শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

নড়াইলে প্রথম রেলপথ: পদ্মা সেতু রেল সংযোগ উদ্বোধন মঙ্গলবার

মো.হাবিবুর রহমান, নড়াইল
প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১১ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img
নড়াইল রেল স্টেশন। ছবি: ঢাকা মেইল

নড়াইলবাসী দীর্ঘদিনের অপেক্ষার পর অবশেষে পাচ্ছে রেলপথে চলাচলের সুযোগ। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) থেকে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় খুলনা-ঢাকা-বেনাপোল রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে, যার মাধ্যমে নড়াইলবাসী সহজেই ঢাকা যেতে পারবেন। এই নতুন রেলপথের উদ্বোধন এলাকায় এক নতুন যুগের সূচনা করবে, যা নড়াইলসহ দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ব্যাপকভাবে উন্নত করবে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের সকল কাজ শেষ হয়েছে৷ দুই দফায় পরিক্ষামূলক ট্রেন চলাচলও সম্পন্ন হয়েছে। আগামীকাল ২৪ ডিসেম্বর থেকে এই রুটে জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ও রুপালী এক্সপ্রেস নামে একজোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করবে। এই প্রকল্পের ২৮ কিলোমিটার রেলপথ পড়েছে নড়াইলে। নড়াইল শহর ও লোহাগড়া উপজেলায় একটি করে রেলস্টেশনও নির্মাণ করা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন—

জানা গেছে, পদ্মা ও মধুমতির নদীতে সেতু না থাকায় একসময় রাজধানী ঢাকা যেতে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হতো নড়াইলবাসীকে। দুই নদী পারাপারে ফেরিই ছিলো অন্যতম ভরসা। ফলে ঘাটে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়েছে৷ কখনো কখনো সকাল থেকে সন্ধ্যা, আবার কখনো রাত থেকে ভোর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। ২০২২ সালে ২৫ জুন প্রমত্তা পদ্মার বুকে স্বপ্নের সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সেই ভোগান্তি অনেকাংশে কমে যায়। এরপর একই বছর ১০ অক্টোবর উদ্বোধন করা হয় নড়াইল-গোপালগঞ্জের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মধুমতী  নদীর বুকে নির্মিত হয় দেশের প্রথম ৬ লেন বিশিষ্ট সেতু। দুই সেতু নির্মাণে পাল্টে যায় নড়াইলসহ দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা। এখন নড়াইল থেকে মাত্র তিন ঘণ্টায় ঢাকা পৌঁছানো যায়, যা স্বপ্নের মত। 

রেলের দেওয়া সময়সূচি অনুসারে, জাহানাবাদ এক্সপ্রেস খুলনা থেকে ছাড়বে সকাল ছয়টায়। ট্রেনটির ঢাকায় পৌঁছানোর নির্ধারিত সময় সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে। ঢাকা থেকে আবার ট্রেনটি ছেড়ে যাবে রাত আটটায়। খুলনায় পৌঁছানোর কথা ১১টা ৪০ মিনিটে। অন্যদিকে রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে ছাড়বে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে। ট্রেনটির যশোরের বেনাপোল পৌঁছানোর কথা বেলা ২টা ৩০ মিনিটে। ফিরতি যাত্রায় যশোর থেকে ট্রেনটি ছাড়বে বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে। আর ঢাকায় পৌঁছানোর কথা সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে।

প্রথমবারের মত রেলপথে যাতায়াত সুবিধা পেতে যাচ্ছে নড়াইলের মানুষ। ফলে এই অঞ্চলের মানুষের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনার যেন শেষ নেই। দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত এই রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় নড়াইলসহ দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সার্বিকভাবে ব্যপক উন্নয়ন ঘটবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

Narayil-Railway-Statio-3

নড়াইল সদর উপজেলার ডুমুরতলা গ্রামের নাহিদ হাসান মুন্না বলেন, প্রথমে পদ্মার বুকে পদ্মা সেতু, এরপর নড়াইলের কালনায় মধুমতি সেতু নির্মাণে সড়কপথে রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হয়েছে। একসময় যেখানে ঢাকা যেতে একদিন লাগত সেখানে এখন আড়াইঘণ্টায় পৌঁছানো যায়। রেল চালু হলে আরো কম সময়ের মধ্যে আমরা ঢাকা যেতে পারব। সহজেই নড়াইল থেকে উৎপাদিত পণ্য পৌছে যাবে ঢাকায়। এতে জেলার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকেরা লাভবান হবে। নড়াইলে কলকারখানা গড়ে উঠবে। সবমিলিয়ে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাবে আমাদের জেলা।

কালিয়া উপজেলার বাসিন্দা মোর্শেদ আলম বলেন, স্বাধীনতার পর এই প্রথম রেল সুবিধার আওতাভুক্ত হচ্ছে নড়াইলের মানুষ। এই রেললাইন হলে যে শুধু রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে তা কিন্তু নয়। বরং যশোরের বেনাপোল হয়ে যাওয়া যাবে ভারতে। যোগাযোগ ব্যবস্থার এই উন্নয়নে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।

এদিকে, লোহাগড়া স্টেশন ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবি জানিয়েছেন এ উপজেলার মানুষ। খুলনা রুটের ট্রেন লোহাগড়ায় থামবে, কিন্তু বেনাপোল রুটের ট্রেন লোহাগড়া স্টেশনে থামবে না। এমন খবরে শুরু থেকে প্রতিবাদ করছে লোহাগড়াবাসী। লোহাগড়ায় প্রতিটি ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবিতে স্থানীয় বিভিন রাজনৈতিক দল ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে। লোহাগড়াবাসী ট্রেন যাতায়াত করবে এটা দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। এ স্বপ্নের বাস্তয়ানের দাবিতে মাঠে নেমেছে তাঁরা। দাবি করছেন, লোহাগড়া স্টেশন প্রতিটি ট্রেন থামাতে হবে। এ স্টেশন থেকে ট্রেন যাত্রী ওঠা-নামার সুযোগ থাকতে হবে। 

নড়াইল রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার উজ্জ্বল কুমার বিশ্বাস বলেন,  ঢাকা-খুলনা পথে ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’ এবং ঢাকা-বেনাপোল পথে ‘রূপসী বাংলা’ নতুন রেলপথ দিয়ে চলাচল করবে। এ ট্রেন দুটির সাপ্তাহিক বন্ধ সোমবার। বাকি ছয় দিন চলাচল করবে। দিনে দুইবার ঢাকা–খুলনা ও ঢাকা–বেনাপোল পথে চলাচল করবে ট্রেন দুটি। ট্রেন চলাচলের জন্য আমাদের সকল প্রস্তুতি রয়েছে। এখন থেকে নড়াইলের মানুষ ট্রেনে মাত্র ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিটে ঢাকা যেতে পারবে।

ss
 
ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। চীনের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৩৭ হাজার ৪০১ কোটি টাকা। অবশ্য শুরুতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যয় সাশ্রয় করে ১ হাজার ২২৩ কোটি টাকা বাঁচানো হয়েছে। আর ৬২২ কোটি টাকাে সাশ্রয় করা হয়েছে ডিপিপি দ্বিতীয়বার সংশোধন করে।

প্রতিনিধি/একেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন