বুধবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

ভোজ্যতেলের বাজারে ‘অদ্ভূত তেলেসমাতি’

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:০২ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

মুদি দোকানে সয়াবিন তেল কিনতে গিয়ে সমস্যার মুখে পড়েছেন— পুরান ঢাকার বাসিন্দা সোলাইমান। তিনি জানিয়েছেন, পরিচিত দোকানে সয়াবিন তেল নেই, আশপাশের দোকানেও খুঁজেছি, কিন্তু পাইনি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর একটি দোকানে পাওয়া গেল, হাফ লিটার। কিন্তু বিক্রেতা বোতলের গায়ের দামের চেয়ে, বেশি মূল্য হাঁকিয়েছেন। বাধ্য হয়ে কিনতে হলো— বিক্রেতার হাঁকানো দামেই। 

শুধু সোলাইমান নন, একই সমস্যায় ভুগছেন— রাজধানীর বিভিন্ন দোকানে সয়াবিন তেল কিনতে যাওয়া অনেক ক্রেতা। তাদের মধ্যে কেউ বাড়তি দামে কিনছেন, আবার কেউ ফিরছেন খালি হাতে। অভিযোগ করছেন, বাজারে মিলছে না, বোতলজাত ভোজ্যতেল। তবে, আগে ক্রেতাদের আগ্রহ না থাকলেও, এখন চাহিদার তুঙ্গে খোলা তেল।


বিজ্ঞাপন


সম্প্রতি, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন, ‘আমার পরিবার গত এক মাস ধরে বাজার থেকে খোলা সয়াবিন তেল কিনে খাচ্ছে, কারণ খোলা ও বোতলজাত সয়াবিন তেলের মান এক, শুধু দামই আলাদা।’ 

একই সুরেই কথা বলছেন রাজধানীর ব্যবসায়ীরাও। তারা জানিয়েছেন, খোলা সয়াবিন তেল ব্যবহার করছেন। তবে সয়াবিন তেল কিনতে যাওয়া সোলাইমান বলছেন, ব্যবসায়ীরা চতুর। বাণিজ্য উপদেষ্টার কথার সঙ্গে তাল মিলেয়ে চলছেন। এই সমস্যা আজকের নয়, প্রতি বছরই এমন সমস্যা তৈরি হয়। গত বছরও এক সময় সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছিল না। বড় ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর জন্য এমনটা করে, কিন্তু কেউ ব্যবস্থা নেয় না।

কিছু বাজারে দেখা যাচ্ছে অদ্ভুত পরিস্থিতি—বোতলজাত তেল মিললেও তা শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হচ্ছে। তেল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাজারে দীর্ঘদিন ধরেই সরবরাহ কম, এবং বর্তমানে শুধুমাত্র কিছু কোম্পানির অল্প বোতলজাত তেল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, সতর্ক থাকতে হয় এবং তেলের চুরি ঠেকানোর জন্য বোতলগুলো বেঁধে রাখা হয়।


বিজ্ঞাপন


রমজানের আগে ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানোর জন্য কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার ঘটনা নতুন নয়। গত বছরও রমজানের আগে ব্যবসায়ীরা তেলের দাম বাড়ানোর জন্য এমন কৌশল গ্রহণ করেছিলেন। এবারও তেমনটাই হচ্ছে। ৯ ডিসেম্বর সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৮ টাকা বাড়ানো হয়। বর্তমানে খোলা সয়াবিন তেল প্রতি কেজি ১৮৫ টাকা, খোলা পাম তেল প্রতি কেজি ১৭৫ টাকা, এবং বোতলজাত ৫ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৮৪০ থেকে ৮৫০ টাকা, ১ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৭৫ টাকা। এখন আশঙ্কা করা হচ্ছে— রোজার আগেই আবার তেলের দাম বাড়বে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তারা যথেষ্ট সয়াবিন তেল পাচ্ছেন না। বিভিন্ন কোম্পানি তেলের সরবরাহে অনীহা প্রকাশ করছে, ফলে বাজারে সংকট তৈরি হচ্ছে। তারা বলেন, “ডিলারদের অর্ডার দেওয়া হলে এক থেকে দুই কার্টন তেল পাওয়া যায়, যা সরবরাহের অভাবকেই নির্দেশ করে।”

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রতি বছরই মিলাররা রমজানের আগে তেলের দাম বাড়ানোর জন্য সরবরাহ কমিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, পরে দাম বাড়িয়ে দেয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারের পক্ষ থেকে ভোজ্যতেলের দাম স্থিতিশীল রাখতে ভ্যাট ছাড় দেওয়া হয়েছে, কিন্তু মিলাররা দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

এদিকে, ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন জানায়, সরকার একটি নীতিমালা অনুসরণ করে, সয়াবিন তেলের দাম সময়মতো বৈশ্বিক বাজার ও অভ্যন্তরীণ খরচের সঙ্গে সমন্বয় করতে বলে। তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে ডলার এবং অন্যান্য খরচ বেড়েছে, তাই তারা সরকারের নির্দেশনা মেনেই দাম সমন্বয়ের জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন।

দেশে প্রতি বছর ভোজ্য তেলের চাহিদা ২৩ থেকে ২৪ লাখ টন, এর মধ্যে ২০ থেকে ২১ লাখ টন তেল আমদানি করতে হয়। রমজানে চাহিদা বাড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টন। সরকার রমজানের আগে তেলের দাম বাড়াতে চায় না, তাই রোজা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভ্যাট ছাড় অব্যাহত রাখা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব জানিয়েছেন, সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেই এবং বর্তমান দামে সয়াবিন বিক্রি করতে হবে।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, “এটি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কাজ। তারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট কাটছে। সংকটের কোনো কারণ নেই। বিগত সময়ে দেখা গেছে, কিছু কোম্পানি দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিলে সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তারপর দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করে। এবারও তা ঘটছে।” তিনি সরকারের কাছে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

টিএই/এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর