তাহমিদ হাসান, এ বছর রাজধানীর ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ (ডিআরএমসি) থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকে ফলাফল জন্য অধীর আগ্রহে ছিলেন তিনি।
ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় বেশ ভালো এবং নিয়মিত পড়াশোনা করেন তাহমিদ। তার স্বপ্ন চিকিৎসক হবেন, দেশ-বিদেশে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশের মানুষের সেবায় নিয়োজিত হবেন। তাই এসএসসিতে নিয়েছেন বিজ্ঞান গ্রুপ। বিজ্ঞানের বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন তাহমিদ। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) প্রকাশিত ফলাফলে গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
জানতে চাইলে তাহমিদ হাসান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমার ইচ্ছা চিকিৎসক হবো। বিজ্ঞান বিভাগের বিষয়গুলোর উপর গুরুত্ব দিয়ে পড়াশোনা করেছি। রুটিন মেনে চলেছি। সবসময় চেষ্টা করেছি পড়ায় গ্যাপ না দেওয়ার। প্রতিদিনই কোনো না কোনোভাবে পড়াশোনার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘কয়েকটা বিষয় নিয়ে ভয়ে ছিলাম। জিপিএ ফাইভ ছুটে যাবে কি না, সে বিষয়গুলোতেও জিপিএ ফাইভ পেয়েছি। এজন্য খুবই ভালো লাগছে। সামনের পথটা সহজ হবে আশা করি। এই ফলাফল স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে আমাকে অনুপ্রেরণা যোগাবে। এ যাত্রায় আমার বাবা-মায়ের সহযোগিতা ছিল অতুলনীয়। তারা সবসময় সহযোগিতা করেছেন।’
তাহমিদ হাসানের বাবা মারুফ আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ছেলেটা পড়াশোনার প্রতি মনোযোগী। তাকে সেভাবে পড়াশোনার কথা বলতে হয় না, নিজ থেকে করে। আজকে দীর্ঘ দিনের পরিশ্রম ফলাফল হাতে এসেছে, এতে আমরা সবাই খুশি।’

বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, ‘অভিভাবক হিসেবে ছেলেকে যতটুকু গাইডলাইন দেওয়া দরকার ছিল, সবটুকুই করেছি। ছেলে মনোযোগী থাকায় কোনো চাপ দিতে হয়নি। নিজের আগ্রহে ভালো করার চেষ্টা করেছে। তাই কষ্টের ফসল পেয়েছে। সামনের দিকে আরও সাফল্য কামনা করছি।’
তাহমিদ হাসানের মতো তার বন্ধু শামীম শাহরিয়ারও পেয়েছেন গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘পাঠদানের ক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষকরা খুবই আন্তরিক ছিলেন। সবসময় খোঁজখবর নিতেন। কোনো কিছুতে সমস্যায় পড়লে শিক্ষকদের স্মরণ করতাম। তাদের সহযোগিতাটা অতুলনীয় ছিল। শিক্ষকদের এ অবদান সারাজীবনের মনে থাকবে।’
এরকম সফলতার গল্প শুধু তাদের নয়। ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের প্রায় সব শিক্ষার্থীর। তাদের মনে আনন্দ আর উচ্ছ্বাস। সঙ্গে রয়েছে বাঁধভাঙ্গা উল্লাস।
আরেক শিক্ষার্থী তাবরিজ ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘গত দুই বছর ধরে চেষ্টা করেছি। ভালো ফলাফল করেছি। সামনে এইচএসসিতেও কষ্ট করতে হবে। ভবিষ্যৎ সুন্দর করতে চাই।’
তাবরিজের সঙ্গে আসা তার মা ফারজানা ববি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘অনেক অনেক খুশি লাগছে। সন্তানের দীর্ঘ দিনের পরিশ্রম সফল হয়েছে, সব বিষয়ে জিপিএ ফাইভ পেয়েছে।’
ঢাকা রেডিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মো. বাকি বিল্লাহ বলেন, ‘আমি মেজবাউল করিম নামে একজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। পরীক্ষায় আনতে পারব কি না। পরীক্ষার দেড় মাস আগে তার মা মারা গিয়েছিল। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। আমি দুইবার তার বাসায় গিয়েছি। মেজবাহ বলল, স্যার আমি কি পারব? আমি তাকে সাহস দিয়েছি। বুঝিয়েছি, তুমি পারবা। আজ প্রকাশিত ফলাফলে দেখি মেজবাউল জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। খুব ভালো লাগছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এভাবে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে গাইড করেছি। তাদের সাহস যুগিয়েছি যে, তোমরা পারবা। তোমাদের দ্বারাই সম্ভব। শিক্ষার্থীদেরকে লেগে থাকতে বলেছি, তারা তাই করেছে। শিক্ষার্থীদের সুন্দর ফলাফলে আমাদের খুবই ভালো লাগছে।’

বিপর্যয়ের মাঝেও আকর্ষণীয় ফলাফল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির
গত ১৫ বছরের তুলনায় সারাদেশে এবার ফল বিপর্যয়ের মাঝেও আকর্ষণীয় ফলাফল করেছে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠানটির এসএসসিতে পাসের হার ৯৯.৮২ শতাংশ। জিপিএ ফাইভ প্রাপ্তির হার ৭৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি থেকে এবছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন ৫৬৩ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে পাস করেছেন ৫৬২ জন। জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন ৪২১ জন। পাসের হার ৯৯.৮২ শতাংশ। গত বছরের চেয়ে জিপিএ ফাইভ বেড়েছে ১৬টি।
বিজ্ঞান বিভাগের ৪৫৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন ৩৯৩ জন। বাণিজ্য বিভাগের ৮০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন ২৬ জন আর মানবিকের ২৬ জনের মধ্যে দুজন পেয়েছেন জিপিএ ফাইভ।
এছাড়া ইংরেজি ভার্সনের দিবা শাখায় ৫৯ জনের মধ্যে ৫৬ জন জিপিএ ফাইভ এবং প্রভাতি শাখার ৬৩ জনের মধ্যে ৫৯ জন জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন। অন্যদিকে অকৃতকার্য হয়েছেন মাত্র একজন শিক্ষার্থী।
জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাবের হোসাইন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আজকে আমাদের আনন্দের দিন। কলেজের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দীর্ঘ পরিশ্রমের ফসল পেয়েছি, আমরা সবাই পরিশ্রম করেছি। এই রেজাল্টের পেছনে কিছু নতুনত্ব ছিল। সম্মিলিতভাবে সবাই মিলে চেষ্টা করেছি। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের ভূমিকা পালন করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে যে শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন, তিনি টেস্ট পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেছিলেন। আমার ধারণা, কারিগরি কোনো ত্রুটি বা অন্য কোথাও ভুল হয়েছে। ওই শিক্ষার্থী ফেল করার মতো নয়। বিষয়টা দেখার জন্য আমরা বোর্ডে চ্যালেঞ্জ করব।’

সারাদেশে কমেছে পাসের হার
এবার গড় পাসের হার ৬৮.৪৫ শতাংশ। গত বছর পাসের হার ছিল ৮৩.০৪ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ বছর পাসের হার কমেছে ১৪.৯৫ শতাংশ। এবার মোট জিপিএ ফাইভ পেয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন শিক্ষার্থী। গত বছর পেয়েছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন। গত বছরের তুলনায় এবার জিপিএ ফাইভ কমেছে ৪৩ হাজার ৯৭ জন।
এ বছর জিপিএ ফাইভ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী ৭৩ হাজার ৬১৬ জন এবং ছাত্র ৬৫ হাজার ৪১৬ জন। অর্থাৎ, জিপিএ ফাইভ পাওয়ার ক্ষেত্রে এবারও এগিয়ে মেয়েরা।
এবার সর্বোচ্চ পাসের হার রাজশাহী বোর্ডে ৭৭.৬৩ শতাংশ। এরপর রয়েছে যশোর বোর্ডে ৭৩.৬৯ শতাংশ, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৭২.০৭ শতাংশ, সিলেট বিভাগে ৬৮.৫৭ শতাংশ, ঢাকা বোর্ডে ৬৭.৫১ শতাংশ, দিনাজপুর বোর্ডে ৬৭.০৩ শতাংশ, কুমিল্লা বোর্ডে ৬৩.৬০ শতাংশ, ময়মনসিংহ বোর্ডে ৫৮.২২ শতাংশ এবং সবচেয়ে কম পাসের হার বরিশাল বোর্ডে ৫৬.৩৮ শতাংশ।
মাদরাসা বোর্ডে পাসের হার ৬৮.০৯ শতাংশ ও কারিগরি বোর্ডে ৭৩.৬৩ শতাংশ।
চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় সব শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে ফেল করেছে ৬ লাখ ৬৬০ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৩ লাখ ২৪ হাজার ৭১৬ জন ছাত্র এবং ২ লাখ ৭৫ হাজার ৯৪৪ ছাত্রী।
চলতি বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়েছিল গত ১০ এপ্রিল। শেষ হয় ১৩ মে। এবার নিয়মিত-অনিয়মিত মিলিয়ে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন। এবার ফল তৈরি হয়েছে ‘বাস্তব মূল্যায়ন’ নীতিতে।
এসএইচ/এএইচ











































