শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

হোটেল-রেস্তোরাঁয় বাহারি ইফতারের প্রস্তুতি, চলছে বুকিং

ওয়াজেদ হীরা
প্রকাশিত: ২০ মার্চ ২০২৩, ০৯:৩১ পিএম

শেয়ার করুন:

হোটেল-রেস্তোরাঁয় বাহারি ইফতারের প্রস্তুতি, চলছে বুকিং

সপ্তাহের শেষে শুরু হচ্ছে মুসলমানদের বহুল প্রতীক্ষিত ইবাদতের মাস রমজান। আর রোজার অন্যতম অনুসঙ্গ হচ্ছে ইফতার। সারাদিন রোজা রেখে অনেকেই স্বাস্থ্যসম্মত ইফতারের খোঁজ করেন। আর সেই বাহারি ইফতারের পসরা সাজাচ্ছে রাজধানীর বিভিন্নি হোটেল-রেস্তোরাঁ। নেওয়া হচ্ছে ইফতার পার্টির অগ্রিম বুকিং। কোনো কোনো হোটেলে বুফে ইফতারের আয়োজন থাকছে। সেখানে ক্রেতা তার পছন্দ মতো ইফতার করতে পারবেন। থাকবে শতাধিক আইটেম।

করোনা মহামারির ধাক্কায় ২০২০ ও ২০২১ সালে ইফতার পার্টি ছিল প্রায় বন্ধ। গত বছর করোনার প্রকোপ থাকলেও বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল থাকায় ইফতার আয়োজন ছিল সীমিত পর্যায়ে। তবে এবার করোনার কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় পুরনো আমেজে ফিরবে ইফতার আয়োজন। হোটেল-রেস্তোরাঁ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ ইফতার পার্টি করবে। সেই সাথে পরিবার-স্বজন নিয়ে পছন্দের রেস্টুরেন্টে গিয়ে ইফতারের আয়োজনও হবে।

রাজধানীর বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁ ঘুরে দেখা গেছে, পবিত্র রমজান উপলক্ষে ইতোমধ্যেই হোটেল-রেস্তোরাঁ সাজানো হচ্ছে। কোথাও কোথাও ব্যানার ফেস্টুন দিয়ে লেখা হয়েছে 'ইফতার বুকিং চলছে।' গ্রাহকদের সুবিধার্থে এসব হোটেল-রেস্তোরাঁয় রাখা হয়েছে ইফতারের নানা প্যাকেজ। ক্রেতার নজর কাড়তে ইফতার সামগ্রী নিয়ে বিশেষ প্যাকেজ ও ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে।

আরও পড়ুন: লাগামহীন ফলের বাজার

গতবারের মতো এবারও প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল আয়োজন থাকছে বুফে ইফতারের। পবিত্র এই মাস উদযাপন উপলক্ষে বর্ণালী সাজে সাজছে পাঁচতারকামানের হোটেলটি।

সোনারগাঁও হোটেলের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাফিউজ্জামান ঢাকা মেইলকে বলেন, আমাদের রেস্টুরেন্ট ক্যাফে বাজারে থাকবে বুফে ইফতারের বিশেষ আয়োজন। যেখানে নির্দিষ্ট ব্যাংক কার্ডের বিপরীতে একটি কিনলেই পাচ্ছেন আরেকটি বুফে ইফতার সম্পূর্ণ ফ্রি। প্রতিদিনই থাকবে শতাধিক বাহারি রকম দেশি-বিদেশি খাবারের বুফে ইফতার, যা পাওয়া যাবে জনপ্রতি পাঁচ হাজার ৫০০ টাকায়। তিনি আরও বলেন, বুফে ইফতারের পাশাপাশি হোটেলের লবিতে আকর্ষণীয় ইফতার বক্সের ব্যাবস্থা রয়েছে। বক্সের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র দুই হাজার ৯০০ টাকা থেকে চার হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে। যা কি না বাহারি খাবারের সমন্বয়ে পাওয়া যাবে। এছাড়াও প্রতি বক্স সোনারগাঁও স্পেশাল ফ্যামিলি ইফতার টেকঅ্যাওয়ে বক্স পাওয়া যাবে ১২ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: রমজান উপলক্ষে আমিরাতে ১০ হাজার পণ্যে মূল্যহ্রাস

হোটেলের বিশেষ আইটেমের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রথম রমজান থেকে পাওয়া যাবে সবার পছন্দের সোনারগাঁও হোটেলের ঐতিহ্যবাহী হালিম এবং জিলাপি। আধা কেজি এবং এক কেজি ওজনে পাওয়া যাবে সোনারগাঁও স্পেশাল জিলাপি, যার নির্ধারিত মূল্য যথাক্রমে ১৫০০ টাকা এবং ২৬৫০ টাকা। শাহী মাটন হালিম পাওয়া যাবে ২৫০০ টাকা এবং ৩৯৫০ টাকায়। এই হোটেলে যারা ইফতার পার্টি করবেন তার শতভাগই ইতোমধ্যেই বুকিং হয়ে গেছে বলেও জানান তিনি।

RR1

শতাধিক মুখরোচক খাবার নিয়ে ইফতারের পসরা সাজাচ্ছে হোটেল হলিডে ইন। হোটেলটির ডিরেক্টর অব অপারেশন সাহিদুস সাদিক তালুকদার ঢাকা মেইলকে বলেন, প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার জনপ্রতি সাত হাজার টাকায় বুফে ইফতার করতে পারবেন। আর বাকি দিনগুলো ছয় হাজার ৫০০ টাকায় বুফে ইফতার নিতে পারবেন। সেহেরির মূল্য ধরা হয়েছে চার হাজার টাকা। নির্দিষ্ট কিছু ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডধারীদের জন্য বিজনেস পার্টনার হিসেবে একটি নিলে একটি ফ্রি থাকছে।

আরও পড়ুন: রমজানে মূল্যবৃদ্ধির ফন্দি, ইসলামের হুঁশিয়ারি

হলি ডে ইনের কর্মকর্তারা জানান, যারা এখানে আসবেন কিছু বিশেষত্ব পাবেন, নতুনত্ব পাবেন। ১২৫ আইটেম থাকবে। এর মধ্যে 'ওজি'টা আমাদের স্টেশাল আইটেম।

মার্কেটিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসাইন ঢাকা মেইলকে বলেন, আমাদের ইফতার বুকিং এখনো ওইভাবে পাইনি। তবে আমরা আশা করছি।

বিভিন্ন মজাদার ও বাহারি আইটেম নিয়ে ইফতারের পসরা সাজাচ্ছে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল। ল্যাম্ব ট্যাগিন, কুজি উইথ ওরিয়েন্টাল রাইস, চিকেন শিশ তাউক, বিফ তেহারি, মাটন রোগান জোশ এবং চিকেন ট্যাংরি কাবাব থাকছে। আরবি ফেস্টের পাশাপাশি রয়েছে ইরানি ফিশ কাবাব, মাটন গালুটি কাবাব।

হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সহকারী কমিউনিকেশন ম্যানেজার সাইদা ফাইসা ফারিয়া ঢাকা মেইলকে জানিয়েছেন, আট হাজার টাকায় এবং সাত হাজার টাকা দুটি প্যাকেজ রয়েছে হোটেলটিতে। প্রতি শুক্র এবং শনিবার নির্দিষ্ট ব্যাংকের গ্রাহকরা 'বাই ওয়ান গেট ওয়ান' ওফার পাবেন।

এছাড়া বক্স ইফতার মিলবে হোটেলে যেখানে দুই জনের জন্য পাঁচ হাজার, চারজনের জন্য নয় হাজার এবং ছয়জনের জন্য ১২ হাজার ৫০০ টাকায়। এছাড়া চাইলে যে কেউ বিশেষ ইফতার মেনু দিয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টালে করপোরেট বা সামাজিক ইফতার ব্য‌বস্থা থাকছে বলেও জানান প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা সাইদা ফাইসা ফারিয়া।

আরও পড়ুন: রমজানে মূল্যবৃদ্ধি, রোজাদার যেভাবে প্রতিবাদ করবেন

রাজধানীর অন্যান্য হোটেল রেস্টুরেস্টে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাদে বৈচিত্র্য আনতে হোটেলগুলো বিভিন্ন দেশের রেসিপি অনুসারে ইফতারসামগ্রী তৈরি করছে। এসব হোটেলে ধনাঢ্য রোজাদাররা তাদের ছেলেমেয়ে, পরিবার-পরিজন নিয়ে ইফতার করতে আসেন। ঢাকায় বসবাসরত বিদেশি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সংস্থা এবং দূতাবাসের কূটনীতিকরাও আসেন ইফতার করতে। বড় বড় ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসায়ী অংশীদারদের নিয়ে আসেন তারকা হোটেলগুলোতে। আপ্যায়নের সঙ্গে চলে ব্যবসায়িক আলাপ-আলোচনাও। গোটা রমজান মাস থাকবে এসব হোটেলে ইফতারের জমজমাট ও নজরকাড়া আয়োজন।

পাঁচতারকা হোটেলে ইফতার করতে হলে অবশ্যই ইফতারের এক-দেড় ঘণ্টা আগে অগ্রিম বুকিং দিতে হবে। তা না হলে বসার টেবিল পাওয়া যায় না। দ্য ওয়েস্টিন, র‌্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেল, ঢাকা রিজেন্সি, লা মেরিডিয়ান, হোটেল আমারি, সারিনা, প্লাটিনামের ইফতারে পদের সংখ্যা কমপক্ষে ৫০ থেকে দেড় শতাধিক।

রমজানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি সামাজিক বা ব্যবসায়িক কারণে প্রচুর ইফতার পার্টি হয়ে থাকে। ইতোমধ্যেই অনেক স্থানে বুকিং প্রায় শেষ কোথাও এখনো চলছে। আবার অনেক রেস্টুরেস্ট হোটেলে এখনো বুকিং সাড়া পড়েনি।

রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকায় জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট 'সেগুন'। সোমবার (২০ মার্চ) পর্যন্ত ইফতার বুকিং হয়েছে পাঁচটি। রেস্টুরেন্টের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. জলিল ঢাকা মেইলকে বলেন, আমাদের এখন পর্যন্ত পাঁচটি ইফতারের বুকিং আছে। সবগুলো ১০ রোজার মধ্যেই। আশা করছি রোজা শুরু হলে আরও বুকিং অর্ডার আসবে।

সেগুন থেকে হাঁটা দূরত্বে আরেক হোটেল রয়েল ইন। হোটেলের ভেতরে বাহিরে টাঙানে হয়েছে ইফতার বুকিংয়ের ব্যানার ফেস্টুন। হোটেলের নিজাম উদ্দিন নামের ডেস্কে থাকা একজন সোমবার (২০ মার্চ) বেরা ১১টার দিকে জানান, ইফতার পার্টি বুকিং হয়েছে। প্রতিদিনই লোকজন আসছে খোঁজ নিতে।

RR22

ঐতিহ্যবাহী পুরান ঢাকার সুস্বাদু ও ব্যতিক্রমধর্মী ইফতারের সমারোহ নিয়ে সপ্তমবারের ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা আয়োজন করতে যাচ্ছে আইসিসিবি পুরান ঢাকা ইফতার বাজার ২০২৩। আয়োজকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মেলা চলবে ১ রমজান থেকে ২৫ রমজান পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে। এখানেও মিলবে বাহারি ইফতার। ইতোমধ্যেই নামিদামি হোটেল রেস্টুরেন্টের পক্ষে মেলায় বুকিং করা হয়েছে। যারা আয়োজন করছেন তাদের একজন মেহেদি হাসান বলেন, আমাদের ৩২টি স্টল থাকবে। একটি বাকি আছে, বাকিগুলো বুকিং হয়ে গেছে।

রোজায় আফতাবনগরের সিরাজ কনভেনশন সেন্টার এবং লেক গ্রিন লাউঞ্জ অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট নিয়ে আসছে ইফতার বাজার, ইফতার প্লেটার, এবং ইফতার কাম ডিনার ব্যুফে। ইতোমধ্যে ইফতার পার্টি প্রি বুকিং নিচ্ছে তারাও। ধানমন্ডি, কারওয়ান বাজার এলাকায় ক্যাফে রিও, থাট্রি থ্রি, ফুড অ্যান্ড মোড়, মাজেদা রেস্টুরেন্ট, কস্তুরি, স্টার কাবাবসহ বিভিন্ন রেস্টুরেস্টে জানা গেছে, বাহারি আইটেম থাকবে ইফতারে। এদের কোনো কোনো রেস্টুরেন্টে ১০ থেকে ১৫ দিনের জন্য বুকিংও আছে। বসুন্ধরা শপিং মলে একাধিক রেস্টুরেন্টে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোজায় ইফতারের আগে শপিং মলের লোকজন ইফতার কিনে যেখানে স্থান পায় সেখানেই বসে যান। তবে ইফতারে হালকা আইটেম এবং ভারী খাবারের আইটেম উভয় ব্যবস্থা করা হয়।

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি ওসমান গণির ঢাকা মেইলকে বলেন, ইফতার আইটেমে এবার দাম বাড়বে কিছু জিনিসে। তবে দাম বেশি বাড়বে ভালো রেস্টুরেন্টে। কারণ কোয়ালিটির খাবার। আর যারা ছোট খাট হোটেল বা রেস্টুরেন্টে অলিগলিতে ইফতার নিয়ে বসবে তাদের অনেক লোকসান হয়। কারণ প্রতিযোগিতা থাকে। জায়গার ওপরও দাম নির্ভর করে। নোয়াখালী হোটেলে যে দাম সেটি নিশ্চয় বেইলি রোডে হবে না।

আরও পড়ুন: ‘ইফতারে শতভাগ নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে উদাহরণ সৃষ্টি করা হবে’

রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি আরও বলেন, গতবার আমার রেস্টুরেন্টে পাঁচ টাকায় পেঁয়াজু বিক্রি করেছে লোকসানে। এবার দাম বাড়িয়ে আট টাকা করেছি। কত লোকসান দেবে বলেন।

ডব্লিউএইচ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর