মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

বেড়েছে যাত্রীর চাপ, কিছুটা স্বস্তি লঞ্চ মালিক-শ্রমিকদের

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ১৪ জুন ২০২৪, ০৮:২৩ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img
ভিড় বেড়েছে সদরঘাটে। ছবি: ঢাকা মেইল

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে নৌপথে মানুষের চলাচল অনেকটা কমে গেছে। দিন দিন লঞ্চের যাত্রী সংকট বাড়ছে। বছরজুড়ে যাত্রী সংকটের কারণে মালিকদের কেউ কেউ লঞ্চ বিক্রিও করে দিয়েছেন। কেউ আবার একাধিক লঞ্চ না চালিয়ে একটা চালু রেখেছেন। ধীরে ধীরে নৌপথ থাকবে কি না সেই শঙ্কাও আছে ব্যবসায়ীদের মনে। এরমধ্যেও ঈদের সময় যাত্রীর চাপ বাড়বে সেই আসায় থাকেন নৌখাত সংশ্লিষ্টরা। এবারের ঈদে নৌপথে যাত্রী চাপ বাড়ায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে ব্যবসায়ী ও নৌ শ্রমিকদের মধ্যে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সদরঘাট থেকে যেসব রুটে দিনে এবং রাতে লঞ্চ ছেড়ে যায় সেগুলো দুপুরের আগেই ঘাটে নোঙর করে। কেবিনের যাত্রীরা কিছুটা বিলম্ব করে এলেও ডেকের যাত্রীরা আগেভাগেই ঘাটে এসে পৌঁছান। অনেকে অন্য সময়ের যানজটের আশঙ্কা থেকেও আগেভাগে টার্মিনালে এসে পৌঁছেছেন।


বিজ্ঞাপন


ভোলার চরফ্যাশন যাওয়ার জন্য ঘাটে আসা রুহুল আমিন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ভাবছিলাম অনেক জ্যামে পড়তে হইবে। আসার পর দেখলাম সব ফাঁকা। আগে ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে হাঁটা শুরু করতে হত। এবার ঘাট পর্যন্ত রিকশা নিয়ে চলে আসলাম।’

আরও পড়ুন

লঞ্চ কেটে লোহার দরে বিক্রি করছেন মালিকরা

শুক্রবার (১৪ জুন) বিকেল ৩টার দিকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি লঞ্চই যাত্রী বোঝাই। কোনো লঞ্চেই কেবিন খালি নেই। ডেকের বিভিন্ন জায়গায় যাত্রীরা যে যার মতো জায়গা করে নিয়েছেন।

একদিকে অল্প খরচ অন্যদিকে স্বস্তি পাওয়া যায় এ কারণে দক্ষিণাঞ্চলের অনেকে এখনো লঞ্চে যাচ্ছেন বলে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।


বিজ্ঞাপন


Lonch2

ঢাকা-আমতলী রুটের ইয়াদ পরিবহনের যাত্রী সাবিনা আক্তার এসেছেন মিরপুর থেকে। সঙ্গে মাকে নিয়ে যাচ্ছেন বরগুনার আমতলীতে ঈদ করতে। ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বাসের টিকেট পাইনি। বেশি টাকা দিলে হয়তো পাওয়া যায়। আবার টিভিতে দেখলাম রাস্তাও যানজট অনেক। এজন্য কষ্ট হলেও লঞ্চে যাই। ঝড়-তুফান না হলে কোনো সমস্যা নেই।’

অন্যদিকে যেসব রুটে একাধিক লঞ্চ সেখানকার নৌশ্রমিকরা যাত্রী ওঠানোর জন্য হাঁকডাক দিচ্ছেন। যদিও যাত্রীরা তাদের পছন্দের লঞ্চে উঠে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ছেন।

যাত্রী চাপ বাড়ায় কিছুটা খুশি লঞ্চ শ্রমিকরা। এমভি কর্ণফুলী- ১২ লঞ্চের কেরানি কবির হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এখন তো ভালো লাগছে। সারা বছর তো যাত্রী থাকে না। কেবিন ফাঁকা পড়ে থাকে। ঈদের আগে পরে কেবিন ফাঁকা নেই। সব মিলিয়ে কয়েকটা দিন ভালো যাবে। মালিকের সঙ্গে স্টাফরাও হয়ত কিছু বাড়তি টাকা পাবে। পরিবারকে কিছুটা হলেও দিতে পারবে।’

আরও পড়ুন

যাত্রীর ‘চিন্তায়’ ঘুম নেই লঞ্চ মালিকদের

তবে অন্যান্য সময় ঈদের আগে সদরঘাটকে কেন্দ্র করে যে ধরনের বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয় এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সেগুলো নেওয়া হলেও তা অনেকটা ঢিলেঢালা দেখা গেছে। কারণ অতিরিক্ত মানুষের চাপ থাকলেই সাধারণত বেশি তৎপরতা দেখা যায়। অবশ্য ঘাটে নৌ পুলিশ, ডিএমপির পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি র‌্যাব, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিসের লোকজনকে দেখা গেছে।

Lonch3

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানিয়েছে, যাত্রীদের চলাচলের সুবিধার্থে ঈদ স্পেশাল সার্ভিসের আওতায় এবার সদরঘাট টার্মিনাল থেকে মোট ১৮০টি লঞ্চ চলাচল করবে। কোনো লঞ্চ যাতে বাড়তি যাত্রী না দিতে পারে সেজন্য তাদের তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে নৌপুলিশের উদ্যোগ নিয়ে সদরঘাট নৌ-পুলিশ থানার ওসি মো. আবুল কালাম বলেন, আমরা যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে সবধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। আমাদের লোকজন সার্বক্ষণিক টহল দিচ্ছে, নজরদারি রাখছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে প্রতিটি লঞ্চ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। কোনো লঞ্চে যেন অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই না করে সেজন্য আমরা সতর্ক করেছি।

এদিকে বছরে দুই ঈদে যাত্রী চাপ থাকায় কিছুটা স্বস্তি পেলেও সারা বছরের ভর্তুকি দিয়েই যেতে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বরিশাল রুটে চলা অ্যাডভেঞ্চার লঞ্চের মালিক নিজাম শিপিং লাইনন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং এফবিসিসিআইর পরিচালক নিজাম উদ্দিন। ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘নৌপথ কীভাবে টিকে থাকবে সেটা সরকারকে ভাবতে হবে। প্রত্যেক ব্যবসায়ীর বিপুল পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করা এখানে। কিন্তু পদ্মা সেতু চালুর পর যে যাত্রী সংকট তৈরি হয়েছে তা দিন দিন বাড়ছে। এতে লঞ্চ ব্যবসায়ীরা তো পথে বসার উপক্রম। কত ভর্তুকি দিয়ে মানুষ কতদিন লঞ্চ চালাতে পারবে? ঈদের আগে পরে সব মিলিয়ে হয়তো ১০টার মতো ট্রিপ দেওয়া যাচ্ছে। তাতেও আগের মতো যাত্রী মিলছে না। ফলে এ দিয়ে খুব বেশি আশা করার সুযোগ দেখছি না।’

বিইউ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন