ধর্ম ডেস্ক
২১ নভেম্বর ২০২২, ০৩:৩৩ পিএম
কোরআনুল কারিম আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ ঐশীগ্রন্থ। বিশ্বমানবতার চিরন্তন মুক্তির সনদ, যার অধ্যয়ন ও বাস্তবায়নের মধ্যে রয়েছে মানবজাতির কল্যাণ ও সফলতা। ইসলামি মূলনীতির প্রথম ও প্রধান উৎস হলো আল কোরআন। মহানবী (স.)-এর মাধ্যমে ঘটেছে যার সফল ও সার্থক বাস্তবায়ন। নবুয়তের ২৩ বছর জীবনব্যাপী যুগোপযোগী প্রেক্ষাপটের ক্রমধারায় তাঁর ওপর অবতীর্ণ হয় এই মহান ঐশীগ্রন্থ। তিনি ছিলেন আল কোরআনের বাস্তব নমুনা।
পবিত্র কোরআন বুঝে বা না বুঝে যেভাবেই হোক সহিহ শুদ্ধভাবে তেলাওয়াত করা ফরজ। অন্তত নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য বিশুদ্ধ কোরআন শেখা আবশ্যক। কারণ, `নামাজের কেরাতে `লাহনি জলি' বা অর্থ বিকৃত হওয়ার মতো ভুল হলে নামাজ ভেঙে যাবে। চাই তা তিন আয়াত পরিমাণের ভেতরে হোক বা পরে। সর্বাবস্থায় একই হুকুম। পক্ষান্তরে সাধারণ ভুল- যার দ্বারা অর্থ একেবারে বিগড়ে যায় না, তাতে নামাজ নষ্ট হবে না।' (খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১১৮, ফাতাওয়া কাজিখান ১/৬৭)
তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত— নিজে ও পরিবারের সদস্যদের কোরআন তেলাওয়াত শুদ্ধ করার ব্যাপারে যত্নশীল হওয়া। কমপক্ষে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য যে সুরাগুলোর প্রয়োজন, সেগুলো শুদ্ধ করে নেওয়া আবশ্যক, অন্যথায় সে গুনাহগার হবে। (মুকাদ্দামায়ে জাজারিয়া- পৃ. ১১)
সহিহ শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত শেখার পরই আসছে বুঝে পড়ছেন, নাকি না বুঝে। নিচের আলোচনা থেকে ইনশাআল্লাহ স্পষ্ট হওয়া যাবে কোরআন তেলাওয়াত বুঝে এবং না বুঝে পড়ার পার্থক্য।
অর্থ না বুঝে তেলাওয়াত করলেও সওয়াব আছে। ‘আল্লাহ মুমিনদের ওপর বড়ই অনুগ্রহ করেছেন যে তিনি তাদের থেকেই একজন রাসুল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে তাঁর আয়াতগুলো তেলাওয়াত করেন, তাদের পরিশুদ্ধ করেন এবং কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেন। যদিও তারা এর আগে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতেই ছিল।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৬৪)
উল্লেখিত আয়াতে আল্লাহ তাআলা নবী প্রেরণের চারটি উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন। এগুলোর প্রতিটির স্বতন্ত্র গুরুত্ব বোঝা যায়। কোরআনের তেলাওয়াত নবী প্রেরণের পৃথক ও স্বতন্ত্র একটি উদ্দেশ্য বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: অর্থ বোঝা উত্তম, বিশুদ্ধ তেলাওয়াত ফরজ
হাদিসে এসেছে, ‘যারা সহিহ-শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত করে, তারা নেককার সম্মানিত ফেরেশতাদের সমতুল্য মর্যাদা পাবে। আর যারা কষ্ট সত্ত্বেও কোরআন শুদ্ধভাবে পড়ার চেষ্টা ও মেহনত চালিয়ে যায়, তাদের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব।’ (আবু দাউদ: ১৪৫৪)
কোরআন শরিফ মধুর কণ্ঠে পড়াও প্রশংসনীয়। হাদিস শরিফে সুন্দর কণ্ঠে পড়তে উৎসাহিত করা হয়েছে। বারা ইবনে আজেব (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা সুললিত কণ্ঠে কোরআন পড়ো, কেননা তা কোরআনের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দেয়।’ (শুআবুল ঈমান: ২১৪১)
উল্লেখিত আয়াত ও হাদিসগুলোর দ্বারা এ কথা প্রমাণ হয় যে কোরআন না বুঝে পড়লেও সওয়াব। কোরআনের তেলাওয়াত স্বয়ংসম্পূর্ণ পৃথক একটি ইবাদত। কোরআন শুধু তেলাওয়াত করলেও ঈমান বেড়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন তাদের সামনে কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায়। (সুরা আনফাল: ২) কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অন্তরে আল্লাহর ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। একেকটি অক্ষর পাঠ করলে দশ-দশটি নেকি পাওয়া যায়। হজরত উসমান (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআনের একটি হরফ পড়বে, সে একটি নেকি পাবে, আর প্রতিটি নেকি দশ গুণ করে বৃদ্ধি করে দেওয়া হবে।’ (তিরমিজি: ২৯১০)
আরও পড়ুন: যাঁর তেলাওয়াতের সুরে মুগ্ধ হতেন মহানবী (স.)
তবে, আল্লাহ তাআলা কোরআন শুদ্ধভাবে পড়ার পাশাপাশি বারংবার আদেশ করেছেন কোরআন নিয়ে গবেষণা করতে। বলেছেন এ থেকে উপদেশ গ্রহণ করতে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তো কোরআনকে সহজ করেছি উপদেশ গ্রহণের জন্য। অতএব উপদেশ গ্রহণ করার কেউ আছে কি?’ (সুরা কামার: ১৭) কোরআন সারাজীবন শুধু না বুঝে তেলাওয়াত করলে অনেক নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হতে হয়। যেমন—
১) ওহির উদ্দেশ্য বুঝতে ব্যর্থ: কোরআন না বুঝে শুধু পড়তে থাকলে কোরআন নাজিলের মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আপনার ওপর অবতীর্ণ করেছি, যাতে করে তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে গবেষণা করে। (সুরা ছোয়াদ: ২৯) আর কোরআনের অর্থ বোঝার চেষ্টা না করলে এর আয়াতসমূহ নিয়ে গবেষণা করা তো অসম্ভব একটি ব্যাপার।
২) মনের পরিচর্যা পুরোপুরি সম্ভব হয় না: ফুলের বাগানে পরিচর্যা না হলে আগাছা জন্মায়। মনের আগাছা হচ্ছে শয়তানের ওয়াসওয়াসা, কুচিন্তাসমূহ। কোরআন তেলাওয়াত করার সময় মনে ভালো অনুভূতি জন্ম নেয়, যদি সেই আয়াতসমূহের প্রতি মনোযোগ না দেই এবং আল্লাহর আয়াত-নিদর্শন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা না করি, তাহলে তা হবে ফুল গাছ লাগানো বাগানে পানি না দেওয়ার মতো, সেখানে জন্মাবে আগাছা আর সেই উদ্যান হয়ে যাবে নষ্ট।
আরও পড়ুন: কোরআনের মর্মার্থ বোঝার সূত্র
৩) কোরআনের মূল উদ্দেশ্য থেকে বঞ্চিত: কোরআন পাঠের পাঁচটি উদ্দেশ্য হতে পারে ১)আল্লাহর কাছ থেকে উপদেশ গ্রহণ ২)ইলম অর্জন ৩)আল্লাহ যা করতে বলছেন তা বাস্তবায়ন করা ৪) মন ও অন্তরের আরোগ্যলাভ ৫)আল্লাহ তাআলার সঙ্গে কথোপকথন। অর্থ না বুঝার কারণে এ সকল উপকার থেকে বঞ্চিত হতে হয়।
৪) ব্যধিগ্রস্ত অন্তর পরিশোধন হয় না: অধিকাংশ লোকের একটি ভুল ধারণা হচ্ছে, কোরআন শুধুমাত্র একটি আদেশ-নিষেধের কিতাব। অথচ বিধি-নিষেধের আলোচনা করা হয়েছে এমন আয়াতের সংখ্যা শতকরা ১০ ভাগেরও কম! বাকি ৯০ ভাগেরও বেশি আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে এমন বিষয় সম্পর্কে, যা আমাদের মন ও মস্তিষ্কের খোরাক, এগুলো আমাদের মনকে সতেজ ও পুষ্ট রাখে। কাজেই এই মরিচা পড়া অন্তরে ঘষা মাজা এবং মজবুত করতে চাই কোরআন। আমাদের চারপাশে নানা প্রলোভন ও পরীক্ষা থেকে বাঁচতে সর্বদা তাজকিরাহ (এমন উপদেশ যা আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়) ও সতর্কবাণী মনে রাখা প্রয়োজন, যা আমরা লাভ করতে পারি অর্থ বোঝার মাধ্যমে। এ কারণেই আল্লাহ বলছেন, ‘হে মানবকুল, তোমাদের কাছে উপদেশবাণী এসেছে তোমাদের পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে এবং অন্তরের রোগের নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত মুসলমানদের জন্য’ (ইউনুস ৫৭)। ‘আমি কোরআনে এমন বিষয় নাজিল করি, যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত...’। (ইসরা: ৮২) তাই অন্তরের ব্যাধি থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর দেওয়া ওষুধ সবচেয়ে কার্যকর।
আরও পড়ুন: কোরআন সর্বশ্রেষ্ঠ মুজেজা কীভাবে?
৫) মিলছে না দৃঢ়তা লাভের সুযোগ: আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ও সতর্কতার খবরে ঈমান বৃদ্ধি পায়। অন্তর দৃঢ়তা লাভ করে। আল্লাহ বলেন, ‘আর যখন কোনো সুরা অবতীর্ণ হয়, তখন তাদের কেউ কেউ বলে, এ সুরা তোমাদের মধ্যেকার ঈমান কতটা বৃদ্ধি করলো? অতএব যারা ঈমানদার, এ সুরা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করেছে এবং তারা আনন্দিত হয়েছে’। (তাওবা: ১২৪)
আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহ (স.)-এর ওপর অল্প অল্প করে কোরআন নাজিল করেছেন। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, কাফেরগণ জিজ্ঞেস করল, কোরআন তার (মুহাম্মদ স. এর) ওপর একসঙ্গে নাজিল হলো না কেন? কাফেরদের এই প্রশ্নের উত্তরে একই আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলছেন, (আমি কোরআন অল্প অল্প করে নাজিল করেছি) যাতে করে আপনার হৃদয় শক্তিশালী হয়। (সুরা ফুরকান: ৩২)
সুতরাং হৃদয়কে শক্তিশালী করতে হলে নিয়মিত কোরআনের অর্থ বুঝে তেলাওয়াতের বিকল্প নেই।
৬) আল্লাহ তাআলার সঙ্গে কথোপকথন: হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) কোরআন তেলাওয়াতের সময় আয়াতসমূহের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করতেন। যেমন- যখন তিনি আল্লাহ তাআলার প্রশংসা সম্বলিত কোনো আয়াত তেলাওয়াত করতেন, তখন তিনিও নিজে নিজে আল্লাহর প্রশংসা করতেন। যখন কোনো প্রার্থনার আয়াত আসতো, তখন তিনিও প্রার্থনা করতেন, যখন কোনো আয়াতে আল্লাহ তাআলার আশ্রয় চাওয়া হতো, তখন তিনিও আল্লাহর আশ্রয় চাইতেন। (মুসলিম) কিন্তু কোরআনের অর্থ না বুঝলে আয়াতসমূহের সঙ্গে এরকম মিথস্ক্রিয়া করার কল্পনাও করা যায় না।
আরও পড়ুন: কোরআন ভুলে যাওয়ার পরিণাম ভয়াবহ
৭) নির্দেশনা বুঝে নেওয়া অসম্ভব: কোরআন থেকে যা-ই তেলাওয়াত করা হয় কিংবা শোনা হয়, তার সবটাই আল্লাহর পক্ষ হতে মানবজাতির প্রতি সরাসরি নির্দেশনা। অর্থ বুঝে তেলাওয়াত না করলে আল্লাহ তাআলার এই নির্দেশনা অজানাই থেকে যায়, যা আল্লাহর একজন খাঁটি বান্দার জন্য বাঞ্ছনীয় নয়।
৮) আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে বাধা: সালাত আদায় করা, রোজা পালন করা যদিও আল্লাহর ফরজ বিধান; কিন্তু শুধুমাত্র ফরজ বিধানসমূহ পালন করার মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব নয়। বরং আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হলে হৃদয়ে তার জন্য ভালোবাসা থাকতে হবে, তার প্রতিটি ফরজ বিধান পালনের ক্ষেত্রে আন্তরিকতা থাকতে হবে, তার ওপর সীমাহীন আস্থা রাখতে হবে, তার সৃষ্টিসমূহ নিয়ে গবেষণা করতে হবে। আর কোরআনের অর্থসমূহ অনুধাবন না করলে ফরজ বিধানসমূহের পাশাপাশি হৃদয়কে পরিশোধিত করে আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা দিয়ে পরিপূর্ণ করা অসম্ভব।
৯) চরিত্র গঠনে কোরআন বোঝার বিকল্প নেই: হজরত আয়েশাকে (রা.)-কে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর চরিত্রের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছিলেন, তার চরিত্র হল আল কোরআন। সুতরাং রাসুলুল্লাহ (স.)-এর চরিত্র হলো আল কোরআনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। তাই নবীজি (স.)-এর সুমহান আদর্শ অনুসরণ করতে হলে সিরাত পাঠ এবং ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে আয়াতসমূহের মিল খুঁজে বের করা জরুরি। তাই কোরআন থেকে শিক্ষার বিকল্প নেই। কেননা তিনি নিজেই কোরআনের শিক্ষাকে অনুসরণ করে সুমহান চরিত্রের অধিকারী হয়েছেন। আর তাই কোরআনি চরিত্র গঠন করতে হলে কোরআনের অর্থ অনুধাবনপূর্বক এর শিক্ষা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে। হিজরতের সময় রাসুলুল্লাহ (স.) একান্ত মনে ভাবনা-দুশ্চিন্তা ছাড়াই পাঠ করে যাচ্ছিলেন। ‘আর বলুন হে আমার রব, আমাকে প্রবেশ করান উত্তমভাবে এবং বের করুন উত্তমভাবে’। আর আপনার পক্ষ থেকে আমাকে সাহায্যকারী শক্তি দান করুন’। (ইসরা ৮০)
আরও পড়ুন: সাহাবিদের মধ্যে কোরআন লিখতেন যাঁরা
১০) কোরআনের চোখে বিশ্ব দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত: কোরআনহীন অন্তর শূন্য ঘরের মতো, যে ঘরে কোনো আসবাব নেই। কোরআনের শিক্ষা না থাকার কারণে সে দুনিয়ার জগতকেই বড় ও আসল মনে করে। ফলে পরকালের প্রতি বান্দা হয়ে পড়ে উদাসীন। দৈনন্দিন জীবনে আমরা নানা বিচিত্র ঘটনার সামনে এসে দাঁড়াই। মুসলিম উম্মাহর উচিত—সমস্যাগুলোর সমাধান আল্লাহর কালামের কাছ থেকে নেওয়ার মতো সক্ষমতা অর্জন করা। এটা কেবল তখনই সম্ভব হবে, যখন কোরআন বুঝতে পারবো, একইসঙ্গে দৈনন্দিন পরিস্থিতির মিল খুঁজে বের করতে পারবো।
কোরআন অনুযায়ী জীবন গড়া ফরজ ইবাদত। আজীবন কোরআনকে আঁকড়ে ধরতে পারলে আল্লাহর পথ থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাব না। রাসুল (স.) বিদায় হজের ভাষণে কোরআনকে আঁকড়ে ধরার গুরুত্ব বলেছেন। তিনি তাঁর ভাষণে বলেন, ‘আমি তোমাদের মধ্যে এমন এক জিনিস রেখে যাচ্ছি যা আঁকড়ে ধরলে তোমরা পথ হারাবে না। তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব।’ (মুসলিম: ২৮১৭)
যারা কোরআনকে গভীরভাবে অনুধাবন করে না, আল্লাহ তায়ালা কোরআনের বিভিন্ন স্থানে তাদের নিন্দা করেছেন। এ ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘তারা কি কোরআন নিয়ে গভীর চিন্তা করে না? নাকি তাদের অন্তরসমূহ তালাবদ্ধ!’ (সুরা মুহাম্মদ: ২৪)
আরও পড়ুন: কোরআন যাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করে না
কোরআন তো নাজিল হয়েছে মানব জাতির হেদায়েতের জন্য। আর তখনই হেদায়েতের পথ সহজ হবে যখন মহান আল্লাহর এই বাণী সম্বলিত কিতাবকে বোঝা যাবে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আমি একে আরবি কোরআন রূপে নাজিল করেছি যাতে তোমরা বুঝতে পার।’ (সুরা ইউসুফ: ২)। আল্লাহ কোরআন অবতীর্ণ করে আমাদের ওপর দয়া করেছেন, তাঁর সীমাহীন দয়ার একটি হলো, তিনি নিজে কোরআনকে শিক্ষা দিয়েছেন। সে নেয়ামতের কথাটিই যেন সুরা আর-রহমানে প্রকাশ পায় ‘পরম করুণাময়, তিনি শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন।’ (সুরা আর-রহমান: ১-২)
আসলে মানব জীবনের সার্থকতাই হলো আল্লাহর এই কালামকে বুঝতে পারা ও এর নির্দেশগুলো হৃদয়ঙ্গম করা। কেননা সৃষ্টির সার্থকতা একমাত্র স্রষ্টার আদেশ পালনের মাঝেই নিহিত। তাই আসুন কোরআনকে জীবনের চলার পথের পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করি। কোরআনকে বানিয়ে নিই হৃদয়ের বসন্ত; হৃদয়ের আলো হিসেবে। কেননা রাসুল (স.) নিজে কোরআনকে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ বানিয়ে আজীবন এ দোয়াই করেছেন ‘হে আল্লাহ! আপনি কোরআনকে বানিয়ে দিন আমার হৃদয়ের বসন্ত, আমার হৃদয়ের আলো, আমার দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি দূরকারী!’ (সিলসিলা সহিহাহ: ১/৩৩৭)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সহিহ শুদ্ধভাবে কোরআন শেখার, বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করার এবং কোরআনের অন্তর্নিহিত অর্থ ও ব্যাখ্যা বোঝার তাওফিক দান করুন। আমিন।