কোরআন বুঝে পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম। তবে, এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শুদ্ধ করে পড়া। অন্যভাবে বললে, কোরআনের অর্থ না বুঝলে গুনাহ নেই, কিন্তু শুদ্ধ করে পড়া ফরজ। অন্তত নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য বিশুদ্ধ কোরআন শেখা আবশ্যক।
কারণ, `নামাজের কেরাতে `লাহনি জলি' বা অর্থ বিকৃত হওয়ার মতো ভুল হলে নামাজ ভেঙে যাবে। চাই তা তিন আয়াত পরিমাণের ভেতরে হোক বা পরে। সর্বাবস্থায় একই হুকুম। পক্ষান্তরে সাধারণ ভুল- যার দ্বারা অর্থ একেবারে বিগড়ে যায় না, তাতে নামাজ নষ্ট হবে না।' (খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১১৮, ফাতাওয়া কাজিখান ১/৬৭)
বিজ্ঞাপন
তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত— নিজে ও পরিবারের সদস্যদের কোরআন তেলাওয়াত শুদ্ধ করার ব্যাপারে যত্নশীল হওয়া। কমপক্ষে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য যে সুরাগুলোর প্রয়োজন, সেগুলো শুদ্ধ করে নেওয়া আবশ্যক, অন্যথায় সে গুনাহগার হবে। (মুকাদ্দামায়ে জাজারিয়া- পৃ. ১১)
হজরত আলী (রা.) বলেন, 'রাসুলুল্লাহ (স.) তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন- ‘তোমরা প্রত্যেকেই এমনভাবে কোরআন পড়ো, যেভাবে তোমাদের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে' (ফাজায়েলুল কোরআন, ইমাম কাসেম ইবনে সাল্লাম- পৃ. ৩৬১)।
অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ (স.) সাহাবাদের যেভাবে কোরআন শিখিয়েছেন এবং পরবর্তী পরম্পরা যে নিয়মে পড়ে আসছেন, সেভাবেই তেলাওয়াত করতে হবে। সেই বিশুদ্ধ নিয়মে যারা কোরআন শেখায় ও শেখে তাদেরকে উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ঘোষণা করেছেন বিশ্বনবী (স.)। 'তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে কোরআন শেখে এবং শিক্ষা দেয়।' ( সহিহ বুখারি: ৫০২৭, আবু দাউদ: ১৪৫২)
নবী করিম (স.) আরো ইরশাদ করেন, 'যারা শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত করে, তারা নেককার সম্মানিত ফেরেশতাদের সমতুল্য মর্যাদা পাবে এবং যারা কষ্ট সত্ত্বেও কোরআন শুদ্ধভাবে পড়ার চেষ্টা ও মেহনত চালিয়ে যায়, তাদের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব। (আবু দাউদ: ১৪৫৮)
সুন্দর কণ্ঠে কোরআন পড়তেও উৎসাহিত করা হয়েছে হাদিসে। 'তোমরা সুললিত কণ্ঠে কোরআন শরিফ পড়ো, কেননা তা কোরআনের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দেয়। ' (শুআবুল ঈমান: ২১৪১)
কিন্তু সুরা-কেরাত ও নামাজের তসবিহ ইত্যাদি শুদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত নামাজ ছেড়ে দেওয়ার অবকাশ নেই। সুরা-কেরাতও শুদ্ধ করতে থাকবে এবং নামাজও আদায় করতে থাকবে। তবে, এ ধরনের লোকেরা শুদ্ধ পাঠকারী ব্যক্তির ইমামতি করবে না। (হিদায়া ১/৫৮, জাওয়াহিরুল ফিক্হ ১/৩৩৯)
বর্তমানে অনেক লোককে দেখা যায়, তারা বাংলা উচ্চারণ দেখে কোরআন পাঠ করেন, অথচ আরবি ছাড়া অন্য ভাষায় কোরআনের সঠিক উচ্চারণ অসম্ভব, তাই কোরআনকে অন্য ভাষায় লেখা বা পড়া উলামায়ে কেরামের ঐকমত্যে নাজায়েজ। এতে কোরআনের শব্দ ও অর্থ বিকৃত হয়ে যায়, যা সম্পূর্ণ হারাম। (আল ইতকান-পৃ. ৮৩০, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া ১/৪৩)
আবার কেউ কেউ কোরআন শুদ্ধ করার চেয়েও কোরআনের অর্থ বুঝতে বেশি আগ্রহী। এতই আগ্রহী যে, শুদ্ধ তেলাওয়াতকেই অন্তরালে রেখে দেন। এটি মোটেও উচিত না। যদিও অর্থ বোঝাও জরুরি। কারণ অর্থ না জানার কারণে ওহির প্রকৃত উদ্দেশ্যই ব্যাহত হয়। একইসঙ্গে, কোরআন নিয়ে গবেষণার সুযোগ থাকে না, ফলে ব্যধিগ্রস্ত অন্তরের চিকিৎসা করা সম্ভব হয় না। এছাড়াও, আল্লাহর সরাসরি নির্দেশনাগুলো না বোঝার কারণে, মহান আল্লাহর সঙ্গে নীবিড় সম্পর্ক স্থাপন সম্ভব হয় না, যা প্রকৃত মুমিনের জন্য সত্যিই লজ্জার।
কিন্তু এরপরও সবার আগে জরুরি হলো তেলাওয়াত শুদ্ধ করা। কারণ, এটি ফরজে আইন, আর এর ওপরই নামাজ শুদ্ধ হওয়ার ভিত্তি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মহাপবিত্র কোরআনকে জানার, বোঝার ও সহিহভাবে তেলাওয়াত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।