শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

তাকওয়া অর্জনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ নভেম্বর ২০২২, ০২:০১ পিএম

শেয়ার করুন:

তাকওয়া অর্জনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

তাকওয়া মানে সতর্ক ও সচেতন থাকা। বান্দা সতর্ক থাকবে কিছুতেই যেন গুনাহের কাজ সংঘটিত না হয়; আর নেক আমল কিছুতেই যেন না ছোটে। হজরত ওমর (রা.) উবাই ইবনে কাব (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, তাকওয়া কী? উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, আপনি কি কখনও কাঁটা বিছানো পথে হেঁটেছেন? ওমর (রা.) বললেন, হ্যাঁ। উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, কাঁটা বিছানো পথে আপনি কীভাবে হেঁটেছেন? ওমর (রা.) বলেন, সতর্ক-সচেতনতার সঙ্গে যাতে আমার শরীরে কাঁটা না বিঁধে। উবাই ইবনে কাব (রা.) বললেন, এটাই হচ্ছে তাকওয়া। 

কাঁটাযুক্ত পথে কাঁটা থেকে বাঁচার জন্য মানুষ যেভাবে সতর্ক হয়ে চলে, ঠিক সেভাবে আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর নিষিদ্ধ বিধানগুলো থেকে বেঁচে থাকা এবং আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার পাওয়ার আশায় নেক আমল করার নামই হলো তাকওয়া। অর্থাৎ রবের ভয়ে পাপ থেকে বিরত থাকা, রবের রহমতের আশায় সওয়াবের কাজ না ছাড়া। (তাফসিরে ইবনে কাসির: ১/৪০)


বিজ্ঞাপন


তাকওয়া অর্জন ফরজ
তাকওয়া অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর ওপর ফরজ। আল্লাহ তাআলার নির্দেশ, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যেভাবে তাকে ভয় করা উচিত।’ (সুরা আলে ইমরান: ১২০)। তিনি আরো বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো। (সুরা তাওবা: ১১৯)। আরো ইরশাদ হয়েছে, হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক ও সত্য কথা বলো। (সুরা আহজাব: ৭০)। আর আল্লাহ তাআলার নির্দেশ পালন করা প্রত্যেকের জন্য আবশ্যক।

আরও পড়ুন: সত্য বলার পুরস্কার

মুত্তাকিরা আল্লাহর পছন্দের বান্দা
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পছন্দের বান্দা হতে চাইলে তাকওয়া-পরহেজগারির বিকল্প নেই। এ কারণেই তিনি পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে তাকওয়া অবলম্বনের আদেশ করেছেন এবং তাকওয়া অবলম্বনকারীদের ভালোবাসেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে মুত্তাকি বান্দারা আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় এবং ভালোবাসার পাত্র।’ (সুরা হুজরাত: ১৩)

আল্লাহর কাছে মর্যাদার মাপকাঠি
তাকওয়া এমন গুণ যার মাধ্যমে একজন বান্দা আল্লাহর নিকট বিশেষ মর্যাদার অধিকারী হন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সেই সবচেয়ে সম্মানী যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মুত্তাকি।’ (সুরা হুজরাত: ১৩)


বিজ্ঞাপন


মানব চরিত্রের অন্যতম সম্পদ
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘দুনিয়ার মানুষের কাছে ইজ্জত হচ্ছে ধন সম্পদের নাম, আর আল্লাহর কাছে ইজ্জত হচ্ছে তাকওয়া-পরহেজগারির নাম। হজরত বেলাল (রা.) একজন কৃষ্ণবর্ণ কৃতদাস হওয়া সত্ত্বেও মক্কা বিজয়ের দিন বায়তুল্লাহর ছাদে উঠে আজান দেওয়ার মর্যাদা লাভ করেছেন তাকওয়ার কারণে। শুধু এতটুকু নয় বরং মেরাজের রাতে জান্নাতে তাঁর পদচারণের শব্দ শুনেছেন নবী কারিম (স.)। যার আজান না শুনলে আরশ আজিমের ফেরেশতাদের সকাল হতো না। আর আল্লাহর নিকট যে মর্যাদাবান হয়ে যায়, সমগ্র সৃষ্টির কাছেও সে মর্যাদাবান হয়ে যায়। নবীজি (স.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মানুষের নিকট অধিক সম্মানিত হতে চায়, সে যেন আল্লাহকে ভয় করে অর্থাৎ তাকওয়া অর্জন করে। (আল-কামেলু ফিদ দুয়াফায়ি: ৮/৪০৫)

আরও পড়ুন: যে আমলে সম্মান বাড়ে

তাকওয়া সাফল্যের চাবিকাঠি
তাকওয়া দুনিয়া-আখেরাতে সাফল্যের চাবিকাঠি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, হে বুদ্ধিমানগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফল হও। (সূরা মায়েদা: ১০০)। যারা তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে সংশোধন হয়েছেন, তাদের কোনো ভয় নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো আর জেনে রেখো আল্লাহ মুত্তাকিদের সঙ্গে আছেন। (সুরা বাকারা: ১৯৫)। পবিত্র কোরআনে আরো বলা হয়েছে, যে আল্লাহকে ভয় করবে আল্লাহ তাকে বিপদাপদ থেকে নিষ্কৃতি দেবেন এবং তাকে ধারণাতীত রিজিক দান করবেন। (সুরা তালাক: ২-৩)। 

তাকওয়া জান্নাত লাভের মাধ্যম
তাকওয়া এমন একটি গুণ যা অর্জন করলে জান্নাতের নিশ্চয়তা রয়েছে। অর্থাৎ তাদের জন্য জান্নাত বরাদ্দ করে রাখা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয় মুত্তাকিরা থাকবে জান্নাতে ও নেয়ামতে, তারা উপভোগ করবে, যা তাদের পালনকর্তা দেবেন এবং তিনি জাহান্নামের আজাব থেকে তাদেরকে রক্ষা করবেন। (সুরা তুর: ১৭-১৮)

উল্লেখিত আয়াতসমূহের মাধ্যমে একথা সুস্পষ্ট যে, দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতার জন্য তাকওয়া অর্জন করার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

আরও পড়ুন: দুনিয়ার মোহ যেভাবে সফলতার পথে বাধা

তাকওয়া অর্জনের উপায়
১) কোরআন শিক্ষা করা। (সুরা জুমার: ২৭-২৮)

২) আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করা। (সুরা ইউনুস: ৬)

৩) ইখলাসের সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত করা।  (সুরা বাকারা: ২১)

৪) রোজা তাকওয়া সৃষ্টি করে। (সুরা বাকারা: ১৮৩)

৫) পরকালের ভয়াবহতা বিষয়ে আয়াত ও হাদিস পাঠ করা। (সুরা জুমার: ১৬)

৬) সুবিচার বা ইনসাফ। (সুরা মায়েদা: ৮)

৭) নবীপ্রেম। (সুরা হুজরাত: ৩)

‘যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অর্জন করেছে তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ দুনিয়া এবং আখেরাতে’ (সুরা ইউনুস: ৬৩-৬৪)। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাকওয়া অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর