সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

গ্রীন মডেল টাউনে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, আহত ৪

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৫৬ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

রাজধানীর মুগদা এলাকায় আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের গ্রীন মডেল টাউনের একটি আবাসিক ভবনে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ভবনটির দুই ফ্ল্যাট মালিকসহ চারজন আহত হয়েছেন। তবে একজনের জখমের অবস্থা গুরুতর।

রোববার (০৬ এপ্রিল) রাত তিনটা থেকে চারটা পর্যন্ত সেই এলাকার ডি-ব্লকের তিন নম্বর রোডের ১৭ নম্বর বাসায় এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। 


বিজ্ঞাপন


সোমবার (০৭ এপ্রিল) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুগদা থানার ওসি মো. সাজেদুর রহমান। 

এ ঘটনায় আহতরা হলেন- ফ্ল্যাট মালিক হুমায়ুন, তার স্ত্রী শাহীনুর আক্তার, পাশের ফ্লাটের আব্দুল মান্নান ও তার ছেলে হাসান। এ ঘটনার পরপরই গুরুতর আহত হুমায়ুনসহ চারজনকে উদ্ধার করে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার মধ্যে হুমায়ুনের অবস্থা গুরুতর। তিনি এখনো চিকিৎসার দিন আছেন।

হুমায়ুন ও আব্দুল মানান ভবনটির ৫ম তলায় থাকেন। ভবনটি আটতলা। তবে পাঁচতলা পর্যন্ত কাজ করে বাড়ির মালিকরা সেখানে বসবাস করেন। মালিকরা সকলে বিভিন্ন ব্যাংকে চাকরি করেন। তারা সকলে মিলে জায়গা কিনে বাড়িটি করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। 

ওসি সাজেদুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, রাত তিনটা থেকে চারটার মধ্যে ডাকাতিটা হয়। ডাকাতরা প্রায় ১৫-১৭ জনের মতো ছিল। তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এসেছিল। দুই ফ্ল্যাটের মালিকসহ সকলকে জিম্মি করে বাসায় থাকা টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। যাওয়ার আগে বাড়ির মালিক হুমায়ন ও মান্নান তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে চারজনকে তারা মারধর করে। তবে হুমায়নকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করায় গুরুতর আহত হন। হুমায়ুন এখন মুগদা হাসপাতালে  চিকিৎসাধীন আছেন। এছাড়াও বাকিরা চিকিৎসা নিয়েছে। এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। তবে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।


বিজ্ঞাপন


‘যারা ডাকাতি করতে এসেছিল তাদের সবার বয়স ১৫ থেকে ৪০ এর মধ্যে। তবে মুখ বাধা ছিল। ফলে কাউকে চিনতে পারিনি ফ্ল্যাটগুলোর লোকজন,’ বলেন তিনি।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি আরও জানান, ঘটনার সময় বিষয়টি গ্রীন মডেল টাউনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা জানতে পারলেও তারা তাদের মধ্যে মেসেজ চালাচালি করে। সবশেষে তারা জরুরি সেবা ট্রিপল লাইনে কল দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছে। এরপর পুলিশ গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেছে। ঘটনার সময় সাথে সাথে বিষয়টি পুলিশকে জানালে অবশ্যই সেখানে ডাকাতদের আটক করা সম্ভব হতো কারণ রাতের ডিউটিতে পুলিশের পাশের এলাকায় ডিউটি ছিল বলে ধারণা তার। 

পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনার পর আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। বাড়িটি নির্জন এলাকায়। আশপাশে তেমন কোনো বাড়ি নেই। ফলে সিসি ফুটেজ পাওয়া সম্ভব হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, বাড়িটির দ্বিতীয় তলায় অসম্পূর্ণ কাজ হওয়ায় সেই তলা দিয়ে ঢুকে তারা নিচতলার গেট কেটেছে। এরপর সকলে ঢুকে বাড়ির লোকজনকে জিম্মি করে ডাকাতি করেছে। তবে এই ঘটনায় পুলিশসহ আরও ৩ সংস্থা যৌথভাবে এই ডাকাতের ঘটনা তদন্ত করছে। খুব শিগগিরই জড়িতদের শনাক্ত এবং গ্রেফতার করতে পারবে বলে আশাবাদী পুলিশ। 

সোসাইটির লোকজন জানিয়েছে, ডাকাতরা প্রথমে আটতলার বাসার দ্বিতীয় তলার বয়েটের ফাঁকা জায়গা দিয়ে ঢুকে পড়ে। পরে তারা নিচতলায় নেমে তালা কেটে বাকিদের ঢুকিয়ে তৃতীয় তলায় যায়। সেখানে পূর্ব পাশে মাহবুব এবং পশ্চিম পাশে সাইফুল্লাহর ফ্ল্যাটে ডাকাতি করে। তার আগে তারা এই দুই পরিবারকে জিম্মি করে বেঁধে ফেলে। পরে স্বর্ণালংকার টাকা পয়সা নিয়ে পঞ্চম তলায় চলে যায়। সেখানে পূর্ব পাশে আব্দুল মান্নান এবং পশ্চিম পাশে হুমায়ুনের ফ্ল্যাটে তাদেরকেও একই কায়দায় বেঁধে ফেলে ডাকাতি করে। তবে পঞ্চম তলায় হুমায়ূন এবং মান্নান ছাড়াও আরও দুইজন আহত হয়েছেন। ডাকাতরা তাদের দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারধর করেছে। এতে হুমায়ুন ও তার স্ত্রীর মাথা ফেটে গেছে। ঢাকার দলের সদস্যরা চার ফ্ল্যাট থেকে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা এবং পাঁচ থেকে ছয় ভরি স্বর্ণ নিয়ে পালিয়ে গেছে। 

গ্রীন মডেল টাউন প্লট ফ্ল্যাট ওনার্স ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক এজাজ খান বলেন, সোসাইটির লোকজন আমাকে প্রথমে কল দিয়েছিল। কিন্তু রাতে আমার ফোন বন্ধ পাওয়ায় তারা সরাসরি বাসায় এসে আমাকে ডেকে তুলে। এরপর আমি ট্রিপল লাইনে কল দেই। পরে পুলিশ আসে। 

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনা এখন পর্যন্ত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তবে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। আমরা পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছি। এ ঘটনার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ, ডিবি, সিআইডি ও পিবিআই এর টিম এসেছিল। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেছে। 

এমআইকে/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন