বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

২০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে ‘মেয়েদের মন’

জেলা প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ
প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:২৬ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

মাত্র ২০ টাকায় মিলছে মেয়েদের মন। শুনে অবাক হচ্ছেন? তবে এটাই সত্যি। কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী গুরুদয়াল সরকারি কলেজে পিঠা উৎসবের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে এই পিঠা। ‘মেয়েদের মন ২০ টাকা’ নামের এই বিশেষ পিঠাটি দেখতে ও স্বাদ নিতে ভিড় জমিয়েছেন শত শত মানুষ। কেউ খেয়েই বলছেন, ‘মন তো দারুণ—২০ টাকার চেয়েও দামি,’ কেউবা হেসে বলছেন, ‘এমন মনের স্বাদ আগে কখনো পাইনি!’

উৎসবের আকাশটা ছিল ঝলমলে। কলেজ মাঠ যেন রূপকথার পিঠা রাজ্যে রূপ নিয়েছে। ২৩টি স্টলে ২০০-র বেশি পিঠার বাহার। পাটিসাপটা, নকশি পিঠা, লবঙ্গ লতিকা, গোলাপ কাটা পিঠা থেকে শুরু করে ব্যতিক্রমী ‘ভালবাসা ডটকম,’ ‘হৃদয় হরণ,’ ‘ব্র্যাকআপ’—প্রতিটি নামই যেন আলাদা গল্প। কিন্তু এইসব নামের মধ্যেও আলাদা আলোড়ন তুলেছে “মেয়েদের মন ২০ টাকা”।


বিজ্ঞাপন


রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বাঙালিয়ানা স্টলে রাখা হয়েছে এই ব্যতিক্রমী পিঠাটি। উৎসব ঘুরতে আসা নোমান হাসতে হাসতে বললেন, ‘এমন মজার নামের পিঠা আগে দেখিনি। স্বাদও দারুণ। যেন নামের মতোই মন ছুঁয়ে যায়!’

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় ফুল দিয়ে সজ্জিত ফিতা কেটে বেলুন উড়িয়ে দিনব্যাপী এই উৎসবের উদ্বোধন করেন কলেজের অধ্যক্ষ আ.ন.ম. মুশতাকুর রহমান। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. দিলীপ কুমার বড়ুয়া, রেজিস্টার নায়লা ইয়াসমিন, এবং বাংলা বিভাগের প্রধান সিদ্দিকুল্লাহ। উদ্বোধনের পর অতিথিরা একে একে স্টল ঘুরে দেখেন এবং শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতাকে সাধুবাদ জানান।

প্রতিটি স্টলে শিক্ষার্থীদের নিজ হাতে তৈরি করা গ্রামীণ পিঠার প্রদর্শনী। পিঠার নামের মতো স্বাদও যেন বিস্ময়ের। পাটিসাপটা, ভাপা পিঠা, নারকেল পুলি থেকে শুরু করে দুধ চিতই, প্রজাপতি পিঠা, মাংস পুলি, গোলাপ কাটা পিঠা—সব পিঠার মাঝেও বিশেষ আকর্ষণ ‘ভালবাসা ডটকম’ ও ‘হৃদয় হরণ।’ এই পিঠা দুটির সঙ্গে যেন লুকিয়ে আছে শিক্ষার্থীদের হাসি আর মনের উচ্ছ্বাস।

ডিগ্রি ডিপার্টমেন্টের স্টলে ছিল ব্যতিক্রমী পোস্টার। কলকাতার সাংবাদিক মুয়ুক রঞ্জন দাসের সেই বিখ্যাত লাইন, ‘থাকবে না, থাকবে না—একটি পিঠাও থাকবে না,’ স্টলটি ঘিরে দর্শকদের উৎসাহ বাড়িয়েছে। আর লুৎফুজ্জামান বাবরের বিখ্যাত সংলাপ ‘You are looking for Pithas’ যেন উৎসবের হাসির খোরাক।


বিজ্ঞাপন


শাপলা খাতুন, যিনি প্রথমবার এই পিঠা উৎসবে অংশগ্রহণ করেছেন, বললেন, ‘আমরা নিজেরা বানিয়েছি এসব পিঠা। বাড়িতে মা আর আত্মীয়দের সাহায্য নিয়ে নতুন নতুন রেসিপি শিখেছি। এমন আয়োজন আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।’

উৎসবে পিঠার স্বাদ নিতে আসা ফারাজ বলেন, ‘পিঠা উৎসব শুনেই ছুটে এলাম। এমন আয়োজন দেখে মন ভরে গেছে। ২০ টাকায় মেয়েদের মনও কিনলাম, আবার ভালবাসা ডটকমের স্বাদও নিলাম।’

অধ্যক্ষ আ.ন.ম. মুশতাকুর রহমান জানালেন, ‘শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা আর ঐতিহ্যের প্রতি ভালোবাসা বাড়াতেই এই আয়োজন। প্রত্যেকটি পিঠা তৈরি হয়েছে তাদের হাতের স্পর্শে। এমন উৎসব আমাদের সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখার প্রয়াস।’

গুরুদয়াল কলেজের পিঠা উৎসব তাই শুধু খাবারের নয়, ভালোবাসা ও সৃজনশীলতার উৎসব। আর এই উৎসবের সবচেয়ে বড় গল্পটি হয়ে থাকবে, ‘২০ টাকায় মেয়েদের মন’। গল্পটা শুধু এক দিনের নয়—এটা মনের গভীরে গেঁথে রাখার মতো এক উৎসবের স্মৃতি, সেই সঙ্গে উচ্ছ্বাস আর বিনোদনের খোরাক।

প্রতিনিধি/ এজে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন


News Hub