অফিস বা পার্টি যেকোনো স্থানেই শার্ট পরতে পছন্দ করেন অনেকে। আনুষ্ঠানিক পোশাকে শার্টের সঙ্গে গলাবন্ধনী (টাই) ফ্যাশনে যোগ করতে পারে নতুন মাত্রা। অফিস আদালত কিংবা স্কুল কলেজ সবখানেই বেড়েছে টাইয়ের ব্যবহার।
বর্তমানে ক্রমবর্ধমান চাহিদা সম্পন্ন একটি পণ্য হয়েছে এটি। টাইয়ের চাহিদার মেটাতে নীলফামারীতে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি মানসম্মত কারখানা। এখানে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি সচ্ছলতা ফিরেছে অনেক নিম্নআয়ের পরিবারের।
বিজ্ঞাপন
মোশাররফ হোসেন নামে একজন প্রায় ত্রিশ বছর আগে নীলফামারী সদর উপজেলার নিউ বাবুপাড়ায় গড়ে তুলেছিলেন জেলার প্রথম টাই কারখানা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উপকরণ কিনে টাই বানানো হয় কারখানায়। এখানে কর্মসংস্থান হয়েছে ৪০ জন নারী-পুরুষের। গড়ে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করে সচ্ছলতা এসেছে এসব পরিবারে। সংসারের চাহিদা মিটিয়ে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচের পর সঞ্চয়ও করছেন তারা।
রোজিনা আক্তার নামে এক শ্রমিক নিজের পড়ালেখার খরচ চালানোর পাশাপাশি হাল ধরেছেন বাবার অসচ্ছল পরিবারে। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, বাড়ির পাশেই এই কোম্পানি। আমাদের পরিবারের অনেক সমস্যা। তাই নিজের পড়ালেখা চালানের জন্য আমি এখানে কাজ করছি। এখান থেকে যা টাকা আয় হয় তা দিয়ে বই খাতা কিনি, নিজের যা প্রয়োজন সব কেনার পর বাকি টাকা বাবাকে দেই। কারণ আমাদের পরিবারে সাতজন সদস্য। আমার বাবার একার ইনকাম দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব হয় না।
আরেক নারী শ্রমিক মেরিনা বেগম বলেন, আমি এখানে আট বছর ধরে কাছ করছি। ইনকামের টাকা সঞ্চয় করে রাখছি। সেই টাকা দিয়ে আমি আমার বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছোট মেয়ে পড়ালেখা করছে। আগে অনেক কষ্ট করে দিন যাইতো। বর্তমান এই কোম্পানিতে কাজ করে আমরা অনেক ভালো আছি।
বিজ্ঞাপন
ইনকামের টাকা দিয়ে সংসারে সহযোগিতা করে যাওয়া লাজিনা বেগম ঢাকা মেইলকে বলেন, আমাদের এই কারখানা বাড়ির পাশেই। বাড়ির সব কাজ শেষ করে এসে কাজ করতে পারি। আমি প্রায় ১৪ বছর ধরে এখানে কাজ করছি। আগে সংসারে অনেক অভাব অনটন লেগেই থাকত। এখানে কাজ করার পর এখন আল্লাহর রহমতে সংসার ভালোই চলছে। আমার মেয়ে বর্তমান অনার্স পড়ছে। আমি এখানে কাজ করেই তার খরচ দিচ্ছি। এর পাশাপাশি কিছু সঞ্চয়ও করছি, বর্তমান অনেক ভালো আছি।
নীলফামারী ছাড়া দেশের অন্য কোথাও টাই তৈরি হয় না বলে দাবি করছেন কারখানা মালিক মোশারফ হোসেন। জেলায় সবমিলিয়ে ৮ শতাধিক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে বলে জানান তিনি। এই কারখানা মালিক ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সর্বপ্রথম আমরা কালো টাই নিয়ে কাজ শুরু করি। বিভিন্ন কোট কাচারির অ্যাডভোকেট আমাদের থেকে টাই সংগ্রহ করতো। আস্তে আস্তে কলেজ ইউনিভার্সিটি বিভিন্ন কোম্পানি, সেনাবাহিনী, তারা তাদের মনোগ্রাম দিয়ে আমাদের কাছ থেকে টাই তৈরি করে নেয়। ধীরে ধীরে চলে এভাবে। এরপর অনেকে সেখান থেকে বের হয়ে ছোট ছোট কারখানা গড়ে তোলে। সবমিলিয়ে এখন নীলফামারীতে ৩০-৩৫টা কারখানা হয়েছে। যদি কেউ টাই নিতে চায় তাকে নীলফামারীতে আসতেই হবে, নীলফামারী ছাড়া সারাদেশে কোথাও টাই তৈরি হয় না। বিভিন্ন শো-রুম আছে যারা আমাদের থেকে অর্ডার দিয়ে তাদের মনমতো ডিজাইন দিয়ে টাই তৈরি করে নেয়।
টাই শিল্পকে বর্ধিত করার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের সঙ্গে ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানের আশ্বাস দেওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত ভ্যাট ট্যাক্সের আওতা থেকে মুক্ত থাকতে কারখানার বৈধ কাগজপত্র রাখার পরামর্শ দিয়ে জেলা বিসিক কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপক নুরুল হক ঢাকা মেইলকে বলেন, টাই হচ্ছে একটা ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন পণ্য। দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। এই শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে আমরা কিছু কিছু উদ্যোক্তার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব। তাদের চাহিদা অনুযায়ী আমাদের যে ছোট ছোট ঋণের সুবিধা রয়েছে তারা চাইলে এসব সুবিধা নিতে পারে। তাদের ওপর ভ্যাটের যে চাপ প্রয়োগ করা হয়ে থাকে তাদের ততটা আওতায় আসার কথা না। তবে এর জন্য তাদের কাগজপত্র ঠিক রাখতে হবে এবং আমাদের অফিসগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে।
এমন পরিবেশবান্ধব কারখানা গড়ে উঠলে জেলায় আরও কর্মসংস্থান বাড়বে বলে প্রত্যাশা স্থানীয়দের।
প্রতিনিধি/এসএস