মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

শ্বেতী রোগ কি ছোঁয়াচে, কেন হয়?

লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:২০ পিএম

শেয়ার করুন:

শ্বেতী রোগ কি ছোঁয়াচে, কেন হয়?

মানুষভেদে গায়ের রঙের তারতম্য হয়ে থাকে, এটিই স্বাভাবিক। কেউ কৃষ্ণাঙ্গ হন, কেউবা ফর্সা। তবে আমাদের চারপাশে এমন কিছু মানুষকে দেখা যায় যাদের ত্বক অন্যদের চেয়ে একদমই আলাদা। তাদের ত্বকে আসল রঙের পাশাপাশি ছোপ ছোপ দুধ-সাদা রং দেখা যায়। ত্বকের রঙের এমন তারতম্য মূলত ত্বকের একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগের কারণে হয়। এটি শ্বেতী বা ধবল রোগ নামে পরিচিত। 

ইংরেজিতে শ্বেতী রোগকে লিউকোডারমা বা ভিটিলিগো বলা হয়। অনেকের ধারণা, শ্বেতী রোগ ছোঁয়াচে ও অভিশপ্ত। তাই সাধারণ মানুষ এই রোগে আক্রান্তদের যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলেন। সাধারণ মানুষরা এমন রোগীদের এড়িয়ে চলেন বলে তারা নিজেদেরকে নিয়ে সবসময় এক ধরনের হীনমন্যতায় ভোগেন। মানসিক অবসাদ এমন ব্যক্তিদের নিত্যসঙ্গী হয়। 


বিজ্ঞাপন


আসলেই কি শ্বেতী রোগ ছোঁয়াচে? কেন হয় এই রোগ? কাদের ঝুঁকি বেশি? জানুন এই প্রতিবেদনে- 

vitiligo1

শ্বেতী রোগের জন্য কি মেলানিনের অভাব দায়ী?

ত্বকের পরিচিত রোগগুলোর মধ্যে শ্বেতী রোগ অন্যতম। কেউ এই রোগে আক্রান্ত হলে আক্রান্ত স্থানটি সাদা হয়ে ত্বকের স্বাভাবিক রঙ বা পিগমেন্টেশন নষ্ট হয়ে যায়।


বিজ্ঞাপন


ত্বকে মেলানোসাইট নামক একটি কোষ আছে, যা মেলানিন উৎপাদন করে। এই মেলানিনের কারণেই আমাদের ত্বকের রঙে ফর্সা, বাদামী কিংবা অন্যান্য তারতম্য দেখা যায়। যখন ত্বকের কোনো অংশের মেলানোসাইট কোষ ধ্বংস হয়ে যায়, তখন সেখানে মেলানিন উৎপন্ন হতে পারে না। মেলানিনের অভাবেই ওই অংশটি অনেকটা সাদা হয়ে যায়।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক শতাংশ শ্বেতী রোগে আক্রান্ত। জনসংখ্যা বিষয়ক অনলাইন ডেটাবেজ ‘ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ’ (ডব্লিউপিআর) অনুযায়ী, বিশ্বের মোট জনসংখ্যা ৮০০ কোটিরও বেশি। সেই হিসাবে শ্বেতী রোগীর সংখ্যা আট কোটির বেশি।

vitiligo2

২০১১ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ২৫শে জুন ‘ওয়ার্ল্ড ভিটিলিগো ডে’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ভিটিলিগো ডে হিসাবে এই তারিখটিকে বেছে নেওয়ার কারণ মার্কিন সঙ্গীতশিল্পী মাইকেল জ্যাকসন। বিখ্যাত এই শিল্পী ২০০৯ সালের ২৫ জুন মৃত্যুবরণ করেন।

মাইকেল জ্যাকসন ১৯৬০ সালে জন্ম নিলেও ১৯৮০ সালের মাঝামাঝি সময়ে এসে শ্বেতী রোগে আক্রান্ত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই রোগ তার সঙ্গী ছিল।

শ্বেতী রোগ কেন হয়? 

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্য অনুযায়ী, শরীরে মেলানিনের উৎপাদন কেন বন্ধ হয়ে যায় এবং শ্বেতী রোগ হয়, সেই বিষয়টি এখনও অজানা। তবে এই রোগের কারণ হিসেবে কয়েকটি বিষয়কে গণ্য করা হয়।

vitiligo3

ইমিউন সিস্টেম 

প্রথমত, শরীরের 'ইমিউন সিস্টেম' বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। এক পর্যায়ে ইউমিন সিস্টেম নিজের শরীরের বিভিন্ন সুস্থ কোষকে (মেলানোসাইট) ভুল করে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া মনে করে। ইমিউন সিস্টেম তখন শরীরকে সুরক্ষিত করতে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে অ্যান্টিবডি তৈরির মাধ্যমে মেলানোসাইট কোষকে ধ্বংস করে। 

জিনগত পরিবর্তন 

শ্বেতী রোগের আরেকটি কারণ হচ্ছে জিনগত পরিবর্তন। শরীরের ডিএনএ-তে (জেনেটিক মিউটেশন) কোনও পরিবর্তন এলে তা মেলানোসাইটসের কার্যকলাপকে প্রভাবিত করতে পারে। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্য অনুযায়ী, ৩০টিরও বেশি জিন রয়েছে, যা ভিটিলিগো বা শ্বেতী রোগ হওয়ার ঝুঁকিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।

স্ট্রেস

এই রোগের অন্যতম কারণ স্ট্রেস বা দুশ্চিন্তাও। কেউ ক্রমাগত মানসিক বা শারীরিক চাপে থাকলে মেলানোসাইট কোষগুলোর মেলানিন উৎপাদনের পরিমাণ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষত, কোনো শারীরিক আঘাতের পর অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা এর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। 

vitiligo4

অতিবেগুনী রশ্মির বিকিরণ

অতিবেগুনী রশ্মির বিকিরণ এবং বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে থাকার কারণেও শরীরের মেলানোসাইট কোষগুলোর ক্রিয়াকলাপে প্রভাব বিস্তার করতে পারে।

বংশগত

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের মতে, বংশগত কারণেও শ্বেতী রোগ হতে পারে। দেখা গেছে, শতকরা ৩০ শতাংশ রোগী বংশানুক্রমে এই রোগে আক্রান্ত হয়।

শ্বেতী রোগ কি ছোঁয়াচে? 

কারণ যেটাই হোক, শ্বেতী কোনো সংক্রামক বা ছোঁয়াচে রোগ নয় বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা সংস্থা এনএইচএস ও ক্লিভক্যান্ড ক্লিনিক। তাই এটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়া কিংবা এই রোগকে অভিশপ্ত মনে করা বোকামি। 

Vitiligo5

শ্বেতী রোগের ঝুঁকি কাদের বেশি? 

জাতি, লিঙ্গ, বর্ণ নির্বিশেষে যে কারও যেকোনও বয়সে শ্বেতী রোগ হতে পারে। তবে যাদের ত্বক কালো বা বাদামী, অর্থাৎ গাঢ় রঙ, তাদের ক্ষেত্রে ত্বকের ছোপ ছোপ সাদা অংশ বেশি দৃশ্যমান। সাধারণত ৩০ বছর বয়সের আগেই রঙহীন বা সাদা ত্বক (ম্যাকিউলস) সুস্পষ্ট হয়ে যায়।

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্য অনুযায়ী, কেউ যদি আগে থেকেই অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত থাকে, তাহলে তাদের ক্ষেত্রে শ্বেতী রোগ হওয়ার উচ্চ ঝুঁকি থাকে। যেমন- হরমোন উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এডিসন’স ডিজিজ, এনিমিয়া বা রক্তশূন্যতা, টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, থাইরয়েড, ইত্যাদি।

এছাড়া, সন্তান জন্মদানের পর শরীরের কোনো হরমোনাল পরিবর্তন হলে, লিভার বা কিডনিতে সমস্যা থাকলে এবং মেলানোমা (ত্বকের ক্যানসার) হলে শ্বেতী রোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে এনএইচএস।

তথ্যসূত্র- বিবিসি

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর