বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে সাহসের জ্বালানীর জোগান দিয়েছিল কণ্ঠশিল্পী পারশা মাহজাবীন পূর্ণির গান। ‘চলো ভুলে যাই’ শিরোনামে মেধা শহীদদের নিয়ে দশ মিনিটে লেখা গানটি বিশ্বের আনাচ-কানাচে ছড়িয়ে পড়তেও লেগেছিল অল্প সময়। পারসার কথা ও সুরে লেগে থাকা হাহাকার অশ্রু ঝরিয়েছিল দেশবাসীর। গতকাল বুধবার ঢাকা মেইলের কাছে মনের আগল খোলেন পারসা। জানান আন্দোলনের সময়কার কথা, নতুন বাংলাদেশ নিয়ে স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আপনার গান শিক্ষার্থীদের ভীষণভাবে অনুপ্রেরণা জাগিয়েছে। ওই জায়গা থেকে এ আন্দোলনে আপনার বেশ অবদান আছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
বিজ্ঞাপন
আমার জায়গা থেকে যতটুকু পেরেছি করেছি। ইচ্ছা ছিল আরও বেশি করার। কিন্তু পারিনি। পরে হয়তো পারব। এটি নিয়ে খুব বেশি বড়াই করতে চাই না। তবে আমি খুশি। কারণ আমার গান সব শ্রেণীর মানুষের মনের কথা হয়ে উঠেছিল। যে যার মতো করে গানটির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে পেরেছেন।
শিক্ষার্থীদের হয়ে সুর তোলায় কোনো ঝামেলা পড়তে হয়েছিল?
গানটি খুব ভাইরাল হয়েছিল বলেই হয়তো হুমকি-ধামকি আসেনি। এছাড়া প্রথমত আমি মেয়ে। ফলে একটি বিশেষাধিকার আছে। দ্বিতীয়ত, গোটা দেশের মানুষ আমার সঙ্গে ছিলেন। এ কারণে আমার সঙ্গে কিছু করার আগে হয়তো চিন্তা করেছে। গানটির কোনো প্রচারণা করিনি। অন্যরা যেভাবে সুন্দরভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্থাপন করেছেন সেভাবেও করিনি। সাদামাটাভাবে প্রকাশ করেছিলাম। যা করার দেশের মানুষ করেছেন। আমি দ্বিতীয়বার শেয়ারও দেইনি। আমার কিছু করতেও পারত না। সেই সাহস আমার পরিবার দিয়েছিল। তারা সবসময় আমার ভালো কাজে যেমন সমর্থন করেন এবারও করেছিলেন।
বিজ্ঞাপন
তারপরও বাবা-মায়ের ভেতরে দুশ্চিন্তা কাজ করে…
বাবা-মা চিন্তা করবেনই। অনেক বেশি চিন্তা করছিলেন তারা। তবে তাদের এতটুকু বিশ্বাস ছিল যে আমি যেটা করছি ভালো করছি। আমার পরিবার ভীষণ সাহসী। ছোটবেলা থেকে এ পর্যন্ত বাবাকে কখনও অন্যায়ের সামনে মাথা নত করতে দেখিনি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকবার মানুষকে বাঁচাতে দেখেছি তাকে। আমার পরিবারে তিনজন মুক্তিযোদ্ধা আছেন। দাদি নিজে তার ছেলেমেয়েদের যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন। এরকম সাহসী পরিবার দেখেই হয়তো খুব একটা সমস্যা হয়নি।
নতুন বাংলাদেশ নিয়ে প্রত্যাশা কী?
প্রত্যাশা অনেক। বলে শেষ করা যাবে না। রাতারাতি কিছু পাব না এটাও জানি। তবে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে দেশের। এগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে। ঘুরে দাঁড়াতে হবে। এখান থেকেই উঠে দাড়িয়ে ভালো কিছু করতে হবে। না হলে আমরা অনেক পিছিয়ে যাব। এমনিতেই পিছিয়ে গেছি। এটা শিল্পাঙ্গনসহ সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
শিক্ষার্থীদের পাশে থাকায় সামাজিক মাধ্যমে প্রশংসিত হচ্ছেন। কেমন লাগছে?
ভালো লাগছে। অনেক গুণী মানুষ আমার গান শুনেছেন, শেয়ার দিয়েছেন, মন্তব্য করেছেন। এতকিছু আশা করে গানটি প্রকাশ করিনি। অধিকাংশ মানুষ মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন গানটি শুনে তারা কেঁদেছেন। মানুষকে কাঁদাতে পারব চিন্তাই করিনি কখনও। এত তাড়াতাড়ি আমার জীবনে এরকম কিছু ঘটবে ভাবিনি। এটা আমার জন্য বড় কিছু।
এবার কাজের প্রসঙ্গে ফেরা যাক…
আজ (বুধবার) ‘যদি তুমি আমার হতে’ শিরোনামের একটি মৌলিক গান আসছে আমার। নিজের কথা ও সুরে। সামনে নাটকেও দেখা যাবে আমাকে। সিনেমা থেকেও প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু অভিনয়ের ক্ষেত্রে পথটা বুঝেশুনে চলতে চাই। অভিনয়ের অনেক কিছুই শেখা বাকি। তিন বছর বয়স থেকে গান করি। কিন্তু অভিনয়ের ক্ষেত্রে একেবারেই নতুন। ফেব্রুয়ারি মাসে আমার অভিষেক। আরেকটু শিখে নামতে চাই। গান, মডেলিং, অভিনয় সবক্ষেত্রেই কাজ করতে চাই।
কোন সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব এসেছিল?
‘জংলি’ ছবিটি আমার করার কথা ছিল। কিন্তু দ্বিধায় ছিলাম। ভাবছিলাম, আর একটু শিখে করা উচিত। এ কারণেই এগোইনি। ছবি সংশ্লিষ্টরাও আমার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়েছেন। সিনেমার ক্ষেত্রে বলব, এটি আমার জন্য সম্পূর্ণ নতুন একটি অঙ্গন। মানুষ আমাকে কীভাবে নেবে সেই ব্যাপারটাও থাকে। তাই আরেকটু শিখে নামতে চাই। কেননা যাই করব ভালোভাবে করব।