সোমবার, ৬ মে, ২০২৪, ঢাকা

রমজানে মূল্যবৃদ্ধির ফন্দি, ইসলামের হুঁশিয়ারি

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ মার্চ ২০২৩, ০১:০৫ পিএম

শেয়ার করুন:

রমজানে মূল্যবৃদ্ধির ফন্দি, ইসলামের হুঁশিয়ারি

পবিত্র রমজান আত্মশুদ্ধি, নৈতিক প্রশিক্ষণ ও আত্মগঠনের মাস। মুসলমানদের জীবনকে পরিশুদ্ধ করার জন্য প্রতিবছর এই মাস আগমন করে। এই মাসকে বলা হয় তাকওয়া অর্জনের মাস। পবিত্র রমজান শুরু হতে আর অল্প কয়েকদিন বাকি। এখন থেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী রমজান মাসকেই  টাকার পাহাড় গড়ার সুযোগ হিসেবে বেছে নিয়েছে।

অথচ অবৈধ উপায়ে, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা ইসলামে নিষেধ। নবী কারিম (স.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন ব্যবসায়ীরা মহা অপরাধী হিসেবে উত্থিত হবে। তবে যারা আল্লাহকে ভয় করবে, নেকভাবে সততা ও ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে ব্যবসা করবে তারা ব্যতীত’ (তিরমিজি: ১২১০)

অধিক মুনাফার জন্য যারা পণ্য মজুদ করে তারা শুধু পরকালে নয়, ইহকালেও আল্লাহর শাস্তির মুখোমুখি হবে বলে হাদিসে সতর্ক করা হয়েছে। মূলত ভোক্তাদের জিম্মি করে বিত্তশালী হওয়ার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই; বরং ক্ষতি আর ক্ষতি। অবৈধ উপার্জন একদিকে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ, অন্যদিকে দুনিয়ার জীবনও অভিশপ্ত। উপরন্তু উপার্জন হারাম হওয়ায় তার নামাজ, রোজা, হজসহ কোনো নেক আমলই কবুল হবে না। আল্লাহ তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিন খাদ্য মজুদ রাখল সে আল্লাহর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল, আল্লাহ দূরে গেলেন তার কাছ থেকে।’ (মুসনাদে আহমদ: ৮/৪৮১)

আরেক হাদিসে মহানবী (স.) বলেন, ‘কেউ যদি খাদ্য গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, আল্লাহ তাকে দুরারোগ্য ব্যাধি ও দারিদ্র্য দ্বারা শাস্তি দেন।’ (ইবনে মাজাহ: ২২৩৮) 

আমাদের দেশে রমজান মাস আসলেই অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট আর কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর প্রবণতা খুব বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে ইফতার ও সেহরিতে ব্যবহৃত খাদ্য সামগ্রির দাম বাড়ানোর একটি প্রতিযোগিতা প্রতিবছরের স্বাভাবিক ঘটনা। ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ছাড়াও নির্ধারিত আয়ের মানুষের জীবনও কষ্টকর হয়ে পড়ে। 

অথচ সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশই রমজান উপলক্ষে দ্রব্যমূল্যের সহজলভ্যতার জন্য প্রায় ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়ে থাকে। বিষয়টি দুঃখজনকভাবে আমাদের দেশে ব্যতিক্রম। ভুলে গেলে চলবে না- রমজান মাসকে টার্গেট করে রোজাদারকে কষ্ট দেওয়া ইসলামে মহাপাপ। এমন প্রবণতা রমজানের শিক্ষার পরিপন্থী।

 অধিক লাভের আশায় মালামাল মজুদ করে চরম দামে বিক্রয়কারীর ওপর মহানবীর (স.) অভিসম্পাত। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘ন্যায্যমূল্যে জিনিস সরবরাহকারী রিজিকপ্রাপ্ত আর মজুদ করে সংকট সৃষ্টিকারী অভিশপ্ত’। (বুখারি: ৩৭১২)

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.)-এর যুগে একবার দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেল। লোকেরা বললো, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি আমাদের জন্য দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দিন। রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, মূলত আল্লাহ তাআলাই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণকারী, রিজিক সঙ্কীর্ণকর্তা, প্রশস্তকর্তা ও রিজিকদাতা। আমি আমার রবের সঙ্গে এভাবে সাক্ষাতের আশা রাখি যে, তোমাদের কারো যেন আমার বিরুদ্ধে রক্ত বা সম্পদ, কোনো বিষয়ে কোনোরূপ দাবি না থাকে। (তিরমিজি: ২৪৫)

রাসুলুল্লাহ (স.) আরও ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মূল্যবৃদ্ধির অসদুদ্দেশ্যে মুসলমানদের লেনদেনে হস্তক্ষেপ করে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাকে আগুনের পাহাড়ে উঠিয়ে শাস্তি দেবেন। (তাবারানি: ২১০)

অন্য এক হাদিসে এসেছে, ‘কোনো শহরবাসী কোনো গ্রামবাসীর পক্ষ হয়ে বিক্রি করবে না। মানুষকে তাদের স্বাভাবিক অবস্থায় ছেড়ে দাও, যেন আল্লাহ তাদের একের মাধ্যমে অন্যের রিজিকের ব্যবস্থা করেন। (তিরমিজি: ২৬১৮)

নবীজির শিক্ষা কতইনা সুন্দর! হাদিসের এই নির্দেশনা মানলে কখনো অস্বাভাবিক দামবৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি হয় না। সিন্ডিকেট তৈরির সকল পথ বন্ধ হয়ে যায়।

 আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (স.) বলেন, শহরগামী কাফেলার লোকদের থেকে আগে আগে পণ্য কিনে নেওয়ার জন্য শহরের বাইরে গিয়ে ওদের সঙ্গে মিলিত হওয়া যাবে না। কোনো ব্যক্তি এরূপ করলে, কাফেলার লোকেরা শহরে আসার পর এখতিয়ার থাকবে যে, বিক্রয় চুক্তিকে বহাল রাখবে নাকি রহিত করবে। (মুসলিম: ১৯৪১)

লাফিয়ে দামবৃদ্ধির কষ্ট থেকে মানুষকে এভাবে রক্ষা করেছে ইসলাম। এই শিক্ষা আমাদের গ্রহণ করতে হবে। রমজানের পবিত্রতা বিরোধী সব উপায়-উপকরণের লাগাম টেনে ধরতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। অযৌক্তিকভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ চিহ্নিত করে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। খাদ্যে ভেজাল, মজুদদারি, মুনাফাখোরি ও প্রতারণামূলক সব কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। 

আত্মশুদ্ধি অর্জন, নৈতিক উন্নত চরিত্র গঠন ও রমজানের সুফল সবাই যেন ভোগ করতে পারেন সেজন্য সরকার, ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে দ্রব্যমূল্যরোধে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর