পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহর বাণী। মানুষের চূড়ান্ত জীবন বিধান। তাই যত্নের সঙ্গে আগ্রহ নিয়ে কোরআন শেখা জরুরি। মনে রাখতে হবে, কোরআন শিখতে পারা সৌভাগ্যের ব্যাপার। আবার এই শিক্ষা অর্জনের পর অবহেলার কারণে ভুলে যাওয়া মারাত্মক গুনাহের কাজ। তাই পবিত্র কোরআন শিখতে হবে গুরুত্বের সঙ্গে, একইভাবে ভুলে যাওয়ার ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে।
হজরত সাদ ইবনে উবাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন শেখার পর তা ভুলে যায়, আল্লাহ তাআলা তাকে হাশরের মাঠে এমন অবস্থায় ওঠাবেন যে, কুষ্ঠরোগের মতো তার শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঝলসানো মনে হবে।’ (আবু দাউদ: ১৪৭৪)
বিজ্ঞাপন
প্রকৃতিগত কারণে মানুষের ভুলে যাওয়ার রোগ আছে। ইসলামিক স্কলারদের মতে, এই মানবীয় দুর্বলতার কারণে কেউ কোরআন শিখে ভুলে গেলে তাতে গুনাহ হবে না। তবে অবহেলাজনিত কারণে কোরআন ভুলে যাওয়া পাপ ও অপরাধ। ইসলামি আইনজ্ঞরা এ ব্যাপারে একমত। সুতরাং তা থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক।
আরও পড়ুন: কাজের ফাঁকে রেকর্ড করা তেলাওয়াত শোনা জায়েজ?
আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) উদ্ধৃত করেছেন, ‘কোনো বান্দা যখন কোরআন মুখস্থ করে তা ভুলে যায় সে পাপের জন্ম দেয়। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন, তোমাদেরকে যে বিপদ স্পর্শ করে তা তোমাদের হাতের উপার্জন। আর কোরআন ভুলে যাওয়া সবচেয়ে বড় বিপদ।’ (ফাতহুল বারি: ৯/৮৬)
শায়খ মুহাম্মদ বিন সালিহ বিন উসাইমিন (রহ.)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, শিক্ষার্থীরা কখনো ‘প্রমাণ’ হিসেবে কোরআনের বহু আয়াত মুখস্থ করে এবং তার বড় একটি অংশই ভুলে যায়। এতে কি পাপ হবে?
বিজ্ঞাপন
জবাবে তিনি বলেন, কোরআন ভুলে যাওয়ার দুটি কারণ। এক. প্রকৃতিগত কারণে, দুই. উপেক্ষা ও অবহেলার কারণে। মানবীয় দুর্বলতা ও প্রকৃতিগত কারণে অনেক কিছুই মানুষ ভুলে যায়। এই কারণে কোরআন ভুলে গেলে তাতে কোনো দোষ নেই। এমনটি মহানবী (স.)-এর জীবনেও ঘটেছিল। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) একজন কোরআন তেলাওয়াতকারীকে রাতে মসজিদে কোরআন পড়তে শুনলেন। এরপর তিনি বলেন, আল্লাহ তার প্রতি করুণা করুন। সে আমাকে অমুক অমুক আয়াত মনে করিয়ে দিয়েছে, যা অমুক অমুক সুরা থেকে ভুলতে বসেছিলাম।’ (সহিহ বুখারি: ৫০৪২)
আরও পড়ুন: কঠিন ফিতনার দিনে ঈমান রক্ষার আমল
আর অবহেলার কারণে যদি কেউ আল্লাহবিমুখ থাকে এবং কোরআন ভুলে যায়, তবে তার পাপ হবে। কেননা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা এসেছে, ‘যে আমার স্মরণে বিমুখ থাকবে, অবশ্যই তার জীবন-যাপন হবে সংকুচিত এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন উঠাব অন্ধ অবস্থায়।’ (সুরা ত্বহা: ১২৪)
লক্ষণীয়, কোরআন মুখস্থ করার ক্ষেত্রে শয়তানের একটি প্রতারণা হলো- ভুলে যাওয়ার ভয়ে মুখস্থ না করা। শয়তান ভয় দেখায়- কোরআন মুখস্থ করে ভুলে যাওয়া পাপ। সুতরাং মুখস্থ করো না। মুমিনের উচিত- শয়তানের প্রতারণায় পা না দিয়ে বরং মর্যাদাপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ আয়াতগুলো বেশি বেশি স্মরণ করা। এটাই মুমিনের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ বলেন, ‘... তোমরা শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো। কেননা শয়তানের কৌশল অবশ্যই দুর্বল।’ (সুরা নিসা: ৭৬)
বস্তুত পরকাল ও অদৃশ্যে বিশ্বাসীরা অর্থাৎ মুমিন বান্দারা কোরআন শেখা থেকে বিরত থাকতে পারেন না, আবার ভুলে যাওয়াও তাদের জন্য শোভনীয় নয়। কেননা কোরআন থেকে সর্বাধিক উপকৃত হয় তারাই।‘ এই কোরআন পরহেজগারদের জন্য পথনির্দেশ, যারা অদৃশ্যের ওপর ঈমান আনে...’ (সুরা বাকারা: ২-৩)। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআন মুখস্থ করা এবং তা সংরক্ষণের সৌভাগ্য দান করুন। আমিন।