মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

রমজানে দান-সদকায় অফুরন্ত সওয়াব

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭ মার্চ ২০২২, ১০:২৯ এএম

শেয়ার করুন:

রমজানে দান-সদকায় অফুরন্ত সওয়াব

উদারতা ও মহত্ত্বের শিক্ষা দেয় পবিত্র মাহে রমজান। রমজানের রোজার কারণে ধনীরা অনুভব করতে পারেন ক্ষুধার্ত ও বঞ্চিত মানুষের কষ্ট। ফলে, ভোগ নয়, ত্যাগের আদর্শে উদ্দীপ্ত হন মুমিন মুসলমান। এ মাসকে দান-সদকার মাসও বলা হয়।

পবিত্র রমজানে দান-সদকার সওয়াব ও মর্যাদা অন্য মাসের তুলনায় অনেকগুণ বেশি। মানবতার আদর্শ হজরত মুহাম্মদ (স.) এর জীবনের মহিমান্বিত অভ্যাস ছিল উদারচিত্তে দান করা। ইতিহাসের সর্বসম্মত সাক্ষ্য এই যে, মহানবী (স.) সকলের চেয়ে অধিক দানশীল ছিলেন। তাঁর এ মনোমুগ্ধকর গুণের সর্বোচ্চ প্রকাশ দেখা যেত রমজান মৌসুমে।


বিজ্ঞাপন


হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) ছিলেন মানুষের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। রমজানে তার দানশীলতা (অন্য সময় থেকে) অধিকতর বৃদ্ধি পেত; যখন জিব্রাইল (আ.) তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। জিব্রাইল (আ.) রমজানের প্রতি রাতে আগমন করতেন এবং তারা পরস্পরকে কোরআন শোনাতেন। আল্লাহর রাসুল (স.) তখন কল্যাণবাহী বায়ুর চেয়ে অধিক দানশীল ছিলেন।’ (বুখারি: ০৬; মুসলিম: ২৩০৮; মুসনাদে আহমদ: ২৬১৬)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, আম্মাজান আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (স.)-এর দানের হাত এতটা প্রসারিত ছিল যে, সকাল বেলা যদি ওহুদ পরিমাণ সম্পদও রাসুল (স.)-এর কাছে রাখা হয়, আমার মনে হয়, মাগরিব আসার আগেই তিনি সব দান করে শেষ করে ফেলবেন। (বুখারি ও মুসলিম)

রমজানে প্রতিটি ভালো কাজের নেকি ৭০ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এ মাসে যত বেশি দান-সদকা করা যাবে, তা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁর প্রিয় উম্মতকে রমজান মাসে বেশি পরিমাণে দান করতে উৎসাহিত করতেন। 

অনেক গরিব-দুঃখী আছেন, যারা সেহরি ও ইফতারে সামান্য খাবারও জোগাড় করতে হিমশিম খান। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় রমজানে তাদের দুঃখটা খানিক বেড়ে যায়। এ ধরনের মানুষকে ইফতার ও সেহরি করানোর মাধ্যমে অজস্র সওয়াব লাভ করতে বলেছেন বিশ্বনবী (স.)।
জায়েদ ইবনে খালেদ আলজুহানি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন — 


বিজ্ঞাপন


‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে তার (রোজাদারের) অনুরূপ প্রতিদান লাভ করবে; তবে রোজাদারের প্রতিদান থেকে বিন্দুমাত্রও হ্রাস করা হবে না’ (সুনানে তিরমিজি: ৮০৭)। 

দানে সম্পদ বৃদ্ধি পায়
যারা আল্লাহর পথে স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে তাদের ফজিলত কোরআনে একটি উপমার মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘যারা স্বীয় ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের উপমা হলো যেমন একটি শস্য বীজ, তা হতে উৎপন্ন হলো সাতটি শীষ, প্রত্যেক শীষে (উৎপন্ন হলো) শত শস্য এবং আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছে করেন বর্ধিত করে দেন, বস্তুত আল্লাহ হচ্ছেন বিপুল দাতা, মহাজ্ঞানী।’ (সুরা বাকারা: ২৬১)

আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ করেন, ‘আত্মীয়-স্বজনকে তাদের প্রাপ্য দিন এবং মিসকিন ও মুসাফিরদেরও। এটা তাদের জন্য উত্তম, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে; তারাই সফলকাম। মানুষের ধন-সম্পদে তোমাদের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, এ আশায় তোমরা সুদে যা কিছু দাও, আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না। পক্ষান্তরে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পবিত্র অন্তরে যারা দিয়ে থাকে তারাই দ্বিগুণ লাভ করে।’ (সুরা রুম: ৩৮-৩৯)

এরকম শতাধিক আয়াত দান-খয়রাত সম্পর্কে অবতীর্ণ করেছেন মহান আল্লাহ। সুরা তাওবায় এসেছে—

‘হে নবী! তাদের ধন-সম্পদ থেকে সদকা নিয়ে তাদেরকে পাক পবিত্র করুন, (নেকির পথে) তাদের এগিয়ে দিন এবং তাদের জন্য রহমতের দোয়া করুন। (সুরা তাওবা: ১০৩)

রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, যারা গোপনে দান করবেন মহান আল্লাহ কঠিন কেয়ামতের দিন তাদের আরশের ছায়াতলে স্থান দেবেন। (বুখারি: ৬৬০)
তাছাড়া দান-সদকা রিজিকে বরকত এনে দেয়। মহান আল্লাহ বলেন—

‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ন করে, সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিজিক দিয়েছেন তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে, যা কখনো ধ্বংস হবে না। যাতে আল্লাহ তাদের কাজের প্রতিফল পরিপূর্ণ দেন এবং তিনি নিজ অনুগ্রহে তাদের আরো বেশি দেন। নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল, অসীম গুণগ্রাহী। ’ (সুরা ফাতির: ২৯-৩০)

কাজেই দান-খায়রাত ও অসহায়কে সহযোগিতা করার বিষয়টি সামর্থবান ও বিত্তশীলদের এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এতিম, মিসকিন, অভাবগ্রস্ত, ভিক্ষুক, মুসাফির ও অসহায়দের প্রতিও তাদের দায়িত্ব অপরিসীম। অন্তত পবিত্র মাস রমজানে তাদের খুঁজে খুঁজে বের করে তাদের বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করা ও তাদের প্রাপ্য আদায় করা জরুরি।  

রমজানের রোজা, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-দোয়া ইত্যাদি কল্যাণময় আমলের সঙ্গে সঙ্গে যাকাত, দান, সদকার আমলসমূহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে আল্লাহর হুকুম পালন করার এবং রমজানের বদৌলতে অধিক নেকি পাওয়ার সৌভাগ্য লাভ করা যায়।

তাছাড়া, রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি নফল কাজের সওয়াব ৭০ গুণ বাড়িয়ে দেন। সে হিসাবে রমজানে ১ টাকা দান করে ৭০ টাকা দানের সওয়াব লাভ করা সম্ভব। তাই আমাদের উচিত রমজানে দান-সদকার নেকিতে নিজের জীবনকে ভরপুর করতে নিজের সাধ্য অনুযায়ী অনাথ, অসহায় ও দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য দানের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। 

আল্লাহ তাআলা রোজাদার মুসলমানদেরকে বিপুল পরিমাণ দান-সদকা করার সামর্থ ও তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর