোববার (১৬ মার্চ) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে প্ল্যাটফর্মের প্রধান উদ্যোক্তা ও জুলাই বিপ্লবের সংগঠক এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জোনায়েদ ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেন।
বিজ্ঞাপন
ঘোষণাপত্রে যুক্ত করা গ্রাফিতিতে দু’জন তরুণীসহ ছয়জনের মুখচ্ছবি রয়েছে। নারীদের একজন হিজাব পরা, অন্যজনের মাথা খোলা। তরুণদের একজন দাড়ি-টুপি জোব্বা পরা, একজন আদিবাসী। আছে শ্রমিকের মুখচ্ছবিও। ধর্মভিত্তিক নয়, এর মাধ্যমে মধ্যপন্থী দল গঠনের আভাস দিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
প্ল্যাটফর্মটির প্রধান উদ্যোক্তা আলী আহসান জোনায়েদের পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘আসসালামু আলাইকুম।
৩৬শে জুলাই ফতহে গণভবনের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন যুগের সূচনা হলেও, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয়া বহু মানুষের কাছে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। পিলখানা, শাপলা ও জুলাই গণহত্যার মতো ভয়াবহ অপরাধের বিচার, ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণ, দুর্নীতিমুক্ত সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামো নির্মাণ, ধর্মবিদ্বেষ ও ইসলামোফোবিয়ামুক্ত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ গঠন, ফ্যাসিবাদী কাঠামোর সম্পূর্ণ বিলোপ এবং আধিপত্যবাদের বিপক্ষে কার্যকর অবস্থান- এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আজ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে গৌণ হয়ে পড়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের শহিদ ও আহত যোদ্ধাদের স্বীকৃতি ও সম্মান দেয়ার কাজ এখনও অসম্পূর্ণ রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এই পরিস্থিতিতে, আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের সব রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি। এর মাধ্যমে আমরা গণঅভ্যুত্থানের দাবিগুলো প্রকৃতই বাস্তবায়ন করতে চাই।
৩৬শে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশে যে বিপ্লবের সূচনা হয়েছে, তা পূর্ণতা দেয়ার লক্ষ্যে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সমাজের সর্বস্তরে যোগ্য ও নৈতিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা, সামাজিক সুবিচার ও মানবিক মর্যাদা নিশ্চিতকরণ, সামাজিক নিরাপত্তা বিধান, বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার মূলোৎপাটন এবং আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারলে এই বিপ্লব পরিপূর্ণতা পাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
আমরা বিশ্বাস করি, নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সামাজিক চুক্তির ভিত্তিতে বাংলাদেশ পুনর্গঠন সম্ভব। অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশ পুনর্গঠনের এই উদ্যোগে আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানাই। আসুন, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ গঠনের এই সংগ্রামে শামিল হই।’
এদিকে পোস্টের মন্তব্যের ঘরে একটি গুগল ফর্ম সংযুক্ত করা হয়েছে। যেখানে নাম, পেশা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম, প্ল্যাটফর্মের হয়ে কোন জেলায় কাজ করতে আগ্রহী এমন নানা বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। সর্বস্তরের মানুষকে ফর্মটি পূরণ করে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির নেতারা সামনের থাকলেও নেতৃত্বে ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ এবং বিভিন্ন বাম সংগঠনের নেতারাও ছিলেন। এছাড়া ছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শেখ হাসিনা আমলের শেষ দিকে নিষিদ্ধ হওয়া শিবির নেতারা সাংগঠনিক পরিচয়ে ছিলেন না আন্দোলনে।
অভ্যুত্থানের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের সাবেক সভাপতি আলী আহসান জুনায়েদ, রাফে সালমান রিফাত, শরফুদ্দিনসহ অন্তত ৩০ নেতা যোগ দেন জানাকে।
জানা গেছে, আলী আহসান জুনায়েদকে এনসিপির সদস্য সচিব পদে চেয়েছিলেন তারা। ছাত্রশক্তি, ছাত্র অধিকার, ছাত্রলীগের পক্ষত্যাগী এবং বাম সংগঠন থেকে আসা নেতারাও নিজ নিজ বলয় থেকে শীর্ষ পদ চেয়েছিলেন। এ বিরোধে সাবেক শিবির নেতারা এনসিপিতে যোগ দেননি।
যোগ না দেওয়া নেতাদের ভাষ্য, আওয়ামী লীগ আমলে শিবির হত্যাকে যেভাবে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল, নতুন দলেও শুধু অতীতে শিবির সংশ্লিষ্টতার কারণে নেতৃত্বে আসতে দেওয়া হয়নি। ট্যাগিংয়ের রাজনীতি অব্যাহত রাখা হয়েছে।
/এএস