শুষ্ক মৌসুম এলেই মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের হাওর-বাঁওড়, খাল-বিল নদী-নালার পানি শুকিয়ে যায়। এর ফলে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভর করতে হয় এ এলাকার মানুষের। কিন্তু এখন ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও নিচে নেমে গেছে। এতে টিউবওয়েল থেকেও উঠছে না পানি। ফলে তীব্র হয়েছে সুপেয় পানির সংকট। বাজার থেকে কিনে পানি খেতে হচ্ছে এলাকাবাসীর। এতে করে বিপাকে পড়েছেন নিন্মআয়ের মানুষ।
সম্প্রতি কমলগঞ্জ পৌর এলাকার নছরতপুর, বরগাছ, আলেপুর ও পতনঊষার, শমসেরনগর, সদর ইউনিয়ন, মুন্সীবাজার, রহিমপুরসহ কয়েকটি ইউনিয়নে অনেক টিউবওয়েলে পানি উঠছে না বলে জানিয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা।
বিজ্ঞাপন
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে এমনিতেই পানির স্তর নিচে নেমে যায়। তার ওপর হাওর-বাঁওড়, খালবিল, নদীনালার পানি শুকিয়ে যায়। ফলে বোরো আবাদে সেচ-সংকট দেখা দেয়। কৃষকরা বাধ্য হয়ে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে সেচ কাজ চালান। এছাড়াও খাল-বিল, পুকুর শুকিয়ে ফেলা, অপরিকল্পিতভাবে টিউবওয়েল স্থাপনসহ ভূগর্ভস্থের পানির স্তর নেমে যাওয়ার কারণে পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। এ সংকট বৈশাখ মাস পর্যন্ত থাকে।
আরও পড়ুন
কমলগঞ্জ পৌর এলাকার বাসিন্দা মো. তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের এলাকায় একদম পানি পাওয়া যাচ্ছে না। একাধিক ডিপ টিউবওয়েলের কারণে এ অবস্থা। আমার বাড়ি থেকে পাঁচশত ফুট দূরত্বে ৪টা শ্যালো মেশিন। তারা দিনরাত ২৪ ঘণ্টা পানি উত্তোলন করেন। আর আমরা পানির জন্য হাহাকার করি। বাজার থেকে পানি কিনে খেতে হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
মুন্সীবাজার এলাকার গৃহবধূ রোজী আক্তার বলেন, সংসারে পাঁচজন সদস্য। বাড়ির টিউবওয়েলটির গভীরতা ১৭০ ফুট। এক বালতি পানির জন্য হাত ও কোমরে ব্যথা হয়ে যায়। সংসারে ছোট বাচ্চা। অনেক পানির দরকার।
পতনঊষার ইউনিয়নের রশিদপুর গ্রামের সায়েক আহমদ বলেন, আমাদের এলাকায় প্রায় ১০০ পরিবারের টিউবওয়েলে পানি আসে না। আমার দু’টি টিউবওয়েল আছে। এখন দু’টি টিউবওয়েলেই পানি আসে না। অনেক কষ্ট করে পানি সংগ্রহ করতে হয়।
কমলগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুজন আহমেদ বলেন, শুষ্ক মৌসুম এলেই এ সমস্যা হয়। আসলে বোরো মৌসুমে সেচ দিয়ে পানি তোলার কারণে পানির স্তর নেমে যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকতা জয়ন্ত কুমার রায় বলেন, দিনে শ্যালো মেশিন না চালিয়ে রাতে চালালে ভালো হয়। পানিও বেশ ভালো পাওয়া যাবে। এখন সাধারণ নলকূপে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। তবে নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে শ্যালো মেশিন চালালে সাধারণ মানুষের পানি সংকটের সমস্যা থাকবে না। তাছাড়া এখন বোরো আবাদ হচ্ছে, বৃষ্টিও নাই। এলাকার কৃষকরা শ্যালো মেশিন মাধ্যমে পানি নিচ্ছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, আমার কাছে একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তদন্তক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মৌলভীবাজার জনস্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালেদুজ্জামান বলেন, আসলে বছরের এ সময়টায় পানির গভীরতা কমে যায়, এ জন্য অগভীর অনেক নলকূপে পানির সংকট দেখা যায়।
প্রতিনিধি/এসএস