বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

প্রতিষ্ঠার ২৪ বছরেও এমপিওভুক্ত হয়নি কলেজ, হতাশ শিক্ষক-কর্মচারীরা

জেলা প্রতিনিধি, বরগুনা
প্রকাশিত: ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:২৪ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

ভালো ফলাফল করেও শুধু বৈষম্যের কারণে প্রতিষ্ঠার ২৪ বছরেও আমতলীর টিয়াখালী কলেজটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় হতাশ শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

দীর্ঘদিন ধরে কোনো বেতন ভাতা না পেয়ে বর্তমানে কলেজটির ৩০ জন শিক্ষক ও ৮জন কর্মচারী মানবেতর জীবন যাপন করছেন।


বিজ্ঞাপন


জানা গেছে, আমতলী উপজেলার সদর ইউনিয়নের টিয়াখালী গ্রামের শিক্ষানুরাগী মো. দেলোয়ার হোসেন ২০০০ ইংরেজী সালে প্রায় সোয়া দুই একর জমির ওপর টিয়াখালী কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০১ সালে কলেজটি বোর্ডের স্বীকৃতি লাভ করে। স্বীকৃতি লাভের পর কলেজ থেকে প্রতিবছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করে আসছে। ২০০২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ২১ বছরের গড় পাসের হার ৭২। ২০১৯ সালে কলেজ থেকে শত ভাগ পাস করারও রেকর্ড রয়েছে। চলতি বছরও ২০ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ১৫ জন শিক্ষার্থী পাস করেছে। বর্তমানে কলেজটিতে ৩২২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

বোর্ডের এবং মন্ত্রণালয়ের সব নিয়ম কানুন সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করলেও শুধু রাজনৈতিক বৈষম্যের কারণে কলেজটি এমপিওভুক্ত করা হয়নি বলে জানা গেছে। কারণ কলেজেটির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মো. দেলোয়ার হোসেন ছিলেন বিএনপিমনা। তিনি ছিলেন উপজেলা বিএনপির দফতর সম্পাদক। কলেজটি প্রতিষ্ঠার সময় বিএনপি ক্ষতায় থাকলেও এর যাবতীয় কার্যক্রম গুছিয়ে ওঠার মধ্যেই সরকার পরিবর্তন হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষতায় আসার পর  চার বার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে। কিন্তু  রাজনৈতিক রোষানলের কারণে টিয়াখালী কলেজটি আর এমপিওভুক্ত হতে পারেনি দীর্ঘ ২৪ বছরেও। আওয়ামী লীগ সরকার কলেজটি এমপিওভুক্ত না করলেও ২০১৭ সালে একটি চার তলা ভবন করে দিয়েছেন। এটাই এখন শিক্ষক কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের সান্ত্বনা। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মো. দেলোয়ার হোসেন অবসরে গেছেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কৃষি শিক্ষা বিষয়ের প্রভাষক কেএম সোহেল নামে একজন।

কলেজটিতে বর্তমানে  ৩০জন শিক্ষক ও ৮জন কর্মচারী রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে কোনো ভেতন ভাতা না পেয়ে এখন হতাশ হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

আরও পড়ুন

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ

কলেজের একাদশ প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া ও বনি আমিন জানান, এখানে লেখাপড়ার মান খুব ভালো। অনেক ছেলে মেয়ে রয়েছে। স্যারেরা অনেক যত্ন সহকারে লেখাপড়া শেখান। কলেজটি এমপিওভুক্ত হলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা আরও বাড়বে।

কলেজের পিওন মো. শাহানুর ফকির জানান, কলেজে চাকরি করি কিন্তু কোনো বেতন ভাতা পাই না। এহন আর সংসার চালাইতে পারি না। বাহের জমিজমা যা পাইছিলাম  আর স্ত্রী স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি কইর‌্যা সংসার চালাইয়া সব শ্যাষ করছি। হেইয়ার পর ধার কর্জ কইর‌্যা খাইছি। এহন আর কেউ ধারও দ্যায়  না। কোনো রহম গুরাগারা লইয়া খাইয়া না খাইয়া দিন কাডাইতেছি।

কলেজের দফতরি নাসির মৃধা বলেন, এই হানে চাকুরি নিয়া ব্যামালা বিপদে আছি। বয়স থাকতে চাকরি নিছি এহন আর সরকারি চাকরির বয়স নাই। কুমে যাইয়া চাকরি লমু। চাকুরি লইয়া এহন আর কোনো কামও করতে পারি না। আরেক দিকে বেতনও পাই না। বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। চোখ মুছতে মুছতে বলেন, স্যার দেহেন যাইয়া আমার বাড়িতে গুরাগারা লইয়া কি অবস্থায় আছি।

কলেজের উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপনন বিভাগের প্রভাষক মো. মোশারেফ হোসেন বলেন, এই কলেজে চাকরি করে জীবনের মূল্যবান সময় দিয়েছি। কিন্ত এখন শেষ সময়ে এসে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরে যেতে হবে এটা জীবনের বড় কষ্ট।

আরও পড়ুন

সিটি কলেজের অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবিতে সড়ক অবরোধ

প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ (অব.) মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এলাকার মানুষের কথা বিবেচনা করে ২০০১ সালে সোয়া দুই একর জমির ওপর টিয়াখালী কলেজটি প্রতিষ্ঠা করি। বরগুনা জেলার সব কলেজের মধ্যে আমার কলেজের শিক্ষার গুনগত মান এবং ভালো ফলাফল  থাকা সত্বেও আওয়ামী লীগ সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে এমপিওভুক্ত করেনি। এতে শিক্ষক কর্মচারী এবং এলাকার  হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বর্তমানে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার পরিবর্তন হয়েছে। আশা করি বর্তমান সরকার টিয়াখালী কলেজটি এমপিওভুক্ত করার উদ্যোগ নেবেন।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেএম সোহেল বলেন, কলেজটিতে বর্তমানে ৩০ জন শিক্ষক ৮জন কর্মচারী এবং ৩২২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। অন্যান্য কলেজের তুলনায় এখানে লেখা পড়ার মান এবং পরিববেশ অত্যন্ত ভালো। কলেজটি এমপিওভূক্ত করা হলে শিক্ষক কর্মচারীরা  ডাল ভাত খেয়ে বাঁচার নিশ্চয়তা পাবে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন