শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

তারাবির গুরুত্ব ও ফজিলত

মাওলানা মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন
প্রকাশিত: ১৩ এপ্রিল ২০২২, ০৮:২২ পিএম

শেয়ার করুন:

তারাবির গুরুত্ব ও ফজিলত

তারাবি হলো রমজানুল মোবারকের একটি কেন্দ্রিয় বিষয়। তারাবি মূলত রমজান মাসে কোরআন শুনবার, চর্চা করবার ও তেলাওয়াত করবার একটি মাধ্যম। মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বেশি মানুষ তারাবির মাধ্যমে পবিত্র রমজানে কোরআনুল কারিমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে থাকেন।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র রমজানকে অন্য ১১টি মাসের ওপর যে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন, তার প্রধান কারণ হলো কোরআনুল কারিম। এই মাসে আল্লাহ তাআলা কোরআন নাজিল করেছেন। এ বিষয়ে কোরআনে বলা হয়েছে, شَهۡرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡهِ الۡقُرۡاٰنُ ‘শাহরু রামাদানাল্লাজি উংঝিলা ফিহিল কোরআন’। যেহেতু কোরআনুল কারিমকে কেন্দ্র করেই রমজানের শ্রেষ্ঠত্ব, তাই পবিত্র রমজানে কোরআনকে যিনি যতবেশি তেলাওয়াত করবেন, চর্চা করবেন, সেই ব্যক্তি মূলত রমজানের শ্রেষ্ঠত্ব, গুরুত্ব, মর্যাদা এবং পুরস্কারলাভে ধন্য হবেন।


বিজ্ঞাপন


তারাবির গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণনায় হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) স্পষ্ট করে বলেছেন,

ان تبارك وتعالى فرض صيام رمضان عليكم وسنت لكم قيامه...الخ

অর্থাৎ ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর রোজা ফরজ করেছেন, আর আমি তোমাদের জন্য কিয়াম বা তারাবিকে সুন্নত করলাম। সুতরাং যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে প্রতিদান পাওয়ার প্রত্যাশায় রমজানের রোজা রাখবে এবং তারাবির নামাজ আদায় করবে, সে ব্যক্তি (দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনা এবং রমজানের তারাবি আদায় করার কারণে রমজানের শেষে এসে) এমন পবিত্রতা বা পরিশুদ্ধতা অর্জন করবে, যেন সে মায়ের গর্ভ থেকে (নিষ্পাপরূপে) পুনর্জীবন লাভ করলো।’ (নাসায়ি খণ্ড-১ পৃষ্ঠা-২৩৯ ও ৩০৮; ইবনে মাজাহ-পৃষ্ঠা ৯৪))। 

এটি অনেক বড় প্রাপ্তি। নবীজি (স.)-এর তারাবির আমল সম্পর্কে হজরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (স.) জামায়াত ছাড়া ঘরের মধ্যে নিয়মিত ২০ রাকাত তারাবি আদায় করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৭৭৭৪) অন্য হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে আল্লাহর কাছ থেকে প্রতিদান পাওয়ার আশায় তারাবি আদায় করবে, সে ব্যক্তির অতীতের সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (বুখারি: ৩৬, খণ্ড ১)

এজন্যই আমরা দেখি, রাসুল (স.)-এর জামানায় যেভাবে সাহাবিগণ তারাবির সন্ধান পেয়েছেন, ঝাঁকেঝাঁকে উপস্থিত হয়েছেন। যেমনটি আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) এবং আবু জার গিফারি রা. বর্ণিত হাদিস থেকে প্রমাণিত যে—


বিজ্ঞাপন


২৩, ২৫ এবং ২৭—এই তিন রাত রাসুলুল্লাহ (স.) মসজিদে জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ছিলেন, সংবাদ ছড়াচ্ছিলো আর ঝাঁকেঝাঁকে সাহাবায়ে (রা.) উপস্থিত হচ্ছিলেন। একটা সময় রাসুলুল্লাহ (স.) আশঙ্কা করলেন, এই যে তারাবি আদায়ের প্রতি তার সাহাবিগণের ভালোবাসা, একটি টান, স্রোত—এটা দেখে আল্লাহ আবার তারাবিকে ফরজ করে দেন কিনা—এই কারণে তিনি মসজিদে এসে তারাবি পড়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। (দেখুন সহিহ বুখারি: ৯২৪)

সায়্যিদুনা ওমর ফারুক (রা.) এসে দেখেছেন যে, এখন তো হজরত রাসুলুল্লাহ (স.) দুনিয়াতে নেই, সুতরাং এখন যদি আমরা নিয়মিত জামায়াতের সঙ্গে ২০ রাকাত তারাবি আদায় করি, তাহলে এটা আমাদের ওপর ওয়াজিব বা ফরজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই, তাই তিনি পূর্ণ জামাতের সঙ্গে একই জামাতে মসজিদে নববীতে ২০ রাকাত তারাবি আদায়ের ইন্তেজাম করেন। (দেখুন সহিহ বুখারি: ২০১০)

 সেকাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম যেখানেই মুসলমানের জনবসতি, সেখানেই মুসলমানগণ ২০ রাকাত করে তারাবি জামাতে আদায় করছেন। মক্কা মোকাররমা, মদিনা মুনাওয়ারা থেকে শুরু করে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীর মুসলিম সবকটি জনবসতিতে তারাবি ২০ রাকাত পড়ছেন মুসলমানরা।

এখানে মূল প্রেরণার বিষয়টি হলো—রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ফরজ রমজানের রোজা এবং রাসুলুল্লাহ (স.) কর্তৃক নির্ধারিত সুন্নত তারাবি নিয়মিত আদায় করবে, সে ব্যক্তি যেন একটা নিষ্পাপ জীবনলাভ করবে।

মূলত রাসুলুল্লাহ (স.)-এর এই বাণির আবেদনেই উম্মাহ তাদের প্রথমকাল থেকে আজ পর্যন্ত সিয়াম সাধনা তারাবি আদায়ে বরাবরই নিমগ্ন থেকেছেন, যত্নবান থেকেছেন, যেন তারা এই তারাবি এবং সিয়াম সাধনার ভেতর দিয়ে পরিপূর্ণ পাপমুক্ত, পবিত্র, সভ্য, পরিশুদ্ধ জীবন অর্জন করতে পারেন। আমাদের সবার প্রত্যাশা—আল্লাহ জাল্লা জালালুহু যেন আমাদেরকে সেই তাওফিক দান করেন। আমিন।

লেখক: মুহাদ্দিস ও খতিব

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর