সারাদেশে একযোগে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে আটটা থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসা শুরু করেন পরীক্ষার্থীরা। বেলা ১০টায় পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরীক্ষায় বসেছে সন্তানরা, কেন্দ্রের বাইরে বসে শুভ কামনা জানিয়ে প্রার্থনা ও দোয়া করছেন অভিভাবকরা।
সরেজমিনে রাজধানীর গভমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, সকাল সাড়ে আটটা থেকে কেন্দ্রে আসেন পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। কারও সঙ্গে এসেছেন মা, কারও সঙ্গে এসেছেন বাবা, আর কারও সঙ্গে এসেছেন ভাই-বোন, আবার কারও সঙ্গে চাচা কিংবা অন্যান্য অভিভাবকরা। পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ করিয়ে বাহিরে অপেক্ষা করছেন অভিভাবকরা। কেউ হয়েছেন দোয়ায় মগ্ন আর কেউ করছেন পাশে থাকে মসজিদে প্রার্থনা। তাদের কামনা একটাই ভেতরে থাকা পরীক্ষার্থী যেন আল্লাহর সাহায্য পায়।
বিজ্ঞাপন
আজিমপুর থেকে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে আসেন শিক্ষিকা ফাতেমা আক্তার। পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে তার সঙ্গে কথা হয় ঢাকা মেইলের। জানতে চাইলে তিনি বলেন, সকাল আটটায় বাসা থেকে ছেলে সঙ্গে রওনা দিয়েছি, যাতে কোনো ধরনের ভয় না পায় এবং নির্দ্বিধায় কলম যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারে। প্রস্তুতি ভালো নিয়েছে, এর আগে স্কুলে অনেক ভালো ফলাফল করেছে। বলেছি সবকিছু উত্তর দিতে, হয়তো দুই-একটা কমন পড়বে না। আল্লাহ যেন ছেলের সহায় হয়।
বাহিরে মেয়ের জন্য অপেক্ষারত আব্দুল মান্নান বলেন, সন্তান সাধ্য মতো প্রস্তুতি নিয়েছি। আমার আশা ভালো ফলাফল করবে। আমি তার টেস্ট পরীক্ষার ফলাফল দেখেছি, তাতে ভালো রেজাল্ট করেছে। মেয়েকে বলেছি, প্রশ্ন দেখে কমন না পড়লে হতাশ হবা না। মনোবল শক্ত করে রাখবা। যাতে ভালোভাবে লিখতে পারে। পরীক্ষা নিয়ে এতো টেনশন করার কিছু নেই, তবে পড়তে হবে।
তবে অভিভাবকদের রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও। আরেক অভিভাবক হাসান আলী বলেন, যতক্ষণ পরীক্ষা শেষ না হবে, ততক্ষণ বাসায় গিয়ে স্থির থাকতে পারব না। শিক্ষাজীবনের যে কয়েকটি ধাপ রয়েছে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়টিতে ছেলে অংশ নিচ্ছে। একটু টেনশনতো হচ্ছেই। তবে ছেলের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করছি এবং দোয়া দরুদ পড়ছি। যাতে তার পরীক্ষা সহজ হয়।
বিজ্ঞাপন
সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ধানমন্ডি থেকে আসা সালমা ইসলাম বলেন, মেয়ে যথাযথভাবে প্রস্তুতি নিয়ে। পরীক্ষার আগে বারবার বাসায় পরীক্ষা দিয়েছে, পড়াশোনায় অনেক মনোযোগী। কখনও পড়ার জন্য তাগাদা দেওয়া লাগেনি, নিজ থেকে মেয়ে পড়াশোনা করেছে। মেয়ের লক্ষ্য চিকিৎসক হবে, এজন্য আমাকে বলা লাগে না পড়াশোনার জন্য। আল্লাহ তার ভালো করুক।
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের নতুন সংশোধিত রুটিন অনুযায়ী ১০ এপ্রিল শুরু হয়ে এ পরীক্ষা চলবে ১৩ মে পর্যন্ত। এবারও বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিয়ে শুরু হয়েছে এসএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষ হবে বাংলা (আবশ্যিক) দ্বিতীয় পত্রের ও সহজ বাংলা দ্বিতীয় পত্র দিয়ে। নির্দিষ্ট দিনগুলোতে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত তত্ত্বীয় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ১৫ থেকে ২২ মে পর্যন্ত।
জানা গেছে, পরীক্ষায় এবার মোট পরীক্ষার্থী ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন। ২০২৪ সালের তুলনায় এবার প্রায় এক লাখ পরীক্ষার্থী কম। গতবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন। গতবারও তার আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৪৮ হাজার পরীক্ষার্থী কমেছিল।
এবার সারাদেশে ৩ হাজার ৭১৫টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে শিক্ষাজীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই পরীক্ষা। এবার মোট পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী ৯ লাখ ৬৭ হাজার ৭৩৯ জন এবং ছাত্র ৯ লাখ ৬১ হাজার ২৩১ জন। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
এসএইচ/এএস