বৃদ্ধ মোসলেম উদ্দিন প্রধান। পথে-প্রান্তরে ঘুরেন হ্যান্ডমাইক নিয়ে। নামাজের দাওয়াত দেন মুসলিমদের। এভাবে ১১ বছর ধরে হ্যান্ডমাইকে নামাজের আহ্বান করে চলছেন তিনি। কিন্তু পবিত্র এই মাহে রমজানে এসে নষ্ট হয়েছে তার মাইকটি। অর্থাভাবে কিনতেও পারছেন না। বন্ধ হয়েছে নামাজের দাওয়াত দেওয়া। কোনো দানশীল ব্যক্তির কাছে একটি হ্যান্ডমাইকে পেলে আবারও সেই দাওয়াতে ফিরে আসতে চান মোসলেম উদ্দিন।
রোববার (৯ মার্চ) গাইবান্ধার মীরপুর বাজারে মাইক হাতে দেখা যায় মোসলেম উদ্দিনকে। তখন তার চোখে-মুখে হতাশার ছাপ। কারণ একটাই, মাইক নষ্টে শব্দ দিতে পারছেন না। ফলে নামাজের আহ্বান করতে ব্যর্থ তিনি।
বিজ্ঞাপন
বৃদ্ধ মোসলেম উদ্দিন প্রধানের বাড়ি গাইবান্ধার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের ভগবানপুর গ্রামে। এ গ্রামের মৃত মহিম উদ্দিন প্রধানের ছেলে তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছেলে-মেয়েসহ ৭ সন্তানের জনক মোসলেম উদ্দিন প্রধান। বয়স যখন ৪০, তখন পাটের ব্যবসা করে চলছিল তার সংসার। এরই মধ্যে এ ব্যবসায়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এরপর জীবিকার তাগিদে ঢাকায় রিকশা চালাতেন। সেখানে তাকে নামাজের তাগিদ দিতেন মসজিদের মুসল্লিরা। এরপর শুরু করেন ৫ ওয়াক্ত নামাজ। সেই থেকে আর কখনও নামাজ বাদ দেন না। ধীরে ধীরে আল্লাহ ভক্ত হয়ে ওঠেন।
এরই ধারবাহিকতায় ১১ বছরে আগে ঢাকা ছেড়ে ফিরে আসেন বাড়িতে। নিজের টাকায় কেনেন একটি ব্যাগ ও হ্যান্ডমাইক। প্রত্যেক দিন সকালে বেরিয়ে পড়েন বিভিন্ন শহর ও হাট-বাজারে। পা যেন তার বাহন। হেঁটে চলেন এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তরে। কাজ একটাই, নামাজের জন্য সবাইকে দাওয়াত দেওয়া। এছাড়া আজানের আগ মুহূর্তে হ্যান্ডমাইকে নামাজের আহ্বান করে চলেছেন। বিশেষ করে সাদুল্লাপুর উপজেলা শহরে তাকে মাইকিং করতে দেখেনি, এমন মানুষ বোধ হয় কমই আছে। এছাড়া মীরপুরহাট, ধাপেরহাট, ঘোগার বাজারসহ আরও বেশ কিছু এলাকায় হ্যান্ডমাইক নিয়ে ঘুরতে দেখা গেছে এই মোসলেমকে।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে মোসলেম উদ্দিন প্রধান বলেন, কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, নিজে নামাজ পড় এবং অন্যকেও নামাজ পড়তে বলো। ইসলামের এই আদর্শ মেনে হ্যান্ডমাইকে হেঁটে হেঁটে মুসলমানদের নামাজ পড়ার আহ্বান করছি। এ কাজটি স্বেচ্ছাশ্রমে করা হচ্ছে। কিন্তু চলতি পবিত্র মাহে রমজানে এসে আমার মাইকটি নষ্ট হয়েছে। এ কারণে নামাজের দাওয়াত দিতে পারছি না। এতে কেউ সহযোগিতা করলে ভালো হতো।
এ বিষয়ে সাদুল্লাপুর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, মোসলেম চাচা কয়েক বছর ধরে হ্যান্ডমাইক নিয়ে ঘুরে ঘুরে মানুষকে নামাজের দাওয়াত দেন। এটি একটি খুবই ভালো কাজ বলে মনে করছি। এই মানুষটির পাশে দাঁড়ানো দরকার।
প্রতিনিধি/এসএস