মিকা দেওয়ান। রাঙামাটির কাউখালীর উপজেলার ৩ নম্বর ঘাগড়া ইউনিয়নের জুনুমাছড়ি গ্রামে থাকেন তিনি। ২০০৬ সালে দুবাইয়ের এক প্রবাসীর অনুরোধে উটের গায়ে ব্যবহৃত বিশেষ বেল্ট তৈরির কাজ শুরু করেন। তার দেখাদেখি একই কাজ শুরু করেছেন ওই এলাকার অর্ধশত পাহাড়ি নারী। এখন এলাকার অন্য নারীরা এই কাজে করেই সংসারের হাল ধরেছেন।
মিকা দেওয়ানের হাত ধরেই ওই গ্রামের এলি চাকমা, সুমা চাকমা, সোনামিকা চাকমাসহ অন্যান্য নারীরা হাতের তৈরি এই কাজ শিখেছেন। আবার তৈরি করা এসব বেল্ট সেলাইয়ের কাজে জড়িত আছেন মনিপ্রভা দেওয়ান।
বিজ্ঞাপন
দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে এলাকার ৪০-৫০ জন নারী এই কাজের সঙ্গে জড়িত। তবে তাদের আক্ষেপ, ২০০৬ সালের শুরুর দিকে প্রতি সেট বেল্ট বুনায় তারা মজুরি পেতেন ১০০০ টাকা। কিন্তু এখনও সেই ১০০০ টাকার বেশি মজুরি বাড়েনি।
মিকা দেওয়ান জানান, তাদের তৈরি এসব বেল্ট স্থানীয় এক মহাজনের মাধ্যমে দুবাই যায়। সেখানকার এক প্রবাসী এসব কিনে নিয়ে দুবাইয়ে বিক্রয় করে থাকেন। যেটা স্থানীয় উট কিংবা ঘোড়ার গায়ে ব্যবহৃত হয়ে থাকে৷ তবে জীবিকা তাগিদের বেল্ট বুনলেও পরিশ্রম অনুযায়ী এখন সেই কাঙ্ক্ষিত পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না তারা। এক সেট বেল্টের মধ্যে ছোট-বড় সাইজের ১৫ বেল্ট থাকে। আবার এই ১৫ বেল্ট বুনে পান মাত্র ১০০০ টাকা। পুরো মাসে সর্বসাকুল্যে ৩ সেট বেল্ট বানাতে পারেন। সেক্ষেত্রে মাসে গড় আয় ৩০০০ টাকা। কিন্তু এ পারিশ্রমিকে দিন দিন তাদের সংসারের চাকা অচল হয়ে আসছে।
সরকারি সহায়তা কিংবা অন্য কোনো উদ্যোক্তা হতে না পারলে পেশা বদলের কথা ভাবছেন মিকা দেওয়ান।
এলি চাকমা জানান, মিকা দেওয়ানের কাছেই আমরা বেল্ট বুনার কাজ শিখেছি। এক যুগের বেশি সময় ধরে আমরা এ কাজে জড়িত। বেল্ট বুনেই সংসারের হাল ধরেছেন এলাকার অনেক নারী।
বিজ্ঞাপন
সুমা চাকমা নামে আরেক নারী বলেন, গ্রামের মেয়েরা অনেক দরিদ্র। তাই অবসরে বেল্ট বুনে তাদের সংসার চলে। তবে শুরু থেকেই তারা ১ হাজার টাকা মজুরি পাচ্ছেন। দীর্ঘদিন এই পেশায় জড়িত থাকলেও তাদের মজুরি বাড়েনি।
মনিপ্রভা দেওয়ান বলেন, প্রতিসেট মোট সাতটি বেল্টটি সেলাই করতে হয়৷ একটি বেল্ট সেলাই করে পাই ১০ টাকা। পুরো সেট সেলাই করে পাই ৭০ টাকা। এরমধ্যে সুতার খরচও নিজের৷ এভাবে কাজ করে আমাদের এখন আর পোষায় না। সংসার বাঁচাতে করতে হয়।
স্থানীয় সংরক্ষণ নারী ইউপি সদস্য মিনু রানী চাকমাও বলছেন, এলাকার এসব নারীরা দীর্ঘদিন এ কাজ করে আসলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মজুরি না বাড়ায় পরিশ্রমের মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সরকারি বিভিন্ন দফতরে আলোচনা করেও এখনও কোনো সহায়তা পাননি এসব প্রান্তিক পাহাড়ি নারীরা।
জানতে চাইলে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ও মিকা দেওয়ানদের মহাজন ঝর্ণা খীসা বলেন, আমি বিভিন্ন সময়ে নারীদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। জেলা পরিষদ থেকেও সরকারি সহায়তার দেওয়ার চেষ্টা করছি, এখনও কিছু পাওয়া যায়নি। আর সুতার দাম বাড়ার কারণে এখন বেল্ট বানানোর ব্যবসা করে আমাদেরও তেমন পোষায়। তবুও অনেকদিন ধরে জড়িত আছি, তাই এখনও সম্পৃক্ত আছি।
প্রতিনিধি/এইচই