মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

আদালত প্রাঙ্গণ থেকে আইনজীবী গ্রেফতার, যা বলছেন আইনজ্ঞরা

আমিনুল ইসলাম মল্লিক
প্রকাশিত: ০৩ মার্চ ২০২৫, ০৮:১২ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

আদালত প্রাঙ্গণ থেকে আইনজীবী তো দূরের কথা, কোনো আসামিকেও গ্রেফতারের নজির নেই। অনেক মামলায় আসামিরা আদালতে আগাম জামিন নিতে আসলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ওই আসামিদের গ্রেফতারের পায়তারা করেন। তাদেরকে কোর্টের ভেতর থেকে গ্রেফতার করেন না। হয়তো ওত পেতে থাকেন। আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বের হলে তাদেরকে গ্রেফতার করেন। এ বিষয়ে মাজদার হোসেন মামলাসহ বিভিন্ন মামলার রায়ের নজিরও আছে।

রোববার (২ মার্চ) দুপুরে পিরোজপুরে তিন আইনজীবীসহ আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতা হাজিরা দিতে আসলে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।


বিজ্ঞাপন


সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি ও সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার এবিএম আলতাফ হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, আদালত প্রাঙ্গণ থেকে কাউকে গ্রেফতারের নজির নেই। সাধারণ কোনো আইনজীবী তো দূরের কথা; সাধারণ বিচারপ্রার্থীকেও গ্রেফতার করা যাবে না। এটি হচ্ছে কাস্টমস বা দীর্ঘ দিনের প্রথা। কাস্টমসও একপ্রকার আইন।

এই আইনজ্ঞ আরও বলেন, আমার জানামতে অনেকদিন আগে সুপ্রিম কোর্টে আগাম জামিন নিতে আসা এক বিচারপ্রার্থীকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। ওই ঘটনায় আদালত হস্তক্ষেপ করেছিল। পরে আদালত আসামিদের জামিন দিয়েছিল।

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, আদালত প্রাঙ্গণ, কোর্টের এজলাস, আইনজীবীর চেম্বার থেকে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। এটা বেআইনি।

এই আইনজীবী আরও বলেন, মাজদার হোসেন মামলাসহ সুপ্রিম কোর্টের অনেক রায়ে এ বিষয়ে নজির আছে। যদি আদালত প্রাঙ্গণ থেকে কোনো আসামিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গ্রেফতার করে তাহলে সেটি হবে বেআইনী কাজ। 


বিজ্ঞাপন


পিরোজপুর জেলা ও দায়রা  জজ আদালতে হাজিরা দেওয়ার পর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সাবেক সরকারি কৌঁসুলি (জিপি) শহিদুল হক খান পান্না, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) খান মো. আলাউদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ ফিরোজ আহম্মেদ, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইরতিজা হাসান রাজু এবং পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমানকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

তারা বিভিন্ন মামলায় হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিতে পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন। খান মো. আলাউদ্দিন অন্য একটি মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি। বাকি চারজনকে একটি নাশকতার মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে।

 

পিরোজপুরের পুলিশ সুপার খান মুহাম্মদ আবু নাসের বলেন, আদালত প্রাঙ্গণ থেকে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের একজন গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি এবং বাকি চারজনকে অন্য একটি নাশকতার মামলায় সংশ্লিষ্ট থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় গ্রেফতার করা হয়েছে।

এর আগে আসামিদের আদালতে হাজিরা দিতে আসার খবর পেয়ে পিরোজপুর জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সালাউদ্দিন কুমারের নেতৃত্বে জেলা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গ্রেফতার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা হয়। এ ঘটনায় আসামিরা আদালত থেকে জামিন নিয়েছিলেন। পরে জেলা জজ আদালতে হাজির হয়ে স্থায়ী জামিন আবেদন করেন তারা। আদালত আজ তাদের জামিন শুনানির দিন ধার্য করেন। এ খবর পেয়ে আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় করতে থাকেন বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে মিছিল করে ছাত্রদল। আদালত থেকে আওয়ামী লীগ নেতারা বের হওয়ার সময় বিএনপি’র বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা করে। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পরে খান মো. আলাউদ্দীনকে গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত এবং অন্য চারজনকে নাশকতার মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

এআইএম/ এফএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন


News Hub