বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

ধু ধু বালুচরে মোটরসাইকেলে ভাগ্যবদল অর্ধশত যুবকের

আমানুল্লাহ আমান, রাজশাহী
প্রকাশিত: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১৮ এএম

শেয়ার করুন:

loading/img
ছবি: ঢাকা মেইল

রাজশাহীর পবা উপজেলার চর মাজারদিয়াড়ে পদ্মা নদীর ধু ধু বালুর বুকে মোটরসাইকেলে ভাগ্য বদলেছে অর্ধশত যুবকের। ভাড়ায় বাইক চালিয়ে বছরে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা আয় করছেন তারা। এতে সুদিন ফিরছে অবহেলিত চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের। দ্রুতগতিতে ছুটে চলা একমাত্র ভরসার বাহন হিসেবে ‘মরুভূমির উট’ হিসেবে খ্যাতিও পেয়েছে এসব মোটরসাইকেল।

জানা গেছে, চর মাজারদিয়াড়ে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের বসবাস। নৌকাযোগে নদী পারাপার হয়ে তারা নগরীতে যাতায়াত করে থাকেন। তবে পদ্মার বড় অংশ চর পড়ে থাকে বছরের প্রায় ১০ মাস। এ পথ তারা মোটরসাইকেলে চলাচল করেন। নগরীর হাইটেক পার্ক সংলগ্ন নদীর ঘাট দিয়ে চর মাজারদিয়াড়ের ঘাটে পৌঁছান। ঘাট থেকে গ্রামের দূরত্ব প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। এ পথে মোটরসাইকেলই একমাত্র বাহন। ঘাটে নৌকা ভীড়তেই যাত্রীদের ডাকতে থাকেন বাইক রাইডাররা।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন

রঙিন কমলার স্বাদ নিতে বিজয়নগরে ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা

তারা জানিয়েছেন, বছরের ১০ মাস বাইক রাইড করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। আর বাকি দুই মাস ফসল উৎপাদন ও গবাদি পশু পালন করেন। এতে সংসারেও সুদিন ফিরেছে তাদের। দৈনিক ১০-১৫টি ট্রিপ মারা হয়। প্রত্যেকে প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা আয় করেন মাসে। বছরে প্রায় সাড়ে তিন কোটির ওপরে তাদের ইনকাম হয়। রাইডাররা বলেন, তেল খরচ ও বাইকের পার্টস নষ্ট হলে তা মেরামত বাবদ খরচ হয়। তাছাড়া আর কোনো ব্যয় নেই।

Rajsahi2

ড্রাইভার জহির হোসেনের বয়স ৪০। বাইক রাইডার হিসেবে তিনি প্রায় সকলের সিনিয়র। ৩০ বছর ধরে তিনি গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতায় ৯ বছর ৭ মাস ধরে চরে বাইক রাইড করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। জহির হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, পড়ালেখা নাই, রাস্তাতে জীবন শ্যাষ হলো। ২০১৪ সাল থেকে চরে বাইক রাইড করিচ্ছি। গাজল হোক, বৃষ্টি হোক, আল্লাহর তিরিশ দিন ভাড়া মিস নাই। না হলেও এক ট্রিপ মাইরবোই। তিনি বলেন, দিনে ৪০ জন যাত্রী পাই। সকাল ৭টায় বের হই। বিকাল বা সন্ধ্যা যতক্ষণ যাত্রী পাই গাড়ি চালাই। দিনে ধরেন ২ হাজার করে ইনকাম হয়। হাজারে ২০০ টাকা তেল খরচ ও ১০০ টাকা বিড়-সিগারেটে খরচ হয়। বাকি সব থাকে।


বিজ্ঞাপন


চর মাজারদিয়াড়ের ঘনপাড়া এলাকার মুরসালিন ২০১৫ সাল থেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে সংসারের চাহিদা মেটাচ্ছেন। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, একটা কর্ম হয়েছে, মানুষের সেবাও করা হয়। আয়ও ভাল হয়। চরে বাইক দিয়ে ভাড়া মেরে সংসার চলে যায়। মানুষ ছাড়া পণ্যও পরিবহণ করি। রিজার্ভ ভাড়া হিসেবে ১০০ কেজির মরিচের বস্তা ২৫০টাকা ভাড়া নিই।

আরও পড়ুন

ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতি কাটিয়ে সরগরম সুপারি বাজার, দামে খুশি চাষিরা

মুরসালিন বলেন, ডেইলি দেড় হাজার টাকা ইনকাম হয়। আমরা এখানে ৪৫-৫০ জন রাইডার আছি। সবার নিজের মোটরসাইকেল।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দ্রুতগতিতে গাড়ি ড্রাইভ করেন রাইডাররা। এতে ভীতি কাজ করে তাদের মাঝে। বিষয়টি স্বীকারও করেছেন বাইক রাইডাররা। আজাদ নামে এক রাইডার বলেন, আমাদের ১১০ সিসির গাড়ি, ৮০ তে উঠে। এর বেশি উঠে না। নাহলে তো ১০ তে ঠেকিয়ে দিতাম। দিনে আমি ৮-১০ ট্রিপ ভাড়া হয়।

Rajsahi3

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, নতুন অভিজ্ঞতা নিতেও নগরী থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অনেকে চরাঞ্চলে যাচ্ছেন। জেলার বাগমারা থেকে চরে ঘুরতে যান লিয়াকত আলী ও মোকবুল হোসেন নামে দুই মাদরাসা শিক্ষক। তারা বাগমারার শ্রীপুর রামনগর দাখিল মাদরাসারা সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। লিয়াকত আলী ঢাকা মেইলকে বলেন, এটা সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা আমার। চরের মধ্যে এভাবে মোটরসাইকেল চলে, আমি অবাক হয়েছি। কীভাবে চালাচ্ছে এরা?

মোকবুল হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ক্লাস শেষ করে এলাম। প্রথমে ভয় ভয় লাগছিল। তবে একটু সাহস হয়েছে। এখানে গাড়ি চালানো দেখে অবাক না হয়ে থাকার নয়।

আরও পড়ুন

হোগলা পাতায় স্বাবলম্বী হচ্ছেন নারীরা, পণ্য যাচ্ছে ২৮ দেশে

ফারুক হোসেন নামে এক কলেজছাত্র বলেন, শহরেও আমরা এত দ্রুত বাইক চালাই না। ভাঙাচোরা আঁকাবাঁকা রাস্তায় যেভাবে গাড়ি চালাচ্ছে, আমারই ভয় লাগছিল।

হরিপুর ইউনিয়নের সাবেক সদস্য চর মাজারদিয়াড়ের বাসিন্দা হুমায়ন কবীর ঢাকা মেইলকে বলেন, শুধু মোটরসাইকেল কিনেই এখানকার অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে। কৃষিকাজ ছাড়াও মোটরসাইকেলে বাড়তি ইনকাম করতে পারছেন যুবকরা। চরবাসীর অন্যতম আয়ের মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাইক রাইডিং।

প্রতিনিধি/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন