লুপাস-এই নামটি হয়তো অনেকেই প্রথম শুনলাম। আর যারা আগে থেকেই জানেন এই রোগ সম্পর্কে তারা রোগটি নিয়ে ভীত। লুপাসকে বলা হয় নীরব ঘাতক ব্যাথি। তাই এই রোগ সম্পর্কে আগেভাগেই ওয়াকিবহলা থাকলে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। বলা রাখা ভালা এই রোগের সম্পূর্ণ নিরাময় নেই। তবে উপসর্গ দেখে বোঝা যায় রোগটি সম্পর্কে। বিশেষ করে নারীরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হন। জানুন লুপাস রোগের আদ্যোপান্ত।
লুপাস কী?
বিজ্ঞাপন
লুপাস একধরনের দীর্ঘমেয়াদি বাতরোগ। এতে আক্রান্ত হলে শরীরের বিভিন্ন কোষ ও অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অনেক সময় এ রোগ দেরিতে ধরা পড়ে। শরীরে নানা জটিলতা সৃষ্টি করে। মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। বিশ্বজুড়ে ৫০ লাখের বেশি মানুষ লুপাসে আক্রান্ত। তবে অনেকেই রোগটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন না। ফলে উপসর্গ থাকলেও রোগ শনাক্তে বিলম্ব হয়।

লুপাসের উপসর্গ ও লক্ষণ
লুপাস আক্রান্ত রোগীদের মৃদু ও মারাত্মক দুই ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
বিজ্ঞাপন
মৃদু লক্ষণ
১. ক্লান্ত বা দুর্বল বোধ হবে।
২. জ্বর ও জ্বরজ্বর ভাব হবে।
৩. নাকে এবং গালে প্রজাপতির আকৃতির ফুসকুড়ি সৃষ্টি হতে পারে।
৪. চুল পড়া, মুখের মধ্যে ঘা হতে পারে।
৫. ঠাণ্ডায় হাত বা পায়ের আঙ্গুল ফ্যাকাশে বা নীল রঙের হয়ে যেতে পারে।
৬. মৃদু জয়েন্টে ও গিরায় ব্যথা হতে পারে।
৭. দেহের ওজন হ্রাস বা বেড়ে যেতে পারে।

মারাত্মক লক্ষণ
১. হাত-পা-পেট বা চোখের চারপাশে ফোলাভাব ও পানি আসা।
২. বাদামি (চা-রঙের) বা ফেনাযুক্ত প্রস্রাব হওয়া।
৩. মাথাব্যথা, খিঁচুনি, অস্বাভাবিক আচরণ ও অজ্ঞান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৪. পায়ে বল বা শক্তি না পাওয়া, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যেতে পারে।
৫. বার বার বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়া বা মৃত বাচ্চা প্রসব, তীব্র গিরা ব্যথা বা ফোলা ভাব ইত্যাদি।
যেহেতু এই রোগটি মস্তিষ্কে আক্রমণ করে তাই এটি মোকাবেলা করা কঠিন।

লুপাস রোগ নির্ণয়
চামড়ার পরিবর্তন এবং র্যাশের মতো উপসর্গ দেখে সাধারণত চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে প্রথমে যান রোগী। তবে এটি ত্বকের রোগ নয়। তাই সেখান থেকে রেফার করা হয় মেডিসিনের চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য।
চামড়ায় র্যাশের উপসর্গ দেখে চিকিৎসকেরা প্রথমে রক্তের কয়েকটি পরীক্ষা দেন।
ইউরিন টেস্ট এবং কিডনির বায়োপ্সি করা হয়। এই টেস্টের রিপোর্ট দেখে এসএলই কোন স্টেজে রয়েছে বা কেমন ওষুধ দেওয়া হবে, তা বুঝতে পারেন চিকিৎসকেরা।
লুপাস রোগের চিকিৎসা
এসএলই রোগ হলে রোগীকে বিভিন্ন ওঠাপড়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। চিকিৎসকের মতে, এই রোগের তীব্রতা কখনও কখনও এমন বেড়ে যায় যে, রোগী বিছানা ছাড়তে পারেন না। আবার তীব্রতা কমলে, তিনি কয়েক মাস হয়তো নির্ঝঞ্ঝাট ভাবে কাটালেন। অর্থাৎ রোগের একটি কার্ভ রয়েছে, যেখানে সময়ে সময়ে ঢেউ বা ওয়েভ আসে।
বিভিন্ন ওষুধের মধ্যে স্টেরয়েড প্রয়োগ করা হয় এই ধরনের রোগীদের জন্য। তবে কাকে কতটা পরিমাণ দেওয়া হবে তা নির্ভর করছে রোগের মাত্রার উপরে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি ইঞ্জেকশনও প্রয়োগ করা হয়।

লুপাস সারে না। তবে তা হলে ভয় পাবেন না। কারণ আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে এই রোগ যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
লুপাস আক্রান্ত নারী গর্ভধারণের পূর্বে করণীয়
লুপাস আক্রান্তদের গর্ভাবস্থায় সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। তবে তারা সুস্থ সন্তান ধারণ করতে পারে। সন্তান ধারণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলে, সেক্ষেত্রে কমানোর উপায়ও রয়েছে। এজন্য অন্তত ৬ মাস লুপাসের লক্ষণ না দেখা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
তথ্য সূত্র: দেশ-বিদেশি মেডিকেল জার্নাল
এজেড

