পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে প্রায় জনশূন্য রাজধানী ঢাকা। কর্মব্যস্ত এই শহরের অধিকাংশ মানুষ গ্রামে চলে গেছেন— ঈদ উদযাপন করতে। ফলে দোকানপাট, বাজার, এবং বিশেষ করে রেস্টুরেন্টগুলো অধিকাংশই বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন ঢাকায় রয়ে যাওয়া ব্যাচেলরদের জন্য, যারা প্রতিদিনের খাবারের জন্য বাসার কাজের বুয়া, চুক্তিভিত্তিক খাবার অথবা রেস্টুরেন্টের ওপর নির্ভরশীল।
রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকায় ব্যাচেলরদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা, হয়ে পড়ে অত্যন্ত কঠিন। যাদের বাসায় রান্নার সুবিধা নেই কিংবা যারা নিয়মিত বাইরের খাবারের ওপর নির্ভর করেন, তারা একপ্রকার অনাহার বা অর্ধাহারে দিন কাটাতে বাধ্য হন। স্থানীয় মুদি দোকান বা সুপার শপগুলো খোলা থাকলেও, সেখানে প্যাকেটজাত খাবারের বাইরে তেমন কিছু পাওয়া যায় না। ফলে অনেকেই শুকনো খাবার বা নুডলসেই সারছেন নিজেদের আহার।
বিজ্ঞাপন
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার ঢাকার পল্টন, মতিঝিল, বাড্ডা এলাকায় কোনো রেস্টুরেন্ট চালু ছিল না। মহল্লার অলিগলির রেস্টুরেন্টগুলোও বন্ধ ছিল। দু-একটি রেস্টুরেন্ট খোলা থাকলেও, সেখানে পর্যাপ্ত খাবার ছিল না, ফলে খাবারের জন্য খুঁজতে খুঁজতে ঢাকায় থাকা ব্যাচেলরদের দুর্ভোগ বেড়ে যায়।
রফিকুল ইসলাম, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরিত এই ব্যক্তি বলেন, ‘আমি একটি মেসে থাকি। প্রতিদিন দুপুরে বাইরে খাই, রাতে খাবার আসে। ঈদের সময় সব রেস্টুরেন্ট বন্ধ, অনেক খুঁজে খুঁজে দূরে একটা রেস্টুরেন্ট পেলাম। আবার রাতের খাবারের কী হবে, তা নিয়ে চিন্তা করতে হয়। পুরো ঈদের সময়টা এভাবেই কাটাতে হবে, এটা বেশ কষ্টকর।’
ঈদের ছুটিতেও যারা বাড়ি যাননি, বা যেতে পারেননি, তাদের অবস্থাও প্রায় একই। ঢাকায় মেস বা ভাড়া বাসায় থাকা শিক্ষার্থীরা রান্না করতে পারেন না, এবং ঈদের ছুটিতে তাদের বন্ধু-সহপাঠীরা অধিকাংশই গ্রামে চলে যান। ফলে খাবারের অভাবে তাদের সময়টা হয়ে ওঠে অত্যন্ত দুর্বিষহ। অনেকেই বন্ধুদের বাসায় গিয়ে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করেন, আবার কেউ কেউ ফাস্টফুডের ওপর নির্ভর করেন, কিন্তু পুরো ছুটির সময় কাটানো একেবারেই কষ্টকর হয়ে পড়ে।
বিজ্ঞাপন
বুয়া না আসা মেসে থাকা ব্যাচেলরদের জন্য আরও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। সাধারণ সময়ে মেসের কাজের লোকেরা রান্না, বাসন ধোয়া, ঘর পরিষ্কারের কাজগুলো করলেও, ঈদের ছুটিতে তারা গ্রামে চলে যান। ফলে মেসে থাকা মানুষেরা নিজেদের কাজ করতে হয়, যা অনেকের জন্য কষ্টকর হয়ে যায়। যারা রান্না করতে জানেন না, তারা একদমই খাবার বানাতে পারেন না, আবার অনেকেই বাধ্য হয়ে শুকনো খাবার খেয়ে দিন পার করেন।
ঢাকায় ঈদ করা শিক্ষার্থী নোবেল বলেন, ‘আজকে দু-একটা রেস্টুরেন্ট খোলার খবর পেলাম। কিন্তু গত দুই দিন সব রেস্টুরেন্ট বন্ধ ছিল। বুয়া তো ঈদের আগেই চলে গিয়েছিল। অনেক সমস্যা হয়ে গেছে।’
এছাড়া গৃহস্থালীর কাজের লোকেরা ছুটিতে চলে যাওয়ায় শুধু ব্যাচেলরদের নয়, অনেক পরিবারেও ভোগান্তি বাড়ে। বিশেষ করে— যারা রান্না করতে পারেন না বা সময়ের অভাবে রান্না করতে চান না, তাদের জন্য এই সময়টা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। বাসার গৃহকর্মী না থাকায় রান্নার পাশাপাশি বাসা পরিষ্কার, কাপড় ধোয়া, এমনকি অন্যান্য দৈনন্দিন কাজও তাদের করতে হয়, যা অনেকের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে যায়।
অনেকে ফুড ডেলিভারি সার্ভিসের ওপর নির্ভর করতে চান, কিন্তু ছুটির সময়ে ডেলিভারি প্রতিষ্ঠানগুলোও সীমিত সেবা দেয়। যারা খোলা থাকে, তারা অতিরিক্ত চার্জ নিয়ে খাবার সরবরাহ করে, যা অনেকের জন্য ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে। ফলে বেশিরভাগ ব্যাচেলরদেরই একপ্রকার বাধ্য হয়ে স্বল্প খেয়ে বা অনাহারে ঈদের ছুটি কাটাতে হয়।
টিএই/এইউ