images

ইসলাম

রমজানে যেসব কাজের সওয়াব বেশি

ধর্ম ডেস্ক

০৪ মার্চ ২০২৪, ০৭:৫০ পিএম

আসছে অত্যন্ত বরকতপূর্ণ মাস পবিত্র রমজান। প্রকৃত মুসলমানরা এই মাস আগমনের প্রহর গুনেন। কেননা এই মাসে রয়েছে গুনাহ মাফ, আল্লাহর রহমত লাভ ও বিপুল নেকি লাভের অবারিত সুযোগ। মাহে রমজানে ফরজ ইবাদত ছাড়াও এমন কিছু কাজ আছে যেগুলোর সওয়াব অনেক বেশি। নিচে তেমন কিছু আমল তুলে ধরা হলো।

রোজাদারকে ইফতার করানো
রোজাদারকে ইফতার করানো রমজানের বিশেষ নেক আমল। হাদিসের ভাষ্যমতে, যে আমলে রোজার সওয়াব অর্জিত হয়। জায়েদ ইবনে খালেদ আল-জুহানি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে; রোজাদারের সওয়াব থেকে একটুও কমানো হবে না।’ (তিরমিজি: ৮০৭; ইবনে মাজাহ: ১৭৪৬; ইবনে হিব্বান: ৮/২১৬; সহিহ আল-জামে: ৬৪১৫)

যত বেশি সম্ভব দান-সদকা করা
উদারতা ও মহত্ত্বের শিক্ষা দেয় পবিত্র মাহে রমজান। রমজানে দান-সদকায় অফুরন্ত সওয়াব। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) সর্বাপেক্ষা বেশি দানশীল ছিলেন। তাঁর দানশীলতা বহুগুণ বর্ধিত হতো রমজানের পবিত্র দিনে যখন জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে দেখা করতেন। জিবরাইল (আ.) রমজানের প্রতি রাতে তাঁর সঙ্গে দেখা করে কোরআনের সবক দিতেন। রাসুলুল্লাহ (স.) কল্যাণ বণ্টনে প্রবাহিত বাতাসের চেয়েও বেশি দানশীল ছিলেন। (সহিহ বুখারি: ৩৫৫৪)

আরও পড়ুন: রমজানে যেসব গুনাহ ভুলেও করবেন না

অসহায়দের প্রতি সাহায্যের হাত সম্প্রসারিত করে বিপুল সওয়াব লাভের সর্বোত্তম সময় রমজান। অনেক গরিব-দুঃখী মানুষ আছেন, যারা সাহরি ও ইফতারে সামান্য খাবারও জোগাড় করতে হিমশিম খান। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় রমজানে তাদের দুঃখটা খানিক বেড়ে যায়। এ ধরনের মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া প্রতিটি মুসলমানের ঈমানি কর্তব্য। এই কর্তব্য যারা পালন করেন তাদের প্রতিদান হবে অনেক বেশি। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি হালাল কামাই থেকে একটি খেজুর পরিমাণ সদকা করবে, (আল্লাহ তা কবুল করবেন) এবং আল্লাহ শুধু পবিত্র মাল কবুল করেন আর আল্লাহ তাঁর ডান হাত দিয়ে তা কবুল করেন। এরপর আল্লাহ দাতার কল্যাণার্থে তা প্রতিপালন করেন যেমন তোমাদের কেউ অশ্ব শাবক প্রতিপালন করে থাকে, অবশেষে সেই সদকা পাহাড় বরাবর হয়ে যায়। (বুখারি: ১৪১০)

রাত জেগে ইবাদত করা
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রাতে ঈমানসহ পুণ্যের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (সহিহ বুখারি: ৩৬) রমজানে যেসব কাজের সওয়াব বেশি

কারো কারো মতে এখানে রাত জেগে ইবাদত দ্বারা উদ্দেশ্য তারাবির নামাজ। তারাবির গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক। নাসায়ির হাদিসে এসেছে,  ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও পরকালের আশায় রমজানের রাতে কিয়ামুল লাইল আদায় করবে, তার অতীতের পাপ মার্জনা করা হবে।’ (নাসায়ি: ২২০৫)

বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত 
আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘সিয়াম এবং কোরআন বান্দার জন্য শাফাআত করবে। সিয়াম বলবে, হে রব! আমি তাকে দিনে খাবার গ্রহণ করতে ও প্রবৃত্তির তাড়না মেটাতে বাধা দিয়েছি। অতএব তার ব্যাপারে এখন আমার শাফাআত কবুল করুন। কোরআন বলবে, হে রব! আমি তাকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে এখন আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে।’ (শুআবুল ঈমান: ১৮৩৯) রমজানে যেসব কাজের সওয়াব বেশি

আরও পড়ুন: প্রতিদিন কোরআন তেলাওয়াতের ফজিলত

একজন অপরজনকে কোরআন শোনানো
রমজান মাসে একজন অপরজনকে কোরআন শোনানো একটি উত্তম আমল। এটিকে দাওর বলা হয়। ইবনে আববাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, জিবরাইল (আ.) রমজানের প্রতি রাতে রাসুল (স.)-এর সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং রাসুল (স.) তাকে কোরআন শোনাতেন। (বুখারি: ১৯০২)

রমজানের শেষ দশকে ইবাদত বাড়িয়ে দেওয়া
আয়েশা (রা.) বলেন, যখন রমজানের শেষ দশক আসত, তখন রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁর লুঙ্গি কষে নিতেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত জেগে থাকতেন ও পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। (সহিহ বুখারি: ২০২৪) রমজানে যেসব কাজের সওয়াব বেশি

লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করা 
পবিত্র রমজানে এমন একটি রাত আছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর আপনি কি জানেন কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। সেই রাতে ফেরেশতার রুহ (জিব্রাইল) অবতীর্ণ হয়, প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি সেই রাত, ফজরের সূচনা পর্যন্ত।’ (সুরা কদর: ১-৫)

তাই সৌভাগ্যবানদের কাতারে জায়গা করে নিতে প্রিয়নবী (স.) এই রাতের সন্ধান করার ব্যাপারে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। আয়েশা (রা.) বলেন, মহানবী (স.) বলেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান করো।’ (সহিহ বুখারি: ২০১৭)

আরও পড়ুন: শবে কদরে ৬টি দোয়া করতে ভুলবেন না

সামর্থ্য থাকলে ওমরা করা
রমজানে ওমরার অনেক ফজিলত রয়েছে। এক হাদিসে এসেছে পবিত্র রমজান মাসে ওমরা পালনে হজের সমতুল্য সওয়াব পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘রমজান মাসের ওমরা (সওয়াবের ক্ষেত্রে) হজের সমতুল্য।’ (ইবনে মাজাহ: ২৯৯১)

ইতেকাফ করা
রমজানে ইতেকাফ একটি মহান ইবাদত। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন। তাঁর ওফাত পর্যন্ত এই নিয়মই ছিল। (সহিহ বুখারি: ২০২৬) হাদিসে এসেছে ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এক দিন ইতেকাফ করবে আল্লাহ তায়ালা তার ও জাহান্নামের মাঝে তিন পরিখা পরিমাণ দূরত্ব সৃষ্টি করবেন; যার দূরত্ব দুই দিগন্তের দূরত্বের থেকে বেশি দূরত্ব হবে।’ (কানযুল উম্মাল: ২৪০১৯)

দোয়া, জিকির ও ইস্তেগফারে মগ্ন থাকা
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তিন ধরনের লোকের দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। ১. রোজাদার যখন ইফতার করে, ২. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া, ৩. মজলুমের দোয়া। মজলুম ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ মেঘমালার ওপর উঠিয়ে নেন এবং এজন্য আসমানের সব দরজা খুলে দেওয়া হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমার ইজ্জতের কসম! আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব, যদিও তা কিছুকাল পরে হয়।’ (তিরমিজি: ৩৫৯৮)

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘মহান আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে অধিক সম্মানিত কোনো জিনিস নেই।’ (ইবনে মাজাহ: ৩৮২৯)

মেসওয়াক করা
নবীজি মেসওয়াকের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। রমজানে সেই গুরুত্ব স্বাভাবিকভাবেই আরও বেড়ে যায়। হাদিসে এসেছে: অর্থাৎ মেসওয়াক মুখের জন্য পবিত্রকারী, এবং রবের সন্তুষ্টি আনয়নকারী। রাসুলুল্লাহ (স.) রোজা রেখেও মেসওয়াক করতেন বলে বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়। (সহিহ ইবনে খুযাইমাহ: ১৩৫)

আরও পড়ুন: মৃত্যুর সময় কালেমা পড়া সহজ হয় যে আমলে

কোরআন মুখস্থ করা
কোরআন হিফজ করা একটি মর্যাদাপূর্ণ আমল। কেননা আল্লাহ তাআলা নিজেই কোরআন হিফজের দায়িত্ব নিয়েছেন। আর সেই দায়িত্ব তিনি বান্দাদেরকে কোরআন হিফজ করানোর মাধ্যমেই সম্পাদন করেন। কোরআনে এসেছে: ‘নিশ্চয় আমি কোরআন নাজিল করেছি, আর আমিই তার হিফাজতকারী।’ (সুরা হিজর: ০৯)

রমজানের খতম তারাবি যা সারা বিশ্বে লক্ষ লক্ষ মুসলমান আদায় করেন- কোরআন মাজিদ মুখস্থ না থাকলে অবস্থা কেমন দাঁড়াবে, চিন্তা করেছেন? তাই বিবেকের দাবি হলো, ইসলামি সমাজে কিছু মানুষ এমন থাকা চাই যারা কোরআন মুখস্থ করে জাতির দ্বীনি কাজ-কর্মে সহায়ক ভূমিকা পালন করবেন এবং আল্লাহর কোরআনকে যাবতীয় বিকৃতি থেকে হেফাজত করবেন। এছাড়াও একজন কোরআনের হাফেজের মর্যাদা পরকালে অনেক বেশি হবে। হাদিস শরিফে এসেছ-‘কেয়ামতের দিন কোরআনের হাফেজকে বলা হবে, ‘কোরআন পড়তে থাকো এবং জান্নাতের মর্যাদার স্তর সমূহে উঠতে থাকো। তারতিলের সাথে পড়, যেভাবে দুনিয়ায় পড়তে। তোমার স্থান সেখানে হবে, যেখানে তোমার পঠিত শেষ আয়াত হবে।’ (তিরমিজি: ১৩১৭)

অন্য একটি হাদিসে এসেছে-‘যে ব্যক্তি কোরআন হিফজ করে, তাতে বর্ণিত হালাল কে হালাল এবং হারামকে হারাম জানে, আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং তার পরিবারের এমন দশজনের ব্যাপারে তার সুপারিশ কবুল করবেন, যাদের জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গেছে।’ (তিরমিজি:২৯০৫) আবু দাউদ শরিফের এক হাদিসে এসেছে-‘কোরআনের হাফেজদের মা-বাবাকে হাশরের মাঠে সূর্য অপেক্ষা উজ্জরতর নুরের টুপি পড়ানো হবে।’

ফজর নামাজের পর মসজিদে কিছুক্ষণ অবস্থান করা
ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করা একটি বিরাট সাওয়াবের কাজ। এ বিষয়ে আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজর জামাত আদায় করার পর সূর্য উদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করবে, অতঃপর দুই রাকাআত সালাত আদায় করবে, সে পরিপূর্ণ হজ ও ওমরা করার প্রতিদান পাবে। (তিরমিজি: ৫৮৬)

রমজানের শেষ দশকে ইবাদত বাড়িয়ে দেওয়া
আয়েশা (রা.) বলেন, যখন রমজানের শেষ দশক আসত, তখন রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁর লুঙ্গি কষে নিতেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত জেগে থাকতেন ও পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। (সহিহ বুখারি: ২০২৪)

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে উপরোক্ত আমলগুলো বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।