- ইমোশনাল হয়ে বিচার করলে সেটি ইনজাস্টিস হবে: মনজিল মোরসেদ
- পুলিশ, আইনজীবী, বিচারকসহ সবাই আন্তরিক থাকলে অল্প সময়েই বিচার সম্ভব: আলতাফ হোসেন
সম্প্রতি দেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ধর্ষণের ঘটনা গণমাধ্যমের শিরোনাম হচ্ছে। এর মধ্যে মাগুরার আট বছর বয়সী শিশু আছিয়ার ধর্ষণের ঘটনাটি নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। সরব হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও। ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন তারা। এমন অবস্থায় ধর্ষণের মামলার বিচার দ্রুত করার তাগাদা দিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি ধর্ষণের ঘটনায় বিচার করতে আইন সংশোধনের কথাও বলেছেন।
বিজ্ঞাপন
আইন উপদেষ্টা বলেছেন, ধর্ষণ মামলার বিচার ৯০ দিনের মধ্যে শেষ করার পাশাপাশি আসামির জামিন না দেওয়ার প্রস্তাব রেখে আইনে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এছাড়া ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মামলার ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন পরিবর্তন করে তদন্তের সময় ৩০ থেকে কমিয়ে ১৫ দিন করা হচ্ছে। অংশীজনদের সঙ্গে কিছু পরামর্শ করে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। কয়েক দিনের মধ্যে আইনগত পরিবর্তন আনার জন্য চেষ্টা করা হবে।
আইন উপদেষ্টা ৯০ দিনের মধ্যে মামলার বিচার করার তাগাদা দিলেও এই সময়ের মধ্যে আসলেই কি বিচারকাজ শেষ করা সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আইনজ্ঞদের কেউ কেউ অসম্ভব মনে করলেও আবার কেউ সম্ভব মনে করছেন।
যারা অসম্ভব মনে করছেন তাদের যুক্তি হলো, আগের যেসব ধর্ষণের মামলা হয়েছিল সেগুলো শেষ করতে আইনে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক সময় নিতে হয়েছে। কারণ এসব অপরাধের মামলার বিচারের আদালতে সাক্ষী আসতে চায় না। বিচারক বা আইনজীবী অসুস্থ থাকলে সেদিন শুনানি হয় না। অনেক ক্ষেত্রেই ধর্ষণের আলামত নষ্ট হয়ে যায়। প্রসিকিউশন ঘটনার সত্যতা প্রমাণে অনেক সময় ব্যর্থ হন। সবমিলিয়ে ১৮০ দিনের মধ্যে ধর্ষণের মত ঘটনায় বিচার করা সম্ভব হয় না। অনেক মামলার বিচারে বছরের পর বছর সময় লেগে যায়। তাহলে ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত আর ৯০ দিনের মধ্যে বিচার নিষ্পত্তি করা কীভাবে সম্ভব হবে?
বিজ্ঞাপন
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মনজিল মোরসেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আবেগে বিচার চলে না। ইমোশনাল হয়ে বিচার করলে সেটি ইনজাস্টিস হবে। জাস্টিস হবে না। আইন উপদেষ্টা বলতে পারেন। তারা আইনও করতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা অনেক কঠিন। ধর্ষণের সব মামলা সঠিক না। ধর্ষণের অভিযোগে মিথ্যা মামলা হয় ৮০ ভাগ। আবার অনেক ধর্ষণের ঘটনা সঠিক হয়। যেমন বর্তমানে যেগুলো হচ্ছে সেগুলো মনে হচ্ছে অনেকটাই সঠিক।’
মনজিল মোরসেদ আরও বলেন, ‘আইন করা সহজ, কিন্তু সেটি বাস্তবে রূপ দেওয়া কঠিন। কারণ একটি মামলা প্রমাণ করতে গেলে সঠিক তদন্ত হওয়া জরুরি। ১৫ দিনের মধ্যে একজন পুলিশ কর্মকর্তা মামলার তদন্ত শেষ করতে পারেন না। কারণ একজন পুলিশ অফিসারের অনেক কাজ থাকে। অনেক মামলা থাকে। পুলিশ অফিসার যদি একটি মামলা নিয়ে থাকেন তাহলে হয়তো ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত করা সম্ভব।’
তবে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন ৯০ দিনের মধ্যে বিচার সম্ভব বলে মনে করেন। এজন্য বিচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিকতা থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ঢাকা মেইলকে আলতাফ হোসেন বলেন, ‘সরকার, পুলিশ, আইনজীবী, বিচারকসহ সবাই আন্তরিক থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে ধর্ষণ মামলাসহ সব ধরনের মামলার বিচার করা সম্ভব। উন্নত দেশগুলোতে মামলার বিচার করতে এত সময় লাগে না। কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতা ভিন্ন। তবে সংশ্লিষ্টরা আন্তরিক ও পরিশ্রমী হলে ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত করা সম্ভব। চার্জশিট দেওয়া সম্ভব। ৯০ দিনের মধ্যে বিচার করাও সম্ভব।’
এএমআই/এমআর