শুক্রবার, ২৮ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

সাহাবিদের মধ্যে কোরআন লিখতেন যাঁরা

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ আগস্ট ২০২২, ০১:৫৯ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

পবিত্র কোরআন আল্লাহর বাণী। এটি মানুষের চূড়ান্ত জীবন বিধান। দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে সম্পূর্ণ কোরআন শেষ ও চূড়ান্ত নবী হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর উপর অবতীর্ণ হয়। সাধারণভাবে সব সাহাবিই কোরআন ও তার আয়াতগুলো মুখস্থ করতেন। আর লিখে রাখতেন তাঁদের কয়েকজন মাত্র। সাহাবিদের মধ্যে যাঁরা কোরআন লিপিবদ্ধ করতেন তাঁদের দুটি শ্রেণি ছিল। একদল রাসুলুল্লাহ (স.)-এর পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। অপর দল স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়েই কোরআন সংরক্ষণ করতেন। 

যাঁরা দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন, সেসব সাহাবি খেজুর গাছের ছাল, পাথর, চামড়া, কাগজ ও হাড়ের উপর কোরআন লিপিবদ্ধ করতেন। এরপর তা রাসুল (স.)-এর ঘরে জমা করতেন। কোরআন সংরক্ষণে রাসুল (স.) মুখস্থ করার পাশাপাশি লিপিবদ্ধ করার ওপরও জোর দেন। ওহি নাজিল হওয়ার পর তিনি বলতেন, ‘এসব আয়াতকে সেই সুরার অন্তর্ভুক্ত করো, যাতে এটা ও এটার উল্লেখ আছে।’ (ইবনে হাজার আসকালানি, মুওয়াফাকাতুল খাবারি, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৪৪)


বিজ্ঞাপন


রাসুলুল্লাহ (স.)-এর জীবদ্দশায়ই সম্পূর্ণ কোরআন লিপিবদ্ধ হয়। (আবদুল্লাহ শাহাতা, উলুমুল কোরআন, পৃষ্ঠা: ২১-২২)

আরও পড়ুন: সাহাবিদের সংখ্যা কত?

ইসলামের সূচনাকালে আরবে লিখতে পারা লোকের সংখ্যা ছিল অল্প। ফলে সমাজে শিক্ষিতজনদের বিশেষ মর্যাদা ছিল। মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে রাসুলুল্লাহ (স.) সর্বস্তরের মুসলমানের শিক্ষা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা দুই-তিনজন থেকে বেড়ে পঞ্চাশে উপনীত হয়। তাঁদের ভেতর প্রায় ৪০ জনই কোনো না কোনোভাবে ওহি লিপিবদ্ধ করার কাজ করেছেন। আবার কেউ কেউ ওহি না লিখলেও রাষ্ট্রীয় অন্যান্য কাজে অংশগ্রহণ করতেন। 

মক্কায় সর্বপ্রথম ওহি লিপিবদ্ধ করেন আবদুল্লাহ বিন আবি সারাহ (রা.)। আর মদিনায় সর্বপ্রথম রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সামনে ওহি লিপিবদ্ধ করেন উবাই বিন কাব (রা.)। অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি ওহি লিপিবদ্ধ করেন জায়েদ বিন সাবিত (রা.)। কোরআন সংরক্ষণ ও মলাটবদ্ধ করার পেছনে এই মহান সাহাবির অবদান অপরিসীম। ইমাম বুখারি (রহ.) জায়েদ বিন সাবিত (রা.)-কে  ‘কাতিবুন নাবী’ বা নবীর লেখক হিসেবে বিশেষায়িত করেছেন। (হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.), ফাতহুল বারি, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা-২২)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: নবীজির রক্ত পান করেছিলেন যেসব সাহাবি

ওহি লেখক হিসেবে সাহাবিদের ভেতর খ্যাতিমান ছিলেন জায়েদ বিন সাবিত (রা.), আলী ইবনে আবি তালেব (রা.), উবাই বিন কাব, উসমান বিন আফফান (রা.), জোবায়ের ইবনুল আওয়াম প্রমুখ। এছাড়া আবদুল্লাহ ইবনে আরকাম, মুগিরা বনি শোবা, মুআইকিব বিন আবি ফাতিমা, হানজালা বিন রাবি, শুরাহবিল ইবনে হাসনাহ, আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রা.) রাসুল (স.)-এর লেখক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কতজন সাহাবি নিয়মিত ওহি লিপিবদ্ধ করতেন তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মতপার্থক্য রয়েছে। কেউ বলেছেন ১৩ জন। কারো মতে, তাঁদের সংখ্যা বিশের বেশি ছিল। আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) তাঁদের সংখ্যা ২৩ জন লিখেছেন। তিনি তাঁদের নাম ও জীবনী লিপিবদ্ধ করেছেন ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ গ্রন্থে। 

তাঁরা হলেন—আবু বকর, ওমর, উসমান, আলী, আব্বান বিন সাঈদ, উবাই বিন কাব, জায়েদ বিন সাবিত, মুআজ বিন জাবাল, আরকাম বিন আবিল আরকাম, সাবিত বিন কায়েস, হানজালা বিন রাবি, খালিদ বিন সাঈদ, খালিদ বিন ওয়ালিদ, জোবায়ের ইবনুল আওয়াম, আবদুল্লাহ বিন আবি সারাহ, আমের বিন ফাহিরা, আবদুল্লাহ বিন আরকাম, আবদুল্লাহ বিন জায়েদ, আলা বিন হাদরামি, মুহাম্মদ বিন মাসলামা, মুয়াবিয়া বিন আবি সুফিয়ান, মুগিরা বিন শোবা (রা.)। (খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা: ৩২১-৫৬)

ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) এসব সাহাবির মর্যাদা সম্পর্কে বলেছেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই তাঁরা ছিলেন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্বাচিত। আল্লাহ তাঁদের তাঁর কালাম লিপিবদ্ধ করার জন্য মনোনীত করেছেন এবং তাঁর নবী (স.) তাঁদের প্রতি আস্থা রেখেছেন, যা তাঁদের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের শক্তিশালী প্রমাণ।’ (হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.), ফাতহুল বারি, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা-২১)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পবিত্র কোরআনের সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখার তাওফিক দান করুন। কোরআন অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর