সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

সিজন চেঞ্জ

ঋতু পরিবর্তনের সময় কী কী রোগ হয়?

লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩৮ পিএম

শেয়ার করুন:

ঋতু পরিবর্তনের সময় কী কী রোগ হয়?
এসময় মানুষ ফ্লু ও অন্যান্য ভাইরাসজনিত রোগে সহজেই আক্রান্ত হয়ে পড়েন

মৌসুমি জলবায়ুর দেশ বাংলাদেশ। এখানে প্রতিটি ঋতু পরিবর্তনের সময়ই আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায়। যার প্রভাব পড়ে শরীরে। তাইতো আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের সময় শিশু-বৃদ্ধসহ সববয়সী মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হন। আবহাওয়া আর জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে পরিবেশে তাপমাত্রার তারতম্য আসে। এই তারতম্যই নানা ধরণের রোগজীবাণুর জন্য সবচে প্রিয় পরিবেশ। তাই এসময় মানুষ ফ্লু ও অন্যান্য ভাইরাসজনিত রোগে সহজেই আক্রান্ত হয়ে পড়েন।

প্রকৃতিতে ইতোমধ্যেই বইছে হালকা শীতল বাতাস। জানান দিচ্ছে কদিন বাদে আসবে শীত। এসময় অ্যালার্জির প্রবণতা অনেকটা বেড়ে যায়। দেখা দেয় ত্বক ফাটা, অ্যাকজিমা, সোরিয়াসিস ছাড়াও ঠান্ডা, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যাও। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে আসে ফ্লু জাতীয় বিভিন্ন ছোঁয়াচে রোগ যা খুব দ্রুত একজন থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে পড়ে।


বিজ্ঞাপন


fever

শীতের শুষ্ক বাতাসে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের বিস্তার ঘটে দ্রুত এবং সংক্রমণ হওয়ার প্রবণতাকে ত্বরান্বিত করে। ব্যাকটেরিয়াজনিত ইনফেকশন এবং সাইনাসের সমস্যাও এসময় বেড়ে যায়। শীত মৌসুমে যেসব রোগের প্রকোপ বেড়ে যায় সেগুলো হলো : সর্দি, কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, হাঁপানি, চর্মরোগ ও বাতব্যথা রোগ।

সর্দি-কাশি  

ঋতু পরিবর্তনের শুরুতে প্রায় সবাই কমবেশি সর্দি কাশিতে ভুগে থাকেন। সঙ্গে যুক্ত থাকে জ্বর। নাক দিয়ে বারবার পানি ঝরতে থাকে এবং হাঁচি হয়। মাঝে মধ্যে মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা, গলা ব্যথা এসব সমস্যাও দেখা যায়। 


বিজ্ঞাপন


coughing

ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ছাড়াও অন্যান্য ভাইরাস সংক্রমণের কারণে এসব রোগ হয়। সাধারণত যাদের শরীরে এন্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারাই এসব রোগে বেশি ভোগেন। ভাইরাসের আক্রমণে দেহের দুর্বলতার সুযোগে ব্যাকটেরিয়াও আক্রমণ করতে পারে। সর্দি যদি খুব ঘন হয় বা হলুদাভ বা কাশির সঙ্গে হলুদাভ কফ আসে তাহলে ধরে নেবেন আপনি ব্যাকটেরিয়ায় সংক্রমিত হয়েছেন। খুব বেশি জ্বর, গলাব্যথা ও কাশিতে ভুগলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 

আরও পড়ুন- 
 
 
 

হাঁপানি

হাঁপানি বা অ্যাজমাজাতীয় শ্বাসকষ্টের রোগ কেবল শীত নয়, বরং সারাবছরই থাকে। তবে শীতের মৌসুমে তা বেড়ে যায়। তাই তীব্র শীত আসার আগেই সতর্কতা ও সচেতনতা খুবই প্রয়োজন। 

ashtma

চিংড়ি, গরুর গোশত, ইলিশ মাছ (যেসব খাবার খেলে অ্যালার্জি হয়), বায়ুর সাথে ধোঁয়া, ধুলাবালি, ফুলের রেণু ইত্যাদি শ্বাস গ্রহণের সময় ফুসফুসে প্রবেশ করলে হাঁপানি হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে বংশগত কারণেও হাঁপানি হতে পারে। শিশুদের সর্দি কাশি থেকেও হাঁপানির সৃষ্টি হতে পারে।

আরও পড়ুন- 
 
 
 

নিউমোনিয়া 

একটি ফুসফুসের রোগ নিউমোনিয়া। অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগার কারণে এটি হতে পারে। শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এটি একটি মারাত্মক রোগ। পৃথিবীব্যাপী ৫ বছরের নিচে শিশুমৃত্যুর অন্যতম কারণ হলো নিউমোনিয়া। আমাদের দেশেও শিশুমৃত্যুর অন্যতম কারণ এটি। অভিভাবকদের সতর্কতা ও সচেতনতার ফলে এ রোগ থেকে অনেকাংশে বেঁচে থাকা যায়। এটি প্রতিরোধযোগ্য এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময়যোগ্য।

iching

চর্মরোগ

শীতকালে আবহাওয়ার সাথে কম তাপমাত্রার সংযোগ আর ধুলাবালির কারণে যেসব স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয় তার মধ্যে অন্যতম হলো চর্মরোগ। শীতকালে এর প্রকোপ বেড়ে যায়। শীতের সময় বাতাসের জলীয়বাষ্প কমে যাওয়ার কারণে চামড়া থেকে পানি চুষে নেয়। ফলে ত্বক বা চামড়া শুষ্ক হয়ে ওঠে এবং চর্মরোগ দেখা দেয়। বাতাসের শুষ্কতার কারণে শীতে সবচেয়ে বেশি ঠোঁট ফাটে। 

আমাদের চামড়ার নিচে সিবেসিয়াম নামক আণুবীক্ষণিক গ্রন্থি থাকে যা থেকে তেলের মতো রস ক্ষরিত হয়। যাকে সিবাম বলে। এটি ঘামের সাথে মিশে পুরো চামড়ায় ছড়িয়ে যায় এবং চামড়া মসৃণ ও চামড়ার আর্দ্রতা বজায় রাখে। শীতকালে বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে সিবেসিয়াম গ্রন্থি থেকে বের হয়ে আসা শরীরের চামড়ায় ঠিকমতো ছড়িয়ে পড়তে পারে না। ফলে শরীরের চামড়া শুকিয়ে গিয়ে কুঁচকে যায় বা টানটান ভাব দেখা দেয়। 

ain

ব্যথাবেদনা

আমাদের দেশে বেশিরভাগ পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তিরাই শরীরের নানা বিষ বেদনায় ভোগেন। শীতকালে ৫০ ঊর্ধ্ব জনসংখ্যার শতকরা ৬৫ ভাগই ব্যথাজনিত সমস্যায় ভোগেন। বিশেষ করে যেসব জয়েন্ট শরীরের ওজন বহন করে এবং বেশি ব্যবহৃত হয় সেগুলোতে ব্যথা-বেদনা বেশি হয়। এর মধ্যে ঘাড়, কোমর, সোল্ডার জয়েন্ট, হাঁটুর ব্যথা, পায়ের ব্যথা ও মেরুদন্ডের ব্যথা উল্লেখযোগ্য। 

শীরের নানা অংশে সমস্যার কারণ মেরুদন্ডের মাংসপেশি বা কশেরুকার সমস্যা, লিগামেন্ট মচকানো, দুই কশেরুকার মধ্যবর্তী ডিস্ক ক্ষয় হয়ে যাওয়া বা সমস্যা। আর বয়সজনিত হাড় ও জোড়ার ক্ষয়।

ঋতু পরিবর্তনের সমস্যাগুলোকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। আগাম সতর্কতা ও সচেতনতা রোগের সঙ্গে লড়াইয়ে সহায়ক হতে পারে। সমস্যা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর