শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

দীর্ঘ এক যুগ পেরিয়েও বিচার হয়নি বিশ্বজিৎ হত্যার

জেলা প্রতিনিধি, শরীয়তপুর
প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২৭ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img
বিশ্বজিৎ দাসের প্রতিকৃতি

এক যুগ আগে শত শত মানুষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য আর সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিলো শরীয়তপুরের বিশ্বজিৎ দাসকে।

এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ছিলো সম্প্রতি নিষিদ্ধ হওয়া সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তবে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকার বদৌলতে সেদিন পার পেয়ে যায় অনেক অভিযুক্তই। এ ঘটনার এক যুগ পেরোলেও হত্যার বিচার হয়নি এখনো। বাবা-মায়ের আকুতি, অন্তত মৃত্যুর আগে ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দেখে যাবেন নিজেদের চোখে। 


বিজ্ঞাপন


ঘরের ভেতর টানানো রয়েছে বিশ্বজিতের অনেক ছবি। ছবির মতোই ছবির মানুষটাও এখন শুধুই স্মৃতি। বিশ্বজিৎ আর বাড়ি ফিরবে না। ছেলের কথা ভেবে এখনো নীরবে চোখের জল ফেলে চলছেন মা কল্পনা দাস। 
২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপির আহ্বানে ১৮ দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে শিবির সন্দেহে পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা ভোজেশ্বর ইউনিয়নের মশুরা এলাকার বিশ্বজিৎ দাসকে।

বিশ্বজিৎ হত্যার ঘটনায় ২১ জনের মধ্যে ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ১৩ জনের যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হলেও আওয়ামী লীগ সরকার আমলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৮ জনের মধ্যে ৬ জন আসামির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দেওয়া হয়। আর দুই জনের ফাঁসির আদেশ হলে তা কার্যকর হয়নি দীর্ঘ ১২ বছরেও।

Father-and-mother
বিশ্বজিৎ দাসের বাবা ও মা


বিজ্ঞাপন


বিশ্বজিৎ দাসের মা কল্পনা দাস বলেন, আমার বিশ্ব (বিশ্বজিৎ) তো কখনো রাজনীতি করেনি। আমার ছেলে কাজ করে আমাদের সংসার চালাতো। আমার ছেলেকে জগন্নাথের ছাত্রলীগের পোলাপাইন মেরে ফেললো। আজ ১২ বছর হয়ে গেলো অপরাধীদের বিচার হলো না। তারা জামিনে বের হয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর আমরা বিচার চাইতে চাইতে ক্লান্ত। আমি আমার বিশ্ব হত্যার বিচার চাই।

বিশ্বজিৎ দাসের বাবা অনন্ত দাস বলেন, আমাদের ছেলে আমাদের ভরণপোষণ দিতো। আমার ছেলেকে প্রকাশ্যে দিন দুপুরে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। আজ ১২ বছর ধরে এখনো এর বিচার পেলাম না। এই সরকারের আমলে যদি আমার ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারি। তাহলে আমরা মরে গেলেও অন্তত আত্মা শান্তি পাবে। আর আমার ছেলের মতো এভাবে যেন কারো জীবন দিতে না হয় এই কামনা করি।

এলাকাবাসী বলেন, ছোটবেলা থেকে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে দর্জির কাজ করে সংসারের হাল ধরেছিলো বিশ্বজিৎ। সেদিন কাতর আর্জি জানালেও কর্মজীবী ছেলেটিকেও ছাড় দেয়নি ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। দ্রুত অভিযুক্তদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন শরীয়তপুরের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান বলেন, ২০১২ সালে বিশ্বজিৎ দাসকে হত্যা করা হয়েছে। প্রকাশ্যে তাকে কারা হত্যা করেছে তা আমরা জানি। তারা স্বৈরাচার সরকারের দোসর ছিল। তাই তারা অতি দ্রুত আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বের হয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘ এক যুগ ধরে ন্যায় বিচারের আশায় আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে বিশ্বজিতের পরিবার। আমরা চাই অতি দ্রুত এ ঘটনায় জড়িত সকল অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর করে আইনের শাসন নিশ্চিত করা হোক।


দীর্ঘ এক যুগে বিচার না পেলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে অতি দ্রুত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে এমন প্রত্যাশা পরিবারসহ সকলের।


এমএএ/এফএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন