ভ্রমণের জন্য মানুষের অন্যতম পছন্দের জায়গা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। কর্মক্ষেত্রে ছুটি পেলে ভ্রমণ পিপাসুরা চলে আসেন এখানে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও শারদীয় দুর্গাপূজার ছুটি শুরু হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) ছিল প্রথম ছুটি৷ পূজা এবং সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে চাকরিজীবীরা পেয়েছেন টানা চারদিনের ছুটি৷
বিজ্ঞাপন
এই লম্বা ছুটিতে অবকাশ যাপনে দেশের নানা প্রান্ত থেকে কক্সবাজার ছুটে আসছেন লাখ লাখ পর্যটক৷ বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুদিনে অন্তত আড়াই লাখ পর্যটক এসেছে কক্সবাজার।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সকাল থেকে পর্যটকেরা শহরের সমুদ্রসৈকত ও আশপাশের পর্যটনকেন্দ্রে ভিড় করছেন।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের তিটি পয়েন্ট ছাড়াও মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে ছুটছেন পর্যটকেরা। এ সড়কে দরিয়ানগর পর্যটন কেন্দ্র, হিমছড়ির জাতীয় উদ্যান, ছড়া ও ঝরনা, ইনানী ও পাটুয়ারটেক পাথুরে সৈকত, টেকনাফ, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, রামু বৌদ্ধপল্লী, চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক ও নিভৃতে নিসর্গে পর্যটক ভিড় করছেন।
বিজ্ঞাপন
পর্যটন শহর কক্সবাজার ও আশপাশের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউস ও কটেজে প্রায় ২ লাখ পর্যটকের জন্য রাতযাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ হোটেলের শতভাগ কক্ষ বুকড হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
সে জন্য পর্যটকদের আগেভাগেই হোটেল বুকিংয়ের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
আরও পড়ুন
জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে সম্প্রতি দেশের প্রধান এই পর্যটনকেন্দ্র পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছিল। তবে গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে কক্সবাজারে পর্যটক আসা শুরু হয়। পর্যটন দিবস উপলক্ষে হোটেল কক্ষ ভাড়ায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েও তেমন পর্যটক ঘুরতে আসেননি। তবে পর্যটকের চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ীরা কক্ষ ভাড়ার ওপর ছাড় প্রত্যাহার করে নেন বলে জানা গেছে।
শুক্রবার সকালে সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী সমুদ্রসৈকতে গিয়ে দেখা গেছে, সৈকতে ভরপুর পর্যটক। দীর্ঘদিন নিষ্প্রাণ থাকা সৈকত তীর সেই পুরোনো রূপে ফিরেছে।
পর্যটন ব্যবসায়ী আবদুর রহমান জানান, আগামী ৫ দিন সৈকতে ভরপুর পর্যটক আসবেন। সকাল-বিকেল অন্তত লাখের বেশি পর্যটক সৈকত দর্শনে নামেন। বিকেলের পর সৈকতের বালিয়াড়ি ভরে উঠে নানা পর্যটকের পদচারণায়। দীর্ঘদিন পর ব্যবসায়ীদের মুখেও হাসি ফুটেছে। আগামী ১ সপ্তাহ ভালো বাণিজ্য হবে বলে আশাবাদী তিনি।
সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টে পরিবার নিয়ে সমুদ্র দর্শনে আসা পর্যটক শিমুল শর্মা বলেন,
পূজার ছুটি কাটাতে সমুদ্র সৈকতে আসা। এই প্রথম কক্সবাজারে এসেছি আমি। এর আগে কখনও আসা হয়নি। পরিবার নিয়ে এসে বেশ ভালোই লাগছে।
রাজশাহী থেকে ভ্রমণে আসা পর্যটক পূজা দেবী বলেন, লম্বা ছুটি পেলেই পরিবার নিয়ে কক্সবাজার ছুটে আসি। এখানে সমুদ্রের নীল জলরাশি ও পাহাড় অসাধারণ সুন্দর।
বাস পরিবহন ব্যবসায়ীরা জানান, রোববার পর্যন্ত কক্সবাজারে ৮৫টি কোম্পানির ৮ হাজার বাস আসা-যাওয়া করবে। এসব বাসের বেশির ভাগই টিকিট অগ্রিম বুকিং রয়েছে। ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথে দুর্গাপূজা উপলক্ষে বিশেষ ট্রেনও চলবে। তবে সেখানেও আসন খালি নেই।
কক্সবাজার রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম বলেন, আমাদের প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক রেস্টুরেন্ট রয়েছে। অনেকদিন পর সবগুলো রেস্টুরেন্ট খুলে ব্যবসা করছে। মন্দার কারণে আমাদের অনেক রেস্টুরেন্ট এতদিন বন্ধ ছিল। আশা করি এখন থেকে ব্যবসা ভালো হবে।
শনিবার থেকে রোববার পর্যন্ত যেসব পর্যটক আসতে চান। তাদের অনলাইনে কক্ষ বুকিং দিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছেন কক্সবাজার হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত তারকা ও মাঝারি মানের সব হোটেল-মোটেলে কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। কিছু রিসোর্ট, গেস্ট হাউস ও কটেজে কক্ষ খালি থাকলেও তা আগামীকালের মধ্যে বুকিং হয়ে যাবে। ফলে পর্যটকেরা যাতে ভোগান্তির শিকার না হয়, তার জন্য অনলাইনে রুম বুকিংয়ে আমরা উৎসাহিত করছি।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের পুলিশ সুপার আল আসাদ মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে আমাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও রয়েছে। আমরা আইটির মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিতের কাজ করছি। টহলগুলো অব্যাহত থাকবে সব সময়।
চলতি মৌসুমে এবারের ছুটিতে সর্বোচ্চ পর্যটক আসছেন বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা এবং সৈকতের প্রতিমা বিসর্জন উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি পর্যটকদের হয়রানি রোধ ও সেবা নিশ্চিত করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামানো হয়েছে।
প্রতিনিধি/এসএস