নেত্রকোনার সদর উপজেলার মৌগাতি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান খান আবুনি ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম রেনু মাস্টারের বিরুদ্ধে ভিজিএফের বিনামূল্যে ১০ কেজি করে চাল বিতরণে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তাদের কারসাজিতে ইউনিয়নের এক ও দুই নম্বর ব্লকের ছয়টি ওয়ার্ডের গ্রামের মানুষ চাল পাননি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
ওই ব্লকের অনেক গ্রামের মানুষ চাল নিতে গিয়ে রোববার (২৩ মার্চ) খালি হাতে ফিরেছেন। এতে অনেকের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
চাল বিতরণে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলেন মৌগাতি গ্রামের রাহেলা খাতুন (৭৫), শরীফ মিয়া (২৭), হাফিজ মিয়া (৩৫), জায়েদা (৪৫), জুয়েল (৩৫) ও মাসুদ মিয়া (৩৫), তেলিগাতী গ্রামের শাহানা খাতুন (৬৫), হলুদাটি গ্রামের কুসুমা (৬০), নাটোরকোনা গ্রামের আসাদ মিয়া (৫৩) ও সবদুল গণি (৫৭), বাদেসমুনদিয়া গ্রামের কাসেম (৬৫), চচুয়া গ্রামের রতন মিয়া (৪৪) সহ আরও অনেকে।
তাদের অভিযোগ, ইউনিয়ন পরিষদে চাল বিতরণের সময় ইউপি চেয়ারম্যান, বিএনপির সভাপতি, ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ (সচিব) তারা পরস্পরের যোগসাজসে মৌগাতি ইউপি’র ৩নং ব্লকের হলুদাটি, ফইচকা, গর্দি, চাউরকোনা, কাষ্ণনপুর, বড় গর্দি, ছোট গর্দি, জয়নগর, কুশলগাঁও, ফইচকা বড়বাড়ি গ্রামগুলো নিজ ব্লকের আওতাভুক্ত হওয়ায় এসব গ্রামের ৯৯ ভাগ লোকজনের মাঝে চাল দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে ১নং ব্লকের পূর্বডহর, হাফানিয়া, জামাটি, তেলিগাতি, টিকুরিয়া, বরজামাটি, আসনউড়া, ফাদুলিয়া, পশ্চিম ফাদুলিয়া, মইজজাটি, সাতপাটি এবং ২নং ব্লকের মৌগাতি, নাটোরকোনা, বাদেসমুনদিয়া, চুচুয়া, নগুয়া, মারাদীঘি, পশ্চিম মারাদীঘি, কাটপুরা, বনগাঁও, যোগাটি, নোয়াপাড়া গ্রামগুলোর শতকার ৮ ভাগ দুস্থদের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়েছে। এসব গ্রামের ৯২ ভাগের বেশি নারী-পুরুষ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চাল না পেয়ে ফিরে এসেছেন। তাদেরকে ভিজিএফের চাল থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। দুটি ব্লকের নারী ইউপি সদস্যসহ আট সদস্যকে সন্তুষ্ট করতে তাদের পছন্দের ৮ ভাগ লোকজনকে চাল দেওয়া হয়েছে।
তাদের মধ্যে মৌগাতি গ্রামের শরীফ মিয়া, হাফিজ মিয়া ও মাসুদ মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ভিজিএফের চাল বিতরণের মাস্টার রোল পর্যলোচনা করলে দেখা যাবে ভালো অবস্থা সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গসহ ৩নং ব্লকের মানুষের সংখ্যাই শতকরা ৯০ ভাগের বেশি হবে। অনেক বয়স্ক নারী ও পুরুষের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে। ইউনিয়ন পরিষদের অবস্থান, বিএনপির সভাপতি ও চেয়ারম্যানের বাড়ি কাছাকাছি হওয়ায় তারা সব সময়ে প্রভাব খাটান।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে মোগাতি ইউপি বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম রেনু বলেন, যারা প্রাপ্য তাদেরকেই ভিজিএফ কার্ড দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশ কার্ড আমাদের নেতাকর্মীরাই বিতরণ করেছে। কার্ডধারী নির্বাচন ও বিতরণে কোনো অনিয়ম বা স্বজনপ্রীতি হয়নি। সঠিক নিয়ম মেনেই চাল বিতরণ করা হয়েছে। চাল বিতরণের সময় অনেক মানুষ এসে ভিড় করেছিল, গরিব মানুষের পাশাপাশি অনেক স্বচ্ছল মানুষও চাল নিতে এসেছিল। তাই একটু হট্টগোল হয়েছে।
ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সচিব) লিংকন বলেন, সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে যথাযথ নিয়মে দুঃস্থদের নামেই ভিজিএফ কার্ড করা হয়েছে। আবার ট্যাগ অফিসার, জনপ্রতিনিধি, দলীয় নেতাকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সামনেই সুষ্ঠুভাবে চাল বিতরণ করা হয়েছে। এতে কোনোরকমের অনিয়ম হয়নি। তবে বিরোধী কিছু মানুষ অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে, তাদের অভিযোগ সত্য নয়।
চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান খান আবুনির মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আসমা বিনতে রফিক বলেন, ভিজিএফ চাল শুধু তারাই পাবে যাদের কার্ড আছে। কার্ড তৈরি করার ক্ষেত্রে যদি দুঃস্থদের বাদ দিয়ে স্বচ্ছলদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে থাকে, এমন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইএ