চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। ৫৫ সদস্যের বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিদল সোমবার (৭ এপ্রিল) বিকেল ৩টার দিকে জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে পৌঁছেন। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত ঢাকায় শুরু হওয়া ৪ দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনে আসা যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ ৪০টি দেশের অর্ধশতাধিক বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রথম দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনে আসেন।
এসময় বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল কার্যালয়ে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল সম্পর্কে তুলে ধরে ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। এরপর তারা জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল গাড়িবহর নিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখেন। এসময় বঙ্গোপসাগর উপকূলে কীভাবে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হয় সেই বিষয়েও আলোকপাত করা হয়।
বিজ্ঞাপন
বিকেল ৫টার দিকে জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রশাসনিক ভবনে জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নানা সুবিধা, ইতোমধ্যে কারা বিনিয়োগ করেছেন, কেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করবেন, বিগত বছরগুলোর সফলতার চিত্রসহ বিনিয়োগকারীদের সামনে নানা দিক তুলে ধরেন জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ফারুক। এসময় তিনি জানান, ইতোমধ্যে জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হলো বার্জার, এশিয়ান পেইন্টস, নিপ্পন অ্যান্ড ম্যাকডোনাল্ড স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, জাইহং মেডিকেল, আদানী, হেলথকেয়ার, উইলমার, ম্যারিকো, এসিআই, বিএসআরএম, বিজিএমইএ, বসুন্ধরা গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, ইফাদ অটোস লিমিটেড।
তিনি আরও জানান, জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পের (প্রাইড) আওতায় ১ জানুয়ারি ২০২১ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত ৪ হাজার ৩ শত ৪৭. ২১ কোটি টাকা বরাদ্দে বেসরকারি বিনিয়োগ প্রাধান্য, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং টেকসই পরিবেশের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং প্রাইড প্রোজেক্টের আওতায় মেজর ইনটারভেনশানসগুলো হলো ৩০ কিলোমিটার সড়ক, ৩১ কিলোমিটার ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক, পাওয়ার নেটওয়ার্ক, টেলিকম নেটওয়ার্ক, গ্যাস নেটওয়ার্ক, স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার, চাইল্ড কেয়ার সেন্টার, ইনভেস্টর ক্লাব, এনভায়রনমেন্টাল ল্যাব, এ্যানার্জি রেসপন্স সেন্টার, সিকিউরিটি এমিনিটিস, কন্সট্রাকশান অব সিইটিপি, রুপটপ এন্ড প্লোটিং সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট, সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজম্যান্ট প্লান্ট, ডিসেলাইনেশান প্লান্ট, ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল সিমবাইওসিস, স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ২২০০০ ওয়ার্কার্স-ইনক্লুডিং ২০০০ ইন্টারভেনশান এরিয়া পিপল, ভাউচার প্রোগ্রাম, গ্র্যান্ট ফর গ্রিন ইন্ট্রাস্ট্রিজ।
বিজ্ঞাপন
সবশেষে প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার প্রেস ব্রিফ্রিংয়ে বলেন, প্রায় ৬০ জনের মতো বিনিয়োগকারী চায়না, সাউথ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ড, ইন্ডিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আজ এসেছেন। তারা প্রথমে চট্টগ্রামের আনোয়ারা কোরিয়ান ইকোনমিক জোন তারপর জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘুরে দেখেছেন। এখানে বিনিয়োগকারীদেরকে ধারণা দেওয়া হয়েছে যে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে কি কি সুযোগ সুবিধা আছে, এখানে পর্যাপ্ত ল্যান্ড আছে, সেসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাদের সামনে তুলে ধরেছেন। বিনিয়োগের জন্য যেসব চ্যালেঞ্জগুলো আছে সেই চ্যালেঞ্জগুলো অ্যাড্রেস করা হচ্ছে, এখানে পানির সমস্যা আছে সেটা অ্যাড্রেস করা হচ্ছে, শ্রমিক সমস্যা ছিল সেটাও কমে এসেছে, আধুনিক হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে; পাঁচতারা মানের ইনভেস্টর ক্লাব তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া অসংখ্য ফ্যাসিলিটিস বিনিয়োগকারীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এখানে যদি তারা বিনিয়োগ করেন তাহলে তাদের বিনিয়োগটাকে কাজে লাগাতে পারবেন। বিনিয়োগের যে অপার সম্ভাবনা আছে সে সম্ভাবনা তারা এক্সপ্লোয়েট করতে পারবেন, এক্সপ্লোয়েট করে তাদের পুঁজির সদ ব্যবহার করতে পারবেন।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে বিনিয়োগকারীরা আজকে তারা দেখে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছেন। অতীতেও আমরা দেখেছি এরকম বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে এসেছিলেন কিন্তু তাদের আগমনটা মূলত সীমাবদ্ধ ছিল পাঁচতারা হোটেলের বিভিন্ন সভা সেমিনারের মধ্যে অথবা বাংলাদেশ থেকে নামকাওয়াস্তে গিয়ে বিদেশে কিছু রোড় শো করা হয়েছে। কিন্তু এবারই প্রথমবারের মতো বিনিয়োগকারীদেরকে সরেজমিনে মাঠে নিয়ে আসা হয়েছে। যাতে করে তারা দেখতে পারেন আসলেই তারা কোথায় বিনিয়োগ করবেন, কোথায় ফ্যাক্টরি স্থাপন করবেন এবং ফ্যাক্টরি স্থাপন করলে কি কি সুবিধা হতে পারে এবং কি কি অসুবিধা হতে পারে। এগুলো যখন তারা সরেজমিনে দেখলেন আমরা বিশ্বাস করি বিনিয়োগকারী যারা আছেন সম্ভাব্য তাদের বিনিয়োগের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে আজকের এই সফরটা অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
প্রসঙ্গত, জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ৩৩ হাজার ৮০৫ একর বিস্তৃত। অর্থনৈতিক অঞ্চলটি বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে হচ্ছে। এখানে বিশেষ করে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির জন্য নির্ধারিত ৫০০ একরের একটি অঞ্চল। এছাড়াও এই অঞ্চলে কৃষিপণ্য এবং কৃষি-প্রক্রিয়াকরণ যন্ত্রপাতি, সমন্বিত বস্ত্র, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, জাহাজ নির্মাণ, মোটরবাইক আনুষঙ্গিক, খাদ্য ও পানীয়, রঙ ও রাসায়নিক, কাগজ এবং সম্পর্কিত পণ্য, প্লাস্টিক, হালকা প্রকৌশল এবং ওষুধ শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্প স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
প্রতিনিধি/এসএস