- ডিসি-এসপিরা বাদ, ফিরছে পুরনো রীতি
- ভোটকেন্দ্রে থাকবে ইসির একক দখল
- চূড়ান্ত নীতিমালা অনুমোদনের অপেক্ষায়
- কমবে ভোটারদের ভোগান্তি, বাড়ছে স্বচ্ছতা
চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসকে সামনে রেখে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সে লক্ষ্যে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের জন্য একটি নতুন খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে সংস্থাটি। সেখানে দায়িত্ব প্রদানে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগে যেখানে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপাররা এই দায়িত্ব পালন করতেন সেখানে এবার নির্বাচন কমিশনের মাঠ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। এতে ভোটকেন্দ্র স্থাপনে একক দখল পাচ্ছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা।
নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানিয়েছেন, ভোটকেন্দ্র ব্যবস্থা নীতিমালা নিয়ে তাদের মধ্যে পর্যালোচনা হয়েছে। তারা প্রাথমিকভাবে একটি খসড়া দাঁড় করিয়েছেন। এটি চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ইসি সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ভোটকেন্দ্র স্থাপন, স্থান পরিবর্তন ও পুনর্বিন্যাসসংক্রান্ত নীতিমালা ২০২৫’ শীর্ষক এই খসড়া বর্তমানে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। নতুন নীতিমালা চূড়ান্ত হলে ভোটকেন্দ্রের খসড়া তৈরি করবেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, যা যাবে বিভাগীয় নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে অনুমোদনের জন্য। পূর্বের নীতিমালার মতো আর কোনো জেলা কমিটি বা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ের প্রয়োজন নেই। ফলে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণের পুরো প্রক্রিয়াটি এককভাবে পরিচালিত হবে ইসির নিজস্ব প্রশাসনিক কাঠামোর মাধ্যমে।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ২০০৮ সালের পর থেকে নির্বাচন কমিশন ভোটকেন্দ্র নির্ধারণের ক্ষেত্রে ডিসি ও এসপিদের সমন্বয়ে একটি জেলা কমিটি গঠন করে। এ কমিটির মাধ্যমেই ভোটকেন্দ্র স্থান নির্ধারণ ও পুনর্বিন্যাসের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো। তবে এই কমিটিগুলোর নিরপেক্ষতা ও রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। নতুন নীতিমালায় সেই কাঠামো বাতিল করা হয়েছে।
এর আগে, ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র নির্ধারণের দায়িত্ব ছিল নির্বাচন কমিশনের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের হাতে। তারা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তভাবে স্থানীয় বাস্তবতা বিবেচনায় কেন্দ্র নির্ধারণ করতেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সেই বিধানে পরিবর্তন আনে এবং নিজেদের মতো করে নির্বাচন করতে ডিসি-এসপিকে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করে। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নবগঠিত নির্বাচন কমিশন আবার পুরনো রীতিতে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে প্রশাসনিক প্রভাব বা রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব দূর করে একটি নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিজ্ঞাপন
ভোটকেন্দ্র স্থাপনের খসড়া নীতিমালায় রয়েছে, নারী ও পুরুষ ভোটারদের জন্য আলাদা বুথের ব্যবস্থা করতে হবে, প্রতিবন্ধী বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ভোটারদের জন্য পর্যাপ্ত সহায়তার ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং নিরাপত্তা ও যোগাযোগ ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে। ভোটারদের যেন বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটারের বেশি দূরে যেতে না হয়, সে লক্ষ্যেই ভোটকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। একই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে, কোনো মসজিদ, মন্দির, মাদরাসা, রাজনৈতিক কার্যালয় বা বিতর্কিত স্থান যেন ভোটকেন্দ্র হিসেবে নির্ধারণ না হয়। প্রাধান্য পাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, তবে প্রয়োজনে সরকারি স্থাপনাও ব্যবহার করা যাবে।
নির্বাচন কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা মনে করছেন, নতুন এ নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে ভোটারদের ভোগান্তি কমবে, একইসঙ্গে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণে নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা অনেকাংশেই নিশ্চিত হবে। প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ ও রাজনৈতিক চাপমুক্ত একটি আধুনিক ও কার্যকরী নির্বাচন ব্যবস্থার পথে এটি একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজারের বেশি ভোটারের জন্য ৪২ হাজারেরও বেশি ভোট কেন্দ্র ছিল। আর ভোটকক্ষ ছিল দুই লাখ ৬০ হাজারের মতো। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ১০ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি ভোটারের জন্য ৪০ হাজারেরও বেশি ভোটকেন্দ্র ছিল, ভোটকক্ষ ছিল দুই লক্ষাধিক। দশম সংসদ নির্বাচনে নয় কোটি ১৯ লাখ ভোটারের জন্য ভোটকেন্দ্র ছিল ৩৭ হাজার ৭০৭টি, ভোটকক্ষ ছিল এক লাখ ৮৯ হাজার ৭৮টি। নবম সংসদ নির্বাচনে আট কোটি ১০ লাখ ভোটারের জন্য কেন্দ্র ছিল ৩৫ হাজার ২৬৩টি, ভোটকক্ষ ছিল এক লাখ ৭৭ হাজার ২৭৭টি।
সর্বশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোট ভোটার ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ২৭৪ জন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ চলমান রয়েছে। এতে আরও প্রায় ৬১ লাখ ভোটার আগামী জুনে তালিকায় যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে ইসি। এর ফলে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আরও ভোটকেন্দ্র বাড়ানো লাগতে পারে বলে ধারণা করছেন ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এমএইচএইচ/জেবি