প্রতিদিন জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এর কল সেন্টারে নানা বিষয়ে সেবা পেতে কল আসে। ভুক্তভোগীরা নানা সহযোগিতা চান। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবার বাইরে এবার ঈদকে কেন্দ্র করে আগে ও পরে মিলে সর্বাধিক কল এসেছে শব্দদূষণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। কেউ কল করেছেন এলাকার কিশোর গ্যাংয়ের মোটরসাইকেল মহড়ায় বিকট শব্দের বিষয়ে৷ আবার কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন বাসার বাইরে উচ্চ শব্দে হর্ন বাজানোয় ঘরের শিশু অসুস্থ হয়ে পড়েছে তা থেকে পরিত্রাণ পেতে।
জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এর তথ্য বলছে, গত ২৮ মাস থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত এক হাজার ২৩৩টি শব্দদূষণের কল এসেছে। যা ঈদের সময়ে সর্বাধিক বলে মনে করা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
এর বাইরে মারামারি সংঘর্ষ সংক্রান্ত বিষয়ে তিন হাজার ৭৬৮টি, আগুনের ঘটনায় এক হাজার ২২২টি, জরুরি চিকিৎসা সেবা পেতে ৯৪৪টি, সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে ধরিয়ে দিতে ৯০৩টি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম বিষয়ে ৭৭৮টি, নারী নির্যাতন ৭৩৭টি, দুর্ঘটনা ৫৭১টি, চুরি ৫৩৩টি এবং জমি দখলসংক্রান্ত ৫০০টি কল এসেছে। এর বাইরেও নানা কল এসেছে। তবে এই ১০ বিষয়ে বেশি কল এসেছে।
জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এর দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত ডিআইজি মহিউল ইসলাম বলেন, জাতীয় জরুরি সেবায় পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স এবং ফায়ার সার্ভিস সেবা ছাড়া আরও নানা বিষয়ে সেবা পেতে কল আসে। তবে এবার শব্দ দূষণের বিষয়ে অভিযোগ অনেক এসেছে। হয়তো লোকজন বেশি সচেতন হয়েছে, পাশাপাশি ঈদের আগে শব্দ দূষণের ব্যাপারে গণসচেতনতা তৈরিতে প্রচারণা চলেছে। তার ফল কিছুটা মিলেছে। কোনো এলাকায় উচ্চমাত্রার শব্দের কারণে কেউ বিরক্তি ফিল করলে সহযোগিতার জন্য জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এ কল করতে পারে। আমাদের টিমের সদস্যরা সেই কল গ্রহণ করে দ্রুত ভুক্তভোগীকে সেই আপদ থেকে উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশের সাথে যুক্ত করে দেন। তবে আগের তুলনায় এখন প্রয়োজনীয় বিষয়ে সেবা পেতে কলের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানান তিনি।

জাতীয় জরুরি সেবা সূত্রে জানা গেছে, ঈদের আগের রাতে পল্লবীর আরিফাবাদ আবাসিক এলাকায় স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের মোটরসাইকেল মহড়া দিচ্ছিল। ওই সময় সেই এলাকা থেকে ৯৯৯ এ কল করে সেই উৎপাত থেকে রক্ষা পেতে সহযোগিতা কামনা করা হয়। সেই ফোন কলে নিবিড় নামে এক শিশুর মা জানান, তার ছেলে দুর্বল হৃদপিণ্ডজনিত রোগে ভুগছে। কিন্তু বাহিরে কিশোর গ্যাংয়ের মোটরসাইকেলে লাগানো হাইড্রোলিক হর্নের শব্দে শিশুটি বারবার অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বাধ্য হয়ে জরুরি সেবাই কল করেন তার মা। এরপর জাতীয় জরুরি সেবা থেকে সেই মাকে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের সাথে যুক্ত করে দেন তারা৷ পুলিশের সহযোগিতায় মোটরসাইকেল মহড়া বন্ধ করা সম্ভব হয়।
জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এর কল সেন্টারের ইন্সপেক্টর আনোয়ার সাত্তার জানান, কল সেন্টারে যতগুলো কল আসে তার ৪৬ শতাংশ প্রয়োজনীয়। আগে অপ্রয়োজনীয় কল আসত বেশি। সেই সংখ্যা এখন কমেছে। মানুষ সচেতন হওয়ায় জাতীয় জরুরি সেবার পুলিশ, ফায়ার ও অ্যাম্বুলেন্স ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে সেবা পেতে কল করেন। তবে কাউকেই নিরাশ করা হয় না। সাধ্যমত সহযোগিতা করেন তারা।
জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এর তথ্যমতে, এবার গত ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশকে সহযোগিতা পেতে কল এসেছে ১১ হাজার ৩৮৯টি, ফায়ার সার্ভিসসংক্রান্ত এক হাজার ১৯৮টি এবং অ্যাম্বুলেন্স সেবা পেতে ৭৯৯টি কল এসেছে৷ এর বাইরেও লোকজন পণ্যের দাম বেশি রাখা, ইভটিজিং, চিহ্নিত অপরাধীকে ধরিয়ে দিতে, নারী নির্যাতনের বিষয়ে তথ্য জানাতে কল করেছেন।
এমআইকে/জেবি