যেসব আমলে হালাল রিজিকের দরজা খুলে যায়

সবাই চায় তার সম্পদ বৃদ্ধি পাক। কিন্তু মুমিনরা সম্পদ বাড়ায় হালাল পথে। এজন্য একজন মুমিনকে কৃষি, চাকরি, ব্যবসাসহ বিভিন্ন কাজে সততা ও দক্ষতা অর্জন করতে হয়। পাশাপাশি তাকে আরো কিছু আমল করতে উৎসাহিত করেছে ইসলাম। কোরআন-হাদিসের আলোকে সেসব আমল নিচে তুলে ধরা হলো—

১. যা আছে তাতেই আল্লাহর শুকরিয়া
আল্লাহ তাআলা যা দিয়েছেন তাতেই কৃতজ্ঞতা বা আল্লাহর শুকরিয়া করা সম্পদ বৃদ্ধির হাতিয়ার। আল্লাহর শুকরিয়া সম্পদ বৃদ্ধি করে—এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ এই কথাটি স্বয়ং আল্লাহ তাআলার। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘...তোমরা কৃতজ্ঞ হলে তোমাদের অবশ্যই বাড়িয়ে দেব, আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমার শাস্তি বড় কঠোর।’ (সুরা ইবরাহিম: ৭)

২. তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর ওপর ভরসা
আল্লাহর ওপর ভরসা সম্পদ বৃদ্ধির অন্যতম উপায়। ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তোমরা যদি আল্লাহর ওপর যথাযথ ভরসা বা তাওয়াক্কুল করো তাহলে তোমাদের জীবিকা দেওয়া হবে সেভাবে যেভাবে পাখি রিজিকপ্রাপ্ত হয়। পাখি সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় বের হয় এবং পেট পূরণ করে সন্ধ্যায় বাসায় ফেরে। (তিরমিজি: ২৩৪৪)

৩. ইস্তেগফার বা আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা
ইস্তেগফারের নানাবিধ কল্যাণ রয়েছে। এর একটি হলো হালাল উপার্জন বেড়ে যাওয়া। এ বিষয়ে নবী নুহ (আ.)-কে আল্লাহ তাআলা যা বলেছিলেন, তা পবিত্র কোরআনে তুলে ধরা হয়েছে এভাবে— ‘আমি বললাম, তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, তিনি তো ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, তিনি তোমাদের সমৃদ্ধ করবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন নদীনালা।’ (সুরা নুহ: ১০-১২)

আরও পড়ুন: ইস্তেগফার কীভাবে করতে হয়?

৪. তাকওয়া অবলম্বন 
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার পথ করে দেবেন। আর তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে রিজিক দান করবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর নির্ভর করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ তার ইচ্ছা পূরণ করবেনই। আল্লাহ সবকিছুর জন্য স্থির করেছেন নির্দিষ্ট মাত্রা।’ (সুরা তালাক: ২-৩)

৫. যথাযথভাবে আল্লাহর ইবাদত
ইবাদত রিজিকে বরকত আনে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যদি তারা তাওরাত ও ইঞ্জিলের এবং যে কিতাব (কোরআন) তাদের রবের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তার যথারীতি আমলকারী হতো, তাহলে তারা উপর (আকাশ) থেকে এবং পায়ের নিচ (জমিন) থেকে প্রাচুর্যের সঙ্গে ভক্ষণ করত। তাদের একদল তো সরল পথের পথিক; আর তাদের বেশির ভাগ এমন যে তাদের কার্যকলাপ অতি জঘন্য।’ (সুরা মায়েদা: ৬৬)

৬. তাওবা
তাওবার অর্থ হচ্ছে পাপকে ঘৃণিত কর্ম জ্ঞান করে বর্জন করা। নিজ ভুলের জন্য লজ্জিত হওয়া এবং ভবিষ্যতে তা না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। হুদ (আ.)-এর ভাষায় কোরআনে এসেছে, ‘হে আমার জাতি! তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, অতঃপর তাঁর দিকে নিবিষ্ট হও। তিনি তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের শক্তি বর্ধিত করে দেবেন। আর তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না।’ (সুরা হুদ: ৫২)

আরও পড়ুন: তাওবা কবুলের জন্য যে দোয়াগুলো পড়বেন

৭. কর্জে হাসানা 
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী এবং যারা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করে তাদের দেওয়া হবে বহুগুণ বেশি এবং তাদের জন্য আছে মহা পুরস্কার।’ (সুরা হাদিদ: ১৮)

৮. আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়
আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করলে আল্লাহ সম্পদ বাড়িয়ে দেন। এই মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বলে দাও, আমার রব তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তার রিজিক বাড়িয়ে দেন এবং যাকে ইচ্ছা সীমিত পরিমাণে দেন। তোমরা যা ব্যয় করবে তিনি তার প্রতিদান দেবেন। তিনি শ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা।’ (সুরা সাবা: ৩৯)

৯. বিয়ে করা
বিয়ে সম্পদ বৃদ্ধিতে সহায়ক। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা বিপত্নীক পুরুষ বা বিধবা স্ত্রী—তাদের বিবাহ সম্পাদন করো এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও। তারা অভাবগ্রস্ত হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দেবেন; আল্লাহ তো প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা নুর: ৩২)

আরও পড়ুন: ‘বিয়ে’ সত্যিই দ্বীনের অর্ধেক?

১০. সম্পদ বৃদ্ধির জন্য দোয়া
ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.) সম্পদ বৃদ্ধির জন্য এই মর্মে দোয়া করেন- رَبَّنَاۤ اَنۡزِلۡ عَلَیۡنَا مَآئِدَۃً مِّنَ السَّمَآءِ تَکُوۡنُ لَنَا عِیۡدًا لِّاَوَّلِنَا وَ اٰخِرِنَا وَ اٰیَۃً مِّنۡکَ ۚ وَ ارۡزُقۡنَا وَ اَنۡتَ خَیۡرُ الرّٰزِقِیۡنَ ‘হে আল্লাহ! হে আমাদের রব! আমাদের প্রতি আকাশ থেকে খাদ্য অবতীর্ণ করুন, যেন ওটা আমাদের জন্য অর্থাৎ আমাদের মধ্যে যারা প্রথমে এবং যারা পরে, সবার একটা আনন্দের বিষয় হয় এবং আপনার পক্ষ থেকে এক নিদর্শন হয়ে থাকে। আর আমাদের খাদ্য প্রদান করুন। আপনি তো সর্বোত্তম খাদ্য প্রদানকারী।’ (সুরা মায়েদা: ১১৪)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে রিজিকে প্রশস্ততা দান করুন। আমিন।